Advertisement
E-Paper

কোহলির মনোভাব তৈরি করেছে আইপিএল

বক্তার বাড়ি গাব্বা মাঠ থেকে খুব দূরে নয়...কোচিংয়ের জন্য জিপসির মতো এ দিক ও দিক ঘুরে না বেড়ালে তিনি ব্রিসবেনেই থাকেন। কিন্তু শহরের বাইরে কাজ আছে বলে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দু’-তিন দিন থাকতে পারছেন না...ব্রিসবেন ছাড়ার আগে এবিপিকে সাক্ষাত্‌কার দিয়ে গেলেন অস্ট্রেলিয়া এবং কেকেআরের প্রাক্তন কোচ মহা-বিতর্কিত জন বুকানন।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০২

বক্তার বাড়ি গাব্বা মাঠ থেকে খুব দূরে নয়...কোচিংয়ের জন্য জিপসির মতো এ দিক ও দিক ঘুরে না বেড়ালে তিনি ব্রিসবেনেই থাকেন। কিন্তু শহরের বাইরে কাজ আছে বলে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দু’-তিন দিন থাকতে পারছেন না...ব্রিসবেন ছাড়ার আগে এবিপিকে সাক্ষাত্‌কার দিয়ে গেলেন অস্ট্রেলিয়া এবং কেকেআরের প্রাক্তন কোচ মহা-বিতর্কিত জন বুকানন।

প্রশ্ন: গাব্বায় কী হবে মনে হয়?
বুকানন: মাইকেল ক্লার্ক না থাকাটা ব্যাটিংয়ে একটা বড় ফুটো হয়ে যাওয়া। কিন্তু সেটা ধরেও অস্ট্রেলিয়া অবিসংবাদী ফেভারিট। এখানে মিচেল জনসনকে অন্য গ্রহের বোলার মনে হবে। মিচেল স্টার্ক যদি খেলে, ওকেও সামলানো সহজ হবে না।

প্র: অ্যাডিলেডে ভারতীয় পেসারদের রাউন্ড দ্য উইকেট বল করার স্ট্র্যাটেজি খুব সমালোচিত হয়েছে। আপনি কি এই স্ট্র্যাটেজির কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা খুঁজে পেয়েছেন?
বুকানন: আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড ওরা কোন মানসিকতা থেকে ছকটা করেছে। ওটা খুব পরিকল্পনা করে তৈরি একটা ডিজাইন ছিল। আসলে এখনকার ক্রিকেটে এত বেশি ভিডিও চর্চা হয়, এত একের খেলা অন্যের নখদর্পণে যে চমক তৈরি করাটা সমস্যা। কিন্তু বিপক্ষের জন্য ওটা আবার না রাখলেই নয়। আমার টিভি দেখে মনে হয়েছে, ইন্ডিয়ান টিম চেয়েছিল শুরুতেই একটা চমক দেবে। ওয়ার্নারকে প্রথম বল থেকে স্বাভাবিক ছন্দে আসতে দেবে না। ও যে লাইনে বলটা এক্সপেক্ট করবে সেটা বাড়তি ঘোরাবে, অ্যাঙ্গেল বদলাবে...তাই রাউন্ড দ্য উইকেট। কিন্তু ভারত যেটা ভুল করেছে, তা হল অন্ধ ভাবে ওই প্ল্যানে ঢুকে লক করে দেওয়া। ওদের একটা প্ল্যান ‘বি’ রাখা উচিত ছিল। হয়তো ছিল। আমরা বুঝিনি।

প্র: আপনি এই মুহূর্তে কোথায় কোচিং করছেন?
বুকানন: একটা পোর্টাল আছে আমার বুকানন সাকসেস কোচিং। সেটা নিয়েই প্রচুর সময় যায়। অনেক জায়গায় হাই পারফরম্যান্স ট্রেনিং করাই। রাগবি টিমের সঙ্গে কাজ করি। কর্পোরেটে ইদানীং প্রচুর কাজ করছি। একটা টিম কী ভাবে পারফরম্যান্স বাড়াবে এবং প্রচণ্ড চাপের মধ্যে সেটা ধরে রাখবে, এ নিয়ে বেশ কিছু প্রেজেন্টেশন বানানো আছে আমার। ক’দিন আগে মেলবোর্নে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির জন্য সেই প্রেজেন্টেশনটা করে এলাম।

প্র: সিডনির মার্টিন প্লেসের ঘটনায় অস্ট্রেলীয় জনগণের মন রাতারাতি ক্রিকেট থেকে অন্য দিকে ঘুরে গিয়েছে?
বুকানন: হ্যাঁ মর্মান্তিক। খুব উদ্বেগজনকও।

প্র: বলছিলাম যে তার আগের ৪৮ ঘণ্টা অস্ট্রেলিয়া আলোড়িত ছিল বিরাট কোহলিকে নিয়ে।
বুকানন: হ্যাঁ, কোহলি দারুণ অ্যাটিটিউড দেখিয়েছে। এটাই ঠিক অ্যাটিটিউড যে নিজেই শুধু পজিটিভ খেলল না, সহ-খেলোয়াড়দেরও সাহস দিল। এসো চালাও। অনবদ্য লেগেছে আমার টিভিতে দেখে... ভারতীয় সমর্থকেরা নিশ্চয়ই হতাশ হবেন। ওরা অ্যাডিলেড থেকে একটা জয় বা নিদেনপক্ষে ড্র নিয়ে এখানে আসতে চাইছিল। সেটা হয়নি। কিন্তু বিনোদনে কোহলির ভারত দর্শকদের ভরিয়ে দিয়েছে।

প্র: দাঁড়ান, দাঁড়ান। ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর বিনোদন দেওয়ার কথা আপনি বলছেন? আপনি না স্টিভ ওয়দের টিমকে বারবার চাগাতেন আর ড্রেসিংরুমে পোস্টার মেরে রাখতেন, তোমরা রুপো জিততে পারো না। সোনাটাই শুধু হারাতে পারো। যেটা পরে কেকেআর ড্রেসিংরুমেও উঠে আসে...।
বুকানন: অসুবিধার কিছু নেই তো! আমি মনে করি টিম যে অবস্থাতেই থাক, প্রথমে জেতার কথা ভাবতে হবে। কোহলি তো তাই করেছে। ইন্ডিয়া যে একটা সময় ড্রয়ের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল তার কারণ কিন্তু ড্র করতে চাওয়া নয়। তার কারণ ওরা জিততে গিয়েছিল। এই মনোভাবটাই আমার দারুণ লেগেছে।

প্র: আপনি কোচ থাকলে অ্যাডিলেডে ওই রকম বিশ্রী হারার পর ড্রেসিংরুমে কী বলতেন?
বুকানন: আমি পুরো সাপোর্ট করতাম আমার জায়গা থেকে। সিলেক্টরদের বোঝাতাম যে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে যা কখনও কেউ করেনি তাই করতে যাচ্ছে এই ছেলেটা। আমাদের সময়ে আমরা পারিনি এ বার এই ছেলেটার পাশে কী করে দাঁড়াব, চলো সেটা ঠিক করি। এতই ব্যতিক্রমী রাস্তা নিয়েছে কোহলি যে কোচের পূর্ণ সাহায্য ওর লাগতই। সেটা প্রকাশ্যে দিয়ে বলতাম এই ছেলেটা নিজের ওপর অসমসাহসী বাজি ধরেছে। বিদেশে ভারতের খেলার ধরনের খোলনলচে এ-ই বদলাতে এসেছে। এ এক গেমচেঞ্জার। এর পাশে ক্রিকেট সমর্থকদের অবশ্যই থাকা দরকার।

(এ বার বুকানন থামিয়ে দেন আলোচনা। আচ্ছা আমার একটা প্রশ্ন আছে। ধোনি কি খেলবে? বললাম অবশ্যই, এই তো সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। বুকানন একটু গম্ভীর, একটাই ভয় কোহলি তো অস্থায়ী ক্যাপ্টেন ছিল। নতুন ক্যাপ্টেন এসে সব বদলে না দেয়)।

প্র: টিমে আর কেউ রান তাড়ার কথা স্বপ্নেও ভাবেনি। মিডিয়া কল্পনাও করেনি। ভাষ্যকারদেরও ভাবনায় ছিল না। তবু কোহলির এই অসমসাহসী ৩৬৪ তাড়া করাটা কী ব্যাখ্যা করবেন?
বুকানন: আমার মনে হয় এর উত্তর লুকিয়ে আছে আইপিএলে।

প্র: মানে?
বুকানন: মানে আইপিএল হল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মহাসমাহার। ভারতীয়রা এখানে নামী বিদেশি ক্রিকেটার, ডক্টর, বিদেশি কোচ সবার সংস্পর্শে আসে। অন্তত দু’মাস এক সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করে। পাশাপাশি বসে আড্ডা মারে। আমার মনে হয় ওই সময় কোহলির ওপর বিদেশিদের পজিটিভ অ্যাটিটিউডের ছাপটা পড়েছে। ও দেখেছে এরা কত অন্য রকম ভাবে অনেকেই ভাবে। বা কেমন লক্ষ্য তাড়া করে। আমার বিশ্বাস কোহলির মানসিকতা অন্য রকম কারণ তার মধ্যে একটা মিশেল লুকিয়ে আছে। কোহলির মধ্যে তাই পরিবর্তনটা পাওয়া যাচ্ছে। আমি শুধু চাইব ভবিষ্যতে ভারতীয় নির্বাচকেরা যেন ওর সঙ্গে থাকেন। কারণ এ জাতীয় বিপ্লব একটা সময়ের পর আর একা করা যায় না।

anandabazar exclusive gautam bhattacharya brisbane bukanan interview
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy