Advertisement
E-Paper

গার্সিয়া বল বাড়ালেই মনে হচ্ছে গোল পাব

দলে লুই গার্সিয়ার মতো বিশ্বকাপার। তবু হঠাত্‌-ই আটলেটিকো দে কলকাতার মধ্যমণি তিনি— ফিকরু তেফেরা। চুলের নতুন স্টাইল থেকে বিশ্বমানের গোল— আইএসএলে ইথিওপিয়ার ফরোয়ার্ডকে আরও আকর্ষণের কেন্দ্রে এনে দিয়েছে। গুয়াহাটি থেকে শহরে পা দেওয়ার ঘণ্টাকয়েকের মধ্যেই তিনি মুখোমুখি আনন্দবাজারের।

তানিয়া রায়

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩৪
গুয়াহাটি বিজয় সেরে শহরে পা কলকাতার নায়কের। ছবি: উত্‌পল সরকার

গুয়াহাটি বিজয় সেরে শহরে পা কলকাতার নায়কের। ছবি: উত্‌পল সরকার

দলে লুই গার্সিয়ার মতো বিশ্বকাপার। তবু হঠাত্‌-ই আটলেটিকো দে কলকাতার মধ্যমণি তিনি— ফিকরু তেফেরা। চুলের নতুন স্টাইল থেকে বিশ্বমানের গোল— আইএসএলে ইথিওপিয়ার ফরোয়ার্ডকে আরও আকর্ষণের কেন্দ্রে এনে দিয়েছে। গুয়াহাটি থেকে শহরে পা দেওয়ার ঘণ্টাকয়েকের মধ্যেই তিনি মুখোমুখি আনন্দবাজারের।

প্রশ্ন: গোলের মতো আপনার চুলের স্টাইলও তো দারুণ হিট। আইএসএলের বালোতেলি বলা শুরু হয়ে গিয়েছে আপনাকে!

ফিকরু: (হেসে ফেলে) তাই না কি! এখানে এসে চুল কাটার পর আমি তো বরং ভাবছিলাম কেমন লাগছে কে জানে! এখন মেয়েরাও যখন প্রশংসা করছে, তখন নিশ্চয়ই আমাকে এই চুলের স্টাইল মানিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। এটা আইএসএল স্পেশ্যাল কাটিং।

প্র: উদ্বোধনী ম্যাচের আগের দিনই তো চুল কেটেছিলেন। তার পর দু’ম্যাচেই গোল। লাকি হেয়ার স্টাইল বলছেন কি?

ফিকরু: তাই তো মনে হচ্ছে। তবে এই হেয়ার স্টাইল না করলেও আমি গোল পেতাম। যে ক্লাবে যখন খেলেছি, গোল করেছি। দেশের হয়েও গোল করেছি। ভারতেও গোল করতেই এসেছি।

প্র: আইএসএলে সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারবেন?

ফিকরু: টিমকে চ্যাম্পিয়ন করাই আসল লক্ষ্য। তার সঙ্গে হায়েস্ট স্কোরার হতে পারলে আরও ভাল লাগবে।

প্র: দু’ম্যাচে দু’গোল। কোনটা সেরা?

ফিকরু: দু’টোই। প্রথমটা টুর্নামেন্টের প্রথম গোল বলে। পরেরটা হাফ চান্স থেকে করেছি বলে।

প্র: গার্সিয়ার সঙ্গে একটা দারুণ বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। স্পেন আর ইথিওপিয়ার ফুটবলের ঘরানা তো আলাদা! তবু মাত্র দেড় মাসের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরির রসায়নটা কী?

ফিকরু: গার্সিয়া অভিজ্ঞ ফুটবলার। ও গাইড না করলে এ ভাবে সাফল্য পেতাম না। যে বলগুলো গোলের জন্য বাড়ায়, একেবারে মাপা! ও বল বাড়ালেই মনে হচ্ছে গোল পাব। ওর মতো ফুটবলার পিছনে থাকলে এমনিতেই বোঝাপড়া তৈরি হয়ে যাবে। আর মাদ্রিদের এক মাসের শিবির আমাদের মধ্যে এই বোঝাপড়া তৈরি করতে আরও সাহায্য করেছে। টিম কম্বিনেশনটাই আমাদের সাফল্যের আসল রসায়ন বলতে পারেন।

প্র: দিল্লি ডায়নামোসের খেলা দেখেছেন? দেল পিয়েরোকে কেমন লাগল? আপনারা তো বোরহাকে পাবেন না রবিবার।

ফিকরু: ওদের খেলা দেখা হয়নি। তবে দেল পিয়েরো যে দুর্দান্ত ফুটবলার তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। রবিবার ওকে নিয়ে সতর্ক থাকতেই হবে। বোরহাকে না পাওয়াটা বড় ক্ষতি। তবে আমাদের দলে সবাই প্রায় সমমানের। যে-ই খেলুক, ওর জায়গা পূরণ করার জন্য একশো শতাংশ উজাড় করে দেবে।

প্র: ঘরের মাঠের পর অ্যাওয়ে ম্যাচেও সাফল্য! কী মনে হচ্ছে আইএসএল ট্রফি কলকাতায় আসবে?

ফিকরু: সবে দু’টো ম্যাচ হয়েছে। এত আগে থেকে কিছু বলা যায়? ম্যাচ ধরে-ধরে আমরা এগোব। নিজেদের জয়ের ধারা ধরে রাখতে হবে। তবে আমাদের তো আসল লক্ষ্য, চ্যাম্পিয়ন হওয়াই। তার জন্যই তো এত পরিশ্রম। প্রস্তুতি।

প্র: হঠাত্‌ আইএসএলে খেলতে এলেন কেন?

ফিকরু: সত্যিই হঠাত্‌ করেই ভারতে আসাটা ঠিক হল। আটলেটিকোর থেকে যখন আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হল, তখন ভাবলাম নতুন টুর্নামেন্ট, নতুন চ্যালেঞ্জ। নিয়েই ফেলি। এখানে এসে দেখলাম, সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি।

প্র: দু’টো ম্যাচ খেলেই সেটা বুঝে গেলেন?

ফিকরু: বুঝেছি ফুটবল উন্মাদনাটা দেখে। ভারতেও যে ফুটবলকে ঘিরে এ রকম উন্মাদনা থাকতে পারে, এখানে না আসলে জানতেই পারতাম না। দারুণ অভিজ্ঞতা। উদ্বোধন থেকে গুয়াহাটির ম্যাচ— সর্বত্র ফুটবল উন্মাদনা দেখে সত্যিই আমি অবাক।

প্র: আইএসএলের পরেও ভারতে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে না কি?

ফিকরু: এখনও সে রকম কিছু ভাবিনি। আইএসএল তো আগে শেষ হোক।

প্র: আই লিগ খেলার প্রস্তাব পেলে খেলবেন?

ফিকরু: আই লিগের কথা আটলেটিকো টিমের সতীর্থদের থেকে শুনেছি। কলকাতার ক্লাব—ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের কথাও জেনেছি। কলকাতা ডার্বি ম্যাচের গল্প শোনার পাশাপাশি বলজিতের (আটলেটিকোর ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকার বলজিত্‌ সাইনি) থেকে সেই ম্যাচের ছবিও দেখেছি। প্রচুর দর্শক হয়। দারুণ উন্মাদনা থাকে দু’দলের সমর্থকদের।

প্র: ডার্বি খেলার ইচ্ছে আছে?

ফিকরু: সত্যি বলব? এখন এ সব নিয়ে ভাবছিই না। আইএসএলের পর আমি বাইরের ক্লাবে সই করতে পারি। এখন অবশ্য সে সব নিয়ে না ভেবে আইএসএলেই ফোকাস করতে চাই। দেল পিয়েরোর বিরুদ্ধেও তো আমাকে গোল করতে হবে (আবার হাসি)।

প্র: জানেন কি, যে বছর ভারত স্বাধীন হল, সে বছরই ফিফার অনুমোদন পেয়েছিল ইথিওপিয়া। পঞ্চাশ-ষাটের দশক দু’দেশের ফুটবলেরই স্বর্ণযুগ। কোথাও সামঞ্জস্য খুঁজে পাচ্ছেন কি?

ফিকরু: (হেসে) ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে এখানে আসার আগে কোনও ধারণাই ছিল না। এশিয়ার ক্লাবে এক বছর খেলার সুবাদে এই মহাদেশের ফুটবল সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল ঠিকই। তবে এখানে এসে দেখলাম, ভারতের ফুটবল উন্মাদনা ইথিওপিয়াকেও ছাপিয়ে যায়। এখানকার খাবার এবং সংস্কৃতির সঙ্গে ইথিওপিয়ার অনেক মিল রয়েছে।

প্র: কী রকম?

ফিকরু: এখানকার মানুষ আমাদের দেশের মতোই অতিথিপরায়ণ। এখানকার চিকেন কারির স্বাদও আমার দেশের চিকেন কারির মতোই।

প্র: স্ত্রী আর ছেলেকে আইএসএল গোল উত্‌সর্গ করেছেন। ভারতের অভিজ্ঞতা শোনার পর স্ত্রী কী বললেন? ছেলে তো খুবই ছোট?

ফিকরু: আমার ছেলে জোশোয়ার বয়স মাত্র দু’বছর। আমি ওকে বলি প্রিন্স জোশোয়া। ওকেও ইচ্ছে আছে বড় ফুটবলার করার। ব্রাজিলের রোনাল্ডোর মতো। রোনাল্ডো আমার আইডল। আর স্ত্রীর সঙ্গে তো রোজই ফোনে কথা হচ্ছে। আমার এখানকার সাফল্যের কথা শুনে ও খুব খুশি। সব সময় উত্‌সাহ দেয় আমাকে। খেলার আগে আমি ওদের কথা মনে করি। দেশে বসে আমার স্ত্রী আমার জন্য প্রার্থনা করছে। সেটা ভেবেই তো গোল করার বাড়তি তাগিদ পাই।

প্র: পর পর হোম-অ্যাওয়ে ম্যাচ। ক্রীড়াসূচি কঠিন। কোনও বাড়তি চাপ?

ফিকরু: আমার মনে হয় না। এ ভাবেই সারা বিশ্বে খেলা হয়। আইএসএলের সব টিমই তো এ ভাবে খেলছে। আমাদেরও খেলতে হবে। এর মধ্যেই চ্যাম্পিয়ন হতে হবে।

isl football fikru tania roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy