আইপিএল সেভেন ফাইনালে তা হলে প্রীতি জিন্টা বনাম শাহরুখ খান! কেকেআর ভক্তরা নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন, চেন্নাই সুপার কিংসের বদলে ফাইনালে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে পেয়ে নাইটদের সুবিধে হল কি না? সে কথায় একটু পরে আসছি। তার আগে শুক্রবারের প্লে-অফ ম্যাচটা নিয়ে একটু বলে নিই।
ওফ! কী ম্যাচটাই না দেখলাম! স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে একটা টিম ছয় ওভারে ১০০। নিজের চোখে দেখছি, অথচ বিশ্বাস করতে পারছি না। প্রথম ইনিংসে কিংস ব্যাটিং যদি অবিশ্বাস্য হয়, তা হলে সুরেশ রায়নার ২৫ বলে ৮৭ রানটাকে কোন বিশেষণ দিয়ে বোঝাব? রায়না এ দিন ওয়াংখেড়েতে যে ইনিংসটা খেলল, এক কথায় ব্রিলিয়ান্ট। জর্জ বেইলি ওকে দুর্দান্ত ভাবে রান আউটটা না করলে কিন্তু রবিবার চিন্নাস্বামীতে দু’বছর আগের আইপিএল ফাইনালের অ্যাকশন রিপ্লে হত। ম্যাচের পরে তো বীরেন্দ্র সহবাগও বলে গেল, রায়না যে ভাবে ব্যাট করছিল, তাতে ও নিজে থেকে কোনও ভুল না করলে পঞ্জাব আজ জিততে পারত না।
সেঞ্চুরির পর। ছবি: পিটিআই।
অবশ্য তার আগে সহবাগ যে ব্যাটিংটা করেছে, সেটাও ভোলার নয়। এ বছর আইপিএলের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে কী রকম নির্বিকার ভাবে বীরু বলছিল, ওর খারাপ ফর্মের জন্য নাকি ওর ছেলেকে নিয়ে স্কুলের বন্ধুরা মজা করত। এ দিন ৫৮ বলে সহবাগের ১২২-এর পর নিশ্চয়ই জুনিয়র সহবাগ ঠাট্টা-ইয়ার্কি থেকে মুক্তি পাবে! আটটা ছয়, বারোটা চার, স্ট্রাইক রেট দুশোরও উপর! একেই বলে ক্লিক করা! তা-ও আবার যে সে ম্যাচে নয়। আইপিএল প্লে-অফের মতো মঞ্চে। সহবাগের এই ইনিংসটার একটাই বিশেষণ হয়—এটা একেবারে সহবাগোচিত!
প্রথম কয়েকটা ম্যাচে যে ব্যাটিংয়ের ট্রেলার দেখিয়েছিল সহবাগ, তার পূর্ণাঙ্গ ফিল্মটা আজ দেখে ফেলল চেন্নাই। বীরু নিজেই বলছিল, প্রথম দিককার ম্যাচে ও নিজের পার্টনারদের পরামর্শ দিতে গিয়ে নিজের ব্যাটিংয়ের উপর ফোকাস করতে পারছিল না। আজ তাই প্রতিজ্ঞা করেই নেমেছিল যে, বাকিরা যা করে করুক। আমি শুধু নিজের ব্যাটিং নিয়ে ভাবব। এ বার অন্তত টিমকে একটা ম্যাচ জেতাবই জেতাব।
সহবাগ আর পরে রায়নার ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে, আইপিএলে বোধহয় কোনও স্কোরই আর নিরাপদ নয়। ১৪ ওভারে একটা টিম ১৯০ তুলে দিচ্ছে। আজ তো মনে হচ্ছিল চেন্নাই সেই রেকর্ডটাও ভেঙে দেবে। ওই অবস্থা থেকে যে চেন্নাই ব্যাটিং এ ভাবে ভেঙে পড়বে, সেটা অপ্রত্যাশিত বললেও কম বলা হয়। ধোনি যে ম্যাচ শেষে ও রকম একটা বিস্ফোরণ করে গেল, সেটা আমার কাছে অন্তত বেশ ন্যায্য মনে হচ্ছে।
যা-ই হোক, এ বার ফাইনালের কথায় আসি। পঞ্জাবকে এর আগে দু’বার হারিয়েছে কেকেআর, তাই নাইট ভক্তরা হয়তো ফাইনালে প্রীতির টিমকে পেয়ে খুশিই হয়েছেন। তবে কয়েকটা কথা মনে করিয়ে দিই। গত বুধবার ইডেনে যে পঞ্জাবকে দেখেছেন তাদের খেলতে হয়েছিল লো, স্লো উইকেটে। সেখানে বেঙ্গালুরুর উইকেট অনেক বেশি ব্যাটিং সহায়ক। ইডেনের মতো ওখানে বল পড়ে থেমে থেমে যাবে না। ব্যাটে আসবে। সেই পিচে সাকিব আল হাসান বা পীযূষ চাওলা কিন্তু ইডেনের মতো টার্ন পাবে না। বরং ওখানে মর্নি মর্কেল বা উমেশ যাদব অনেক বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারবে। চেন্নাইয়ের বোলিংকে নিয়ে আজ যে ভাবে ছেলেখেলা করল সহবাগ, মর্কেলের সামনে সেটা অত সহজেও পারবে না। বীরুর ফুটওয়ার্ক এখন অত দ্রুত নয়। মর্কেলের পেস আর বাউন্স ওকে সমস্যায় ফেলে দিতে পারে।
সোজা কথায়, রবিবারের ফাইনাল হতে চলেছে পঞ্জাব ব্যাটিং বনাম নাইট বোলিং। পঞ্জাবের প্রত্যেক ব্যাটসম্যান অসাধারণ স্ট্রোক প্লেয়ার। ওদের মধ্যে দু’জন সেট করে গেলে দুশো তুলে দেওয়া কোনও ব্যাপার নয়। বিশেষ করে সহবাগ এখন যা ফর্মে আছে, তাতে ম্যাক্সওয়েল বা মিলারের চেয়ে ও কোনও অংশে কম বিপজ্জনক নয়। কেকেআরের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সহবাগের উইকেটটা নেওয়া। ম্যাক্সওয়েল শর্ট-পিচড বলের বিরুদ্ধে বেশ অস্বচ্ছন্দ। স্পিনারের বিরুদ্ধে তো ম্যাক্সওয়েল-মিলার দু’জনেই। রবিবার বরং মনন ভোরা বা ঋদ্ধিমান সাহার অবদান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
সব দেখেশুনে আমি কিন্তু বলব, ফাইনালে কলকাতা কিছুটা হলেও ফেভারিট। দেখুন, ব্যাটিং ব্যর্থ হলে পঞ্জাবের জেতা মুশকিল। কেকেআর সেখানে অনেক বেশি ব্যালান্সড টিম। গম্ভীরকে পরামর্শ দিতে হলে বলব, টস জিতলে আগে ব্যাট করো। আর বল করার সময় যত তাড়াতাড়ি পারো বীরুকে ফেরাও। ওকে আউট না করতে পারলে কিন্তু ও তোমাদের নকআউট করে দেবে!
“আজ নেস ওয়াদিয়ার জন্মদিন, কাল ওকে মেসেজ করেছিলাম যে দারুণ একটা উপহার দেব। আর আমি তাড়াতাড়ি
আউট হয়ে গেলেই ছেলে ফোন করে বলছিল, ‘বাবা তুমি কী করছ? তোমার জন্য স্কুলের বন্ধুরা মজা করছে আমাকে নিয়ে।’
ওকে বলেছিলাম এখনও দু’একটা ম্যাচ বাকি আছে। দেখিয়ে দেব আমি কী করতে পারি! সচিন পাজির সঙ্গে কথা হয়েছে।
ওর সঙ্গে কথা বলে অনেকটা আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলাম।” —বীরেন্দ্র সহবাগ
“সবাই বলছে ফাইনালে বীর বনাম জারা। মানে শাহরুখ বনাম প্রীতি।...
কিন্তু আমার ছোট্ট ক্যামিও রোলটার কী হবে??” —অমিতাভ বচ্চন
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ২০ ওভারে ২২৬-৬ (সহবাগ ১২২, নেহরা ২-৫১)
চেন্নাই সুপার কিংস ২০ ওভারে ২০২-৭ (রায়না ৮৭, আওয়ানা ২-৫৯)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy