Advertisement
E-Paper

কমলা বিপ্লবের পিছনে ‘পাগল বিজ্ঞানী’র মস্তিষ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৪ ০৪:১৪
স্পেন-বধের উচ্ছ্বাস। ম্যাচের পরে ফান পার্সির সঙ্গে নেদারল্যান্ডস কোচ ফান গল।

স্পেন-বধের উচ্ছ্বাস। ম্যাচের পরে ফান পার্সির সঙ্গে নেদারল্যান্ডস কোচ ফান গল।

ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ-এ তিকিতাকার দর্প চূর্ণ করে ডাচদের ফুটবল গরিমা সাফল্যের সপ্তম স্বর্গে পৌঁছে দেওয়ার কারিগর কে?

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলে উঠে রবেন থেকে ফান পার্সি সকলেই বলছেন, “লুই ফান গল ছাড়া আবার কে?” পাঁচ ব্যাকের ট্যাকটিক্স থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল। কিংবা স্পেনের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগে অনুশীলন না করিয়ে বউ বা বান্ধবীদের সঙ্গে ফুটবলারদের ছেড়ে দেওয়ার মাস্টার স্ট্রোক বা ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে টানেলে বিপক্ষের পিকে, জাভি, র্যামোসদের গাল টিপে আদর সবেতেই শাণিত মস্তিষ্ক ষাটোর্ধ্ব এই ডাচ কোচের। নিজের আক্রমণাত্মক ফুটবল দর্শনের মতোই যিনি বলতে পারেন, “বার্সেলোনায় রিভাল্ডোকেই মাথায় তুলিনি। তো অন্যরা...! যে যত বড় তারকাই হোক না কেন, দল বা নিয়মের ঊর্ধ্বে তো নয়।”

নেদারল্যান্ডস, স্পেন, জার্মানিএই তিন দেশের ফুটবলকে গুলে খেয়েছেন। এই তিন দেশের সাতটা লিগ খেতাব তাঁর পকেটে। রয়েচে চ্যাম্পিয়ন্স লিগও। সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে, তুখোড় ম্যান ম্যানেজমেন্ট। তবে সেই কাজ করতে গিয়ে কখনও কখনও আবেগের বসে পাগলামিও করে বসেন। শোনা যায়, বায়ার্নে কোচ থাকাকালীন ইতালিয়ান স্ট্রাইকার লুকা টনির সামনে দলে কেউ অপরিহার্য নয় বোঝাতে গিয়ে নিজের প্যান্ট খুলে ফেলেছিলেন। যা ভাল চোখে দেখেননি বায়ার্ন কর্তা রুমেনিগে। ফুটবল মহলে তাই ফান গলকে তাঁর সমালোচকরা বলে থাকেন ‘পাগল বিজ্ঞানী’। এমনিতেই ডাচদের ফুটবলে অন্যতম বড় সমস্যা বর্ণবিদ্বেষ। চুরানব্বইয়ের বিশ্বকাপের সময় যে কারণে শিবির ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড। এ বারও বিশ্বকাপ শুরুর আগে আগেই রবেনের সঙ্গে ঝামেলা শুরু হয়ে গিয়েছিল ব্রুনো ইন্ডির। কিন্তু ফান গল নিজের ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগিয়েই এই সব সমস্যাাা শিবিরের বাইরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। ফলে ব্রাজিলে প্রথম থেকেই ঝকঝকে কমলা ব্রিগেড। ডাচ কিংবদন্তি জোহান ক্রুয়েফ চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বিশ্বকাপ ফাইনালে ঠিক এই ম্যাচটার পরেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, “তিকিতাকা সামলাতে এত রক্ষণাত্মক ডাচ ফুটবল?” সেই ক্রুয়েফও শুক্রবারের ম্যাচের পর ফান গালের রণকৌশলে গদগদ হয়ে বলেছেন, “এটাই আসল নেদারল্যান্ডস যারা এ রকম ডাইরেক্ট ফুটবলটাই খেলতে ভালবাসে।”

বার্সেলোনায় যখন ছিলেন তখন ফান গলের হাতেই আজকের জাভি-ইনিয়েস্তারা তৈরি হয়েছেন। তাই দেল বস্কির সৈনিকদের কারিকুরি ভাল মতোই জানা ডাচ কোচের। তাই চার বছর আগের রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি ছেড়ে চেনা ডাইরেক্ট এবং প্রেসিং ফুটবলটাই ফিরিয়ে এনেছেন নেদারল্যান্ডস কোচ।

তবে এ বারের বিশ্বকাপে ফান গলের অন্যতম অস্ত্র তাঁর পাঁচ ব্যাকের স্ট্র্যাটেজি। ৪-৩-৩ থেকে সরে এসে সেই ৫-২-১-২ ছক যে কোনও প্রতিপক্ষের কাছেই বেশ কড়া প্রশ্ন। শুরুতে ডাচ মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করলেও শুক্রবার থেকে সবাই নিজেদের করা সমালোচনাই গিলতে বাধ্য হয়েছেন। স্পেনের বিরুদ্ধেই যা দেখা গেল পুরোদমে। ফর্মেশন দেখলে রক্ষণাত্মক মনে হলেও যার নেপথ্যে রয়েছে চড়া গতিতে কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল। যা স্পেনের পাসিং ফুটবলের রাস্তাটা খুঁড়ে দিয়ে গিয়েছিল প্রথম থেকেই। তাই ইনিয়েস্তা এবং দাভিদ সিলভা শুক্রবার রাতে শুরু থেকেই নিজের ছন্দ খুঁজে পাননি ফান গলের এই কৌশলী ছকের সামনে পড়ে। ওঁদের ঘেঁটে দেওয়ার জন্য রাখা হয়েছিল ব্লিন্ড এবং ইয়ানমটকে। স্পেনের দুই সাইড ব্যাকও ওভারল্যাপে আসতে দোনোমোনো করেছে এই দু’জনের জন্যই। জাভি আর জাবি আলোন্সোর পায়ে বল গেলেই তাড়া করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল দে গুজমান এবং দে জংকে।

আর নিজের পাঁচ ব্যাকের মধ্যে দুই সাইড ব্যাক মাঝে মাঝে কয়েকটা স্পেলে ওভারল্যাপে গেলে বিপক্ষ রক্ষণে সব সময় থাকছে ছয় জন ডাচ ফুটবলার। আক্রমণ এবং রক্ষণের মিশেলে এই ছকে প্রাক্-বিশ্বকাপের বেশ কিছু ম্যাচে সাফল্য পেয়েছে নেদারল্যান্ডস। বিশ্বকাপেও সেই অঙ্ক নিয়েই এগোচ্ছে তারা। ফান গল নিজেও বলছেন, “বিশ্বকাপে আক্রমণটাই অস্ত্র ডাচদের। তাই সেন্টার ফরোয়ার্ডদের পরিস্থিতি বুঝে বিশেষ ভাবে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।”

দু’বছর আগে ইউরো কাপে ফান মারউই-এর বিদায়ের পর দলকে নতুন ছকে রপ্ত করিয়েছেন ফান গল। গত বিশ্বকাপ টিমের চার জন রবেন, স্নেইডার, দে জং, ফান পার্সির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন তরুণ প্রতিভা। আর তাতেই ছন্দে কমলা ব্রিগেড। যার কারণ হিসেবে ডাচদের ‘সুপারম্যান’ ফান পার্সি বলছেন, “গাদাগুচ্ছের পাস না করে ডাইরেক্ট ফুটবল খেলেও বলের দখল নিজেদের পায়ে রাখা যায়। ফান গল সেটাই আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন।”

চুয়াত্তর, আটাত্তরে রিনাস মিশেলস-এর সাফল্যের নৌকো তীরে গিয়েও ডুবেছিল। এ বার ফান গল কি সেই নৌকোয় ডাচদের প্রথম বিশ্বকাপ নিয়ে আমস্টারডামে ফিরতে পারেন কি না সেটাই দেখার।

ছবি: এএফপি

fifaworldcup fifa world cup 2014 mad scientist behind orange revolution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy