Advertisement
২০ মে ২০২৪
মেসিদের কাছে হারটা নাইজিরিয়াকে জাগিয়ে তুলবে

জঙ্গিহানা সত্ত্বেও আমার শহরে ক্রিসমাসের মেজাজ

ম্যাচটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জানলা দিয়ে রাস্তায় তাকালাম। চিৎকার, উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনার মিছিল দেখে দেখে মনে হচ্ছিল ২৫ ডিসেম্বরের রাত। আসলে, ক্রিসমাসের দিন ছাড়া এত লোককে এক সঙ্গে রাস্তায় বেরোতে দেখিনি কোনও রাতে।

পোর্তো আলেগ্রেতে উৎসব। আবুজায় সন্ত্রাস। ছবি: এএফপি।

পোর্তো আলেগ্রেতে উৎসব। আবুজায় সন্ত্রাস। ছবি: এএফপি।

এডে চিডি
এনুগু শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০৩:২৭
Share: Save:

ম্যাচটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জানলা দিয়ে রাস্তায় তাকালাম। চিৎকার, উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনার মিছিল দেখে দেখে মনে হচ্ছিল ২৫ ডিসেম্বরের রাত। আসলে, ক্রিসমাসের দিন ছাড়া এত লোককে এক সঙ্গে রাস্তায় বেরোতে দেখিনি কোনও রাতে।

ষোলো বছর পর আবার আমরা বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয়। ম্যাচটা হারলেও উচ্ছ্বাসটা তাই মনে হচ্ছিল সবার একটু বেশিই। বিশ্বকাপের যুব স্তরে আমাদের দেশ এত সফল, অথচ মূল বিশ্বকাপে আমরা অনেক দিন কিছু করতে পারছিলাম না। দেশ জুড়ে তাই সবাই চাইছিল, এই সুযোগটা নিতে। মঙ্গলবার রাতে গির্জাগুলোতে এত ভিড় ছিল, সাধারণত যা হয় ক্রিসমাস ইভের দিন। প্রার্থনা ছিল একটাই, স্টিফেন কেশির টিম এ বার অন্তত নক আউট পর্বে যাক।

আর্জেন্তিনার মতো দলের বিরুদ্ধে মুসারা যা খেলল তাতে তো এখন মনে হচ্ছে নাইজিরিয়া সেমিফাইনালে না চলে যায়! আমার বন্ধুরা সবাই সেই স্বপ্নই দেখছে।

বুকটা দুরদুর করছিল আর্জেন্তিনার সঙ্গে মুসারা খেলতে নামার আগে। পারবে তো আমার দেশ শেষ ষোলোয় যেতে? মেসি, দি’মারিয়াদের সঙ্গে টিভিতে আমাদের ম্যাচটা দেখছিলাম, আর মাঝেমধ্যে ইরান-বসনিয়া ম্যাচের খোঁজ নিচ্ছিলাম। ওদের ফল জানার জন্য। ইরান পিছিয়ে পড়েছে শুনে স্বস্তি পাচ্ছিলাম। সকাল থেকেই আমাদের এই শহরে ছিল উৎসবের মেজাজ। এমন কোনও শপিং মল, পাব বা প্রধান রাস্তার মোড় ছিল না, যেখানে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখেনি মানুষ। ম্যাচের পর উৎসব আরও রঙিন হয়ে ওঠে। আমাদের জাতীয় দলের সবুজ জার্সি পরে, মুখে জাতীয় পতাকার রং মেখে আট থেকে আশি সবাই নেমে এসেছিল রাস্তায়। প্রচুর মেয়ে সমর্থককে দেখলাম জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে। আর ম্যাচটা জেতার পরই সবাই মিলে নাচতে, নাচতে মিছিলের মতো চলেছে রাস্তা দিয়ে। কোনও হোটেলেই আর টেবিল ফাঁকা নেই। আমিও মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে ডিনারে যাচ্ছি অন্যদের মতোই নাইজিরিয়ার সাফল্য সেলিব্রেট করতে।

এর মাঝে অবশ্য একটা খারাপ খবর, নাইজিরিয়ার রাজধানী, আবুজাতে একটি শপিং মলে জঙ্গিহানা হয়েছে। সবাই নাকি খেলা দেখার জন্য জড়ো হয়েছিল। সেখানে বোমা বিস্ফোরণে অনেক লোক মারা গেছে। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তবে আমাদের এখানে এর কোনও প্রভাব নেই। আসলে এনুগু শহরটা নাইজিরিয়ার পূর্ব দিকে আর এবুজা সেই উত্তরে।

বিশ্বাস করুন, মুসা যখন ১-১ করল তখন মনে হচ্ছিল আমরা ম্যাচটা জিতব। মেসি আমার খুব প্রিয় ফুটবলার। অন্য কারও সঙ্গে ম্যাচ হলে মেসি গোল করুক চাইতাম। কিন্তু এ দিন তো আমার টিমের বিরুদ্ধেই ও খেলছে। তাই চাইছিলাম ওকে আটকে দিক আমাদের ডিফেন্ডাররা। কিন্তু কোথায় কী! ২-১ তো করল ফ্রি-কিক থেকে অবিশ্বাস্য একটা গোল করে। মেসির এই গোলটার পরই হঠাৎ মনে হল চারিদিকে যেন শ্মশানের নিঃস্তব্ধতা নেমে এসেছে। কিন্তু মুসা ২-২ করতেই আবার সেই পরিচিত চিৎকার, উচ্ছ্বাস শুরু হয়ে যায় সর্বত্র। ম্যাচটা আমরা ২-৩ হারলাম বটে, কিন্তু ছিটকে যে যাইনি এটাই বড় ব্যাপার। দু’বার সমতা ফেরানোর পরও আর্জেন্তিনা জিতে যাওয়ায় এখন মনে হচ্ছে শাপে বর হল একদিক থেকে। আমাদের টিমটা নক আউট পর্যায়ে গিয়ে সতর্ক হবে। এখানে নয় মেসি ছিল। ওকে আটকানো কঠিন। এই ম্যাচটায় মেসি না থাকলে হয়তো আমরাই জিতে জেতাম। ওর কাছেই হারলাম।

আফ্রিকান টিমগুলোর মধ্যে আমরাই প্রথম শেষ ষোলোয় গেলাম। দেখার, কাল ঘানা যায় কি না! তবে আমাদের টিম নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। আমরা একটিও প্রস্তুতি ম্যাচে জিততে পারিনি বলে অনেকেই আমাদের নিয়ে বাজি ধরেনি। আমি যখন নাইজিরিয়া যুব দলের শিবিরে ছিলাম তখন যারা আমার সতীর্থ ছিল, তাদের মধ্যে মাইকেল উচে বো এই দলে রয়েছে। সে জন্য মনে হচ্ছে, আমার আনন্দটা অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fifaworldcup Chidi Edeh enugu nigeria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE