Advertisement
E-Paper

গাব্বায় স্টিভ-দুইয়ের কায়ায় স্টিভ-একের ছায়া

ব্রিসবেনে যুগ্ম ঝড়ের জোর পূর্বাভাস ছিল বিষ্যুত্‌বার। ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক ঝড় আসার কথা বিকেল ছ’টায়। এলও ব্রিসবেন কাঁপিয়ে। যার জন্য আগাম দ্বিতীয় দিনের স্টাম্প তুলে নিতে হল। কিন্তু ক্রিকেটীয় ঝড় গরহাজির—যা ভারতীয় ক্রিকেট দলের মাধ্যমে সকাল-সকাল গাব্বায় নামার কথা। স্টিভন স্মিথকে বরং দেখে মনে হল উল্টো। তিনি ঝড়ের কাছে রেখে যেতে চান ধোনির ঠিকানা!

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৮
স্মিথের মস্তানি। স্টেপ আউট করে গ্যালারিতে ফেলছেন অশ্বিনকে। ইনসেটে পূর্বসূরি স্টিভ। ছবি: গেটি ইমেজেস

স্মিথের মস্তানি। স্টেপ আউট করে গ্যালারিতে ফেলছেন অশ্বিনকে। ইনসেটে পূর্বসূরি স্টিভ। ছবি: গেটি ইমেজেস

ব্রিসবেনে যুগ্ম ঝড়ের জোর পূর্বাভাস ছিল বিষ্যুত্‌বার। ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক ঝড় আসার কথা বিকেল ছ’টায়। এলও ব্রিসবেন কাঁপিয়ে। যার জন্য আগাম দ্বিতীয় দিনের স্টাম্প তুলে নিতে হল।

কিন্তু ক্রিকেটীয় ঝড় গরহাজির—যা ভারতীয় ক্রিকেট দলের মাধ্যমে সকাল-সকাল গাব্বায় নামার কথা। স্টিভন স্মিথকে বরং দেখে মনে হল উল্টো। তিনি ঝড়ের কাছে রেখে যেতে চান ধোনির ঠিকানা!

ক্রিকেটের কোচেরা একটা কথা খুব ব্যবহার করেন যে, ব্যাটসম্যানের মনের আয়না হল তার ফুটওয়ার্ক। পা কী রকম চলছে, দেখলে বোঝা যায় মন কী রকম অবস্থায় আছে। তা তিনি স্টিভ স্মিথ অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক হিসেবে চার নম্বরে প্রথম মাইকেল ক্লার্কের জায়গায় ব্যাট করতে নামলেন। ব্যাগি গ্রিন যথেষ্ট চাপে। ধোনি ব্যাটসম্যানদের পিছনে লাগিয়ে দিয়েছেন অশ্বিনকে। সেটা যদি বাইশ গজের চাপ হয়, তার বাইরের চাপ তো আরও মারাত্মক।

অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন হলেন এ দেশের ক্রিকেট-পণ্ডিতদের কাছে বিয়ের কনে। যার প্রতি মুহূর্তে বিশ্লেষণ চলবে। চুলটা কেমন? খোঁপাটা কেমন করেছে? বাপের বাড়ি থেকে যথেষ্ট গয়না দিল কি না---বিয়েবাড়িতে মহিলাদের এই সব অবশ্যম্ভাবী চর্চার মতোই নিরন্তর চলতে থাকে! ক্যাপ্টেনের প্যাড পরা পা দু’টো মাঠের মধ্যে ঘাসে পড়তেই। লাইনে যাচ্ছে বলের? ফরোয়ার্ড খেলার বল ব্যাকফুটে যাচ্ছে না তো? বাউন্সার ছাড়ার সময় চোখ বুজছে? পুলে শরীর সরাতে পারছে? অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সমাজের মতো নিবিড় এবং নৃশংস পর্যবেক্ষক পৃথিবীর কোথাও নেই। ক্যাপ্টেনের প্রতিটি পদক্ষেপ তারা মাপে। সাহসিকতায় এতটুকু এ দিক এ দিক হওয়ার রক্ষে নেই। সে পন্টিং হন। মার্ক টেলর হন। কী স্টিভ ওয়। অর্কেস্ট্রা শুরু হয়ে যাবে তাঁর বিরুদ্ধে। এবং মনে হচ্ছিল বিয়ের রাতেই না স্টিভ স্মিথের বিরুদ্ধে সেটা বাজতে শুরু হয়!

দু’জনের নাম এক। জন্মদিন এক— ২ জুন। বংশের প্রথম সন্তান যদি স্টিভ ওয় হন, ইনি স্টিভ স্মিথ হলেন স্টিভ-দুই। তা ‘দুই’ ক্যাপ্টেন্সি পেয়েছেন ‘এক’-এর চেয়ে তিন বছর কম বয়সে। ধারণা ছিল, আজ গাব্বায় ধোনির রাজ্যপাট যত কায়েম হবে তত আরও ঝড়ের মধ্যে পড়বেন নতুন স্টিভ। মানে স্টিভ-দুই। কে জানত, স্লিপে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে রোহিত শর্মার ক্যাচ ছাড়াও অপরাজিত ৬৫-তে তিনি ব্রিসবেন টেস্ট এমন তুল্যমূল্য রেখে দেবেন। প্রথম ডেলিভারিটা যখন খেলছেন, তখনও ভাবছি অ্যাডিলেডের দুই ইনিংসে আউট হননি তো কী। এখানে তো বোলিং ছাড়াও অন্য চাপ। মেলবোর্ন হসপিটালে নিজের কেবিনে বসে মাইকেল ক্লার্ক নিশ্চয়ই দেখছেন উত্তরসূরি কী করছে? মাঠে হুমড়ি খেয়ে বসে আছেন চ্যাপেল-ভাইরা, টমসন, রেকেম্যান, মার্ক টেলর, ম্যাকগ্রা, ইয়ান হিলি, ডিন জোন্স, শেন ওয়ার্ন।

তা অধিনায়কত্বের প্রথম ব্যাটিং প্রহরে স্মিথকে দেখে মনে হল বংশের সাবেকি ধারার আধুনিক সংস্করণ তিনি। যত চাপ তত ভাল। সকালে ভারতের শেষ ছয় উইকেট ৮৭ রানে ফার্স্ট সেশনেই ফেলে দিয়ে তিনি গলার ওপর চেপে বসা প্রথম দিনের পাথর অনেকটাই সরিয়ে দিয়েছেন। এ বার রানটা তোলার সময়। এই ভারতের বোলিং অ্যাডিলেডের তুলনায় অনেক গোছানো। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এই প্রথম নির্বাচিত তিন পেসারই ঘণ্টায় ১৪০ কিমি-র ওপর বল করতে পারেন। করছেনও। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানেরা সেট হয়ে কেউ দাঁড়াতে পারছে না। অশ্বিনের ফাঁস ক্রমশ চেপে বসছে। এমনিতে অশ্বিনের হিসেব বিশ্লেষিত হয় এ ভাবে— ইন হিজ ওন ড্রইংরুম, সাংঘাতিক। ১৫ টেস্ট ৯৫ উইকেট। গড় ২৪। অন দ্য রোড খুব খারাপ। ৭ টেস্ট ১৩ উইকেট। গড় ৬২.৫। এই অশ্বিন সেই হিসেবে বাড়ির বাইরের। কম বিপজ্জনক। কিন্তু আজ বিষাক্ত হয়ে উঠেছেন। স্মিথ ঠিক করলেন তাঁকেই চালাবেন। দু’টো ছয় মারলেন তিনি অশ্বিনকে। ভাবাই যায় না, অধিনায়ক হিসেবে জীবনের প্রথম টেস্ট ইনিংসের সঙ্কট মুহূর্তে কেউ এত ডাকসাইটে হতে পারে। সময়-সময় স্টিভ-একের শেষ টেস্ট ইনিংস আর স্টিভ-দুইয়ের প্রথম গুলিয়ে যাচ্ছিল।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি— তিনিও নিশ্চেষ্ট নন। সকালে তাঁর ভারত ৮৭ রানে শেষ ছয় উইকেট হারিয়ে বসল। দেখলাম, ওই ভোরবেলা আকাশ চোপড়া টুইট করেছেন, ‘এ তো ২০০৩-এর মেলবোর্নের দ্বিতীয় দিন হয়ে গেল।’ আকাশের আরও মনে থাকার কথা। তিনি আর সহবাগ প্রথম দিন এত ভাল খেলা এবং শেষের জনের ১৯৫ রানের পরেও স্রেফ দ্বিতীয় দিন ফার্স্ট সেশনের ব্যর্থতায় ভারত টেস্টটা হেরেছিল। ধোনিকে এই টেস্ট ম্যাচে দেখে মনে হচ্ছে, অধিনায়ক হিসেবে এটাই প্রথম। বিদেশে টেস্ট অধিনায়কত্বে তাঁকে দৃশ্যত এত জড়িয়ে থাকতে কখনও দেখা যায় না। ব্যাট করতে এলেন কোনও আর্মগার্ড ছাড়া। আবার গাব্বা পিচ থেকে দু’টো ভয়ঙ্কর দ্রুতগামী বল স্ট্রেট শরীরে নিলেনও। যে গতিতে ডেলিভারি দু’টো এসেছিল খেলার পর শার্ট খুললে চাকা চাকা দাগের সঙ্গে দেখা হওয়া উচিত। দ্বিতীয় ডেলিভারিটা ধোনির বুক ছুঁয়ে পিছনে চলে গেল। দৌড়ে তিনি আর রোহিত তিন রান লেগ বাই নিলেন। ফিরে এসে দেখলেন আম্পায়ার এরাসমাস ডেড বল ঘোষণা করেছেন। তুমি স্ট্রোক করোনি, অতএব নো লেগবাই। ধোনি তর্ক শুরু করলেন, স্ট্রোক করিনি মানে! খেলতে গিয়ে তো শরীরে লেগেছে। এই রকম চলল তিন মিনিট।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি একটা লেগ বাইয়ের তিন রান নিয়ে আম্পায়ারের সঙ্গে তীব্র তর্কে লিপ্ত— এমন কিছু যদি ঝাড়খণ্ডের স্কুল ম্যাচে কখনও ঘটে থাকে, কেউ জানে না। ইন্ডিয়া ক্যাপ পরে কখনও ঘটেনি। গাব্বায় কী পরিমাণ দড়ি-টানাটানি চলছে ঘটনাটাই তার শ্রেষ্ঠ রূপরেখা।

অ্যাডিলেডের শেষ দিনের মতো শুক্রবারের গাব্বাও না অবিরত ফুলকি আর সংঘর্ষে ভরা হয়!

gautam bhattacharya brisbane test india-australia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy