বিদায়ী কোচের সঙ্গে অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী।
বব হাউটনের জায়গায় যখন উইম কোভারম্যান্সকে আনা হয়েছিল তখন অবাক-ই হয়েছিলাম। শুধু প্রোফাইলেই নয়, এশীয় ফুটবল সম্পর্কে ববের অভিজ্ঞতার ধারেকাছে ছিল না উইমের পারফরম্যান্স।
ববের সঙ্গে প্রায় ছ’বছর কাজ করেছি ভারতীয় দলের ম্যানেজার হিসাবে। খুব কাছ থেকে দেখেছি। সে সময় দু’বার নেহরু কাপ জিতেছে ভারত। এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতামান পেরিয়েছে ভাইচুংরা। সবাইকে চমকে দিয়ে। সিরিয়া, তাজাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উত্তর কোরিয়ার টিমকে বলে বলে হারিয়েছি। ববের সময় আমার যতদূর মনে পড়ছে, আমাদের দেশের ফিফা র্যাঙ্কিং উঠেছিল ১২৪। আর কোভারম্যান্স যখন সুনীল-মেহতাবদের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাচ্ছেন তখন ভারতের র্যাঙ্কিং ১৫৮। এশিয়াডে বিশ্রী ভাবে হেরেছি, প্যালেস্তাইনের কাছেও হারলাম। আইএসএলের জৌলুসে যখন চারিদিক আলোকিত, তখন আমাদের দেশের ফুটবল অন্ধকারের দিকেই এগোচ্ছে দেখে খারাপ লাগছে।
কোভারম্যান্স কেন পারলেন না তা নিয়ে অনেকেই আমার কাছে জানতে চাইছেন। ববের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাঁদের অনেকেই এখনও আছেন জাতীয় দলের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে যা জানতে পেরেছি তা হল, দু’বছরে ফুটবলারদের সে ভাবে চিনেই উঠতে পারেননি ডাচ কোচ। তা ছাড়া কোভারম্যান্সের অনুশীলনেও অনেক খামতি ছিল। সারা বিশ্বেই এখন সেট পিসে প্রচুর গোল হচ্ছে। সেখানে উনি নাকি সেট পিস সে ভাবে অনুশীলনই করাতেন না। আরও শুনছি, রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর রাত ন’টায় আগের দিনের ম্যাচের পোস্টমর্টেম করতে বসতেন কোভারম্যান্স। যখন সারা দিনের পরিশ্রমের পর সবাই ক্লান্ত, তখন দু’ঘণ্টা ধরে ক্লাস! কখনও শুনিনি। বব কখনও এ সব করতেন না। আমি যেটা বলতে চাইছি, তা হল সঠিক ম্যান ম্যানেজমেন্ট এবং ফুটবলারদের বোঝার ক্ষমতা। শিবিরটা কনসেনট্রেশন ক্যাম্প নয়। পরিবার পরিজন ছেড়ে ফুটবলাররা আসে, তাদের মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার সুযোগ দেওয়া উচিত। বারবার এ কথাটাই আমাকে বলতেন বব। এর সুফল তিনি পেয়েছিলেন। সব ফুটবলারকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে দিতেন। নিজেও প্রচুর কথা বলতেন। কিন্তু ওঁর চাহিদা বেশি ছিল। সে জন্যই বার্সেলোনা, পতুর্গাল, দুবাইতে গিয়ে অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছে ভারত। সাফল্যও পেয়েছে। কোভারম্যান্সের কোচিং প্রোফাইল তেমন কিছু নয়। তবে মাথার উপর রব বানের মতো সফল এবং অভিজ্ঞ মানুষ আছেন বলেই আশায় ছিলাম। হয়তো ভাল কিছু হবে। কিন্তু কোটি কোটি টাকা খরচ করার পরও কিছুই তো হল না। র্যাঙ্কিং-এ ভারত আরও নামল। একটা নেহরু কাপ ছাড়া কোভারম্যান্সের জমানায় বড় কোনও সাফল্যও নেই ভারতের।
রুস্তম আক্রমভকে মাথায় রেখেও বলছি, ভারতের যত বিদেশি কোচ এসেছেন তাঁদের মধ্যে চিরিচ মিলোভান এবং বব হাউটন-ই সেরা। আমি জানি না, কোভারম্যান্সের জায়গায় কাকে আনা হবে। তবে যাঁকেই আনা হোক তিনি যেন অবশ্যই মিলোভান বা ববের মানের হন। যাঁদের পারফরম্যান্স এবং অভিজ্ঞতা আছে। এশিয়ার ফুটবল সম্পর্কে স্বচ্ছ্ব ধারণা থাকাও দরকার। যেমন জিকো। জাপানের ফুটবলটা ওর নখদর্পনে। জে লিগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গোয়ার আইএসএল টিমের হয়ে কোচিং করার পর ওঁকে যদি কোচ করা হয় তা হলে খারাপ হবে না। সামনে অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ। সে জন্য তৃণমূল স্তরে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এ রকম একজন নামী কোচ দরকার। সিনিয়র টিমের দায়িত্বে উনিই থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন ভারতীয় কোচেরা। তবে চিফ কোচের দায়িত্ব নেওয়ার মতো কোনও ভারতীয় কোচ এই মূহূর্তে আছে বলে মনে করি না। কারণ এখন যাঁরা এ লাইসেন্স নিয়ে বা প্রো লাইসেন্স নিয়ে ক্লাব কোচিং করাচ্ছেন, তাঁদের তেমন সাফল্য কোথায়? তা ছাড়া বিদেশি কোচেদের মতো বিপক্ষ সম্পর্কে বা বিশ্ব ফুটবল সম্পর্কেও ধারণা কম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy