Advertisement
E-Paper

ড্রয়ের পরেও শেষ চার দেখছেন সঞ্জয়

পাশাপাশি চেয়ারে বসে দেশের সেরা ক্লাব কোচেরা। তাঁদের সবার চোখেই বিস্ময়! আর্মান্দো কোলাসো: দেশের সেরা টিম মোহনবাগান। রিজার্ভ বেঞ্চটা দেখছেন। কোনও টিমের আছে। কপাল খারাপ! জিততে পারল না। ডেরেক পেরিরা: দেশের সবথেকে ব্যালান্সড দল। সনি আর বোয়া মিলে টিমের চেহারাই বদলে দিয়েছে। আজ তিন-চার গোলে জেতা উচিত ছিল। মারিয়ানো ডায়াস: গতবার ফেড কাপ আমি চার্চিলের কোচ হিসাবে জিতেছিলাম। এ বার সঞ্জয় না জিতলে অবাক হব। সনি নর্ডি পুরো টিমটার নিউক্লিয়াস। বেঙ্গালুরু তো দাঁড়াতেই পারল না। করিম বেঞ্চারিফা: গুড টিম। মোহনবাগান অলওয়েজ গুড।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৫
দুর্দান্ত শিল্টন, কিন্তু বাগানের ভাগ্য খুলল না। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু ম্যাচে। ছবি: উত্‌পল সরকার

দুর্দান্ত শিল্টন, কিন্তু বাগানের ভাগ্য খুলল না। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু ম্যাচে। ছবি: উত্‌পল সরকার

মোহনবাগান ০
বেঙ্গালুরু ০

পাশাপাশি চেয়ারে বসে দেশের সেরা ক্লাব কোচেরা। তাঁদের সবার চোখেই বিস্ময়!

আর্মান্দো কোলাসো: দেশের সেরা টিম মোহনবাগান। রিজার্ভ বেঞ্চটা দেখছেন। কোনও টিমের আছে। কপাল খারাপ! জিততে পারল না।

ডেরেক পেরিরা: দেশের সবথেকে ব্যালান্সড দল। সনি আর বোয়া মিলে টিমের চেহারাই বদলে দিয়েছে। আজ তিন-চার গোলে জেতা উচিত ছিল।

মারিয়ানো ডায়াস: গতবার ফেড কাপ আমি চার্চিলের কোচ হিসাবে জিতেছিলাম। এ বার সঞ্জয় না জিতলে অবাক হব। সনি নর্ডি পুরো টিমটার নিউক্লিয়াস। বেঙ্গালুরু তো দাঁড়াতেই পারল না।

করিম বেঞ্চারিফা: গুড টিম। মোহনবাগান অলওয়েজ গুড।

ভিআইপি বক্সে বসে ওঁরা সবাই মাপতে এসেছিলেন বাগানের ওজন। করিমের দল পুণে আর ডেরেকের দল সালগাওকর— দু’টো টিমকেই গ্রুপ লিগের ম্যাচ খেলতে হবে বাগানের বিরুদ্ধে। নববর্ষের প্রথম দিনই তো করিম বনাম মোহনবাগান। কিন্তু আর্মান্দো? চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী জেনেও কেন এত দরাজ ইস্টবেঙ্গলের গোয়ান কোচ? শেষ চারে তাঁর টিম উঠলে গোয়ার মাঠে ডার্বির সম্ভাবনা আছে জেনেও কেন এমন মন্তব্য তাঁর? মনে হল কোনও অঙ্ক নেই এতে। মুগ্ধতা থেকেই তাঁর এ কথা বলা।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টেস্ট থেকে অপ্রত্যাশিত অবসরের মতোই মনে হচ্ছিল বাগান সম্পর্কে অন্য ক্লাবের হাইপ্রোফাইল কোচেদের মন্তব্য। বাইরের মাঠে বাগান সম্পর্কে কবে এমন উচ্ছ্বসিত হয়েছেন অন্য ক্লাবের কোচেরা, মনে করা যাচ্ছে না। সাড়ে চার বছর ট্রফি নেই যে দলের, তারা কি গোয়ায় এসে ট্রফির খরা কাটাতে পারবে এ বার? দিল্লি বহু দূর। ভাল খেলেও কোনও কোনও দল ট্রফি পায় না। আবার টুর্নামেন্টে অর্ধেকেরও বেশি ম্যাচ ড্র করেও চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় আন্তোনিও হাবাসের আটলেটিকো দে কলকাতা। পারফর্মারদের অন্তত আশি শতাংশ মানেন এবং স্বীকারও করেন, ৯৯ ভাগ দিলেও এক পার্সেন্ট ভাগ্যের উপর ছাড়তে হয় সফল হওয়ার প্রশ্নে। ম্যাচের পর সঞ্জয় সেনের গলাতেও সেই কথারই অনুরণন। “একে আর কী দিয়ে ব্যাখ্যা করব? আমরা আনলাকি। তাই জিততে পারলাম না। গোলটাই যে হল না। দুর্ভাগ্য ছাড়া কী বলব?” বাগান কোচের আফসোস।

কত গোলে জিততে পারত বাগান? মাথা নিচু করে মাঠ থেকে বেরনোর সময় সনি নর্ডি বললেন, “ভারতে আমার প্রথম ম্যাচটা জিততে পারলাম না। তিন-চার গোলে তো জিততেই পারতাম। নিজেই বিশ্বাস করতে পারছি না, আমার শটটা ও ভাবে বেঙ্গালুরুর পোস্টের ভিতরের দিকে লেগে কী ভাবে ফিরে এল!” পাশ থেকে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার সময় কানে সারাক্ষণ ওয়াকম্যান গুঁজে ‘মূক-বধির’ হয়ে থাকা বোয়াও মুখর, “আমার ও রকম দু’টো নিশ্চিত গোলের শট ও ভাবে আটকে দেবে ওদের কিপার, ভাবতেই পারছি না।” সনি মাথা নাড়েন, “পরের ম্যাচটা জিততে হবে। ভাল খেললাম, জিততে পরলাম না এটার কোনও দাম নেই।”

দেশের সবথেকে পেশাদার দল হিসাবে বেঙ্গালুরু ইতিমধ্যেই চমকে দিয়েছে। নিজেদের টিম বাস নিয়ে সরাসরি চলে আসা ছাড়াও তারা নিজেদের ফ্যান ক্লাবের লোকজনকেও নিয়ে এসেছেন সঙ্গে। বিদেশের ক্লাবের মতো গ্যালারিতে বসে কখনও সুনীল ছেত্রী, কখনও জনসন, কখনও প্রিমিয়ার লিগে খেলে আসা জেসু ওয়াকারকে নিয়ে গান গাইছিলেন ওঁরা। সেটা মাঝেমধ্যে থেমে যাচ্ছিল নর্ডি-বোয়া-লালকমল-বেলোদের দাপট দেখে। নিয়মিত ময়দানে সবুজ-মেরুন রং মেখে আসা এক দর্শক তাঁর সেই বিখ্যাত বিশাল পতাকা আর পরিবার নিয়ে হাজির তিলক ময়দানে। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফসি-কে অনায়াসেই বেলো-প্রীতমদের পকেটে পুরে নেওয়ার দৃশ্য তিনি দেখতে পেলেন বটে, কিন্তু মুষড়ে থাকা ক্লাবের কোটি কোটি সমর্থক তা দেখতে পেলেন না। অকর্মণ্য ফেডারেশন কর্তাদের জন্য। ছাড়পত্র না আসায় আজও টিভিতে দেখানো গেল না ম্যাচ। ফুটবলটাকে কোথায় যে নিয়ে যেতে চান দেশের ফুটবল কর্তারা, কে জানে? আইএসএলে ম্যাচ দেখতে ওঁরা বিভিন্ন ভেনুতে বারবার নানা কাজের অছিলায় উড়ে গেলেও নিজেদের টুর্নামেন্টে তাদের টিকির দেখা নেই। কে এক মান্ধাতার আমলের অনিল কামাথ, তিনিই সব সামলাচ্ছেন এবং পাড়ার সংগঠকদের চেয়েও তাঁর ব্যবস্থাপনা খারাপ।

কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় কলকাতা লিগে ব্যর্থ, সিকিমে ব্যর্থ একটা দল হঠাত্‌ এত ভাল খেলে ফেলল? তিনটে কারণ উঠে আসছে। এক) বোয়া আর কাতসুমির বোঝাপড়া কাজে লাগছে। দুই) বেলো রজ্জাকের মতো দীর্ঘ দিনের পোড় খাওয়া ডিফেন্ডার এসে যাওয়ায় ‘লিডার’ পেয়ে গিয়েছেন প্রীতম-শৌভিকরা। তিন) ওয়ান স্ট্রাইকারে টিম খেললেও নতুন কোচ সঞ্জয় টিমটাকে ঠিকঠাক সাজিয়েছেন। দু’টো উইংয়ে কাতসুমি আর সনিকে ব্যবহার করায় বিপক্ষকে ঝাপটা দেওয়া সহজ হচ্ছে। আর মাঠের বাইরে পর্দার পিছনে আসল কাজটি করেছেন টিমের ব্রাজিলিয়ান ফিজিও গার্সিয়া। যা পুরো দলটাকেও ফিট করে রেখেছে শেষ মিনিট পর্যন্ত দৌড়নোর জন্য। না হলে শেষ পাঁচ মিনিটে কাতসুমি আর সনি এ ভাবে গোলের সামনে পৌঁছতে পারতেন না। কাতসুমি যদি বেঙ্গালুরু কিপারকে কাটিয়েও ফাঁকা গোলে বল না ঢোকাতে পারেন তা হলে কী আর করা যাবে?

বেঙ্গালুরু টিমটা এমনিতে প্রচণ্ড শক্তিশালী। তিন বিদেশি-সহ সত্তর ভাগ টিম একই রয়েছে। অ্যাশলে ওয়েস্টউডের টিমের কোনও ফুটবলার আইএসএলে খেলেননি বলে প্রচণ্ড চনমনে। সেই দলটাই এ দিন কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল বাগানের দৌরাত্ম্যে। গোলের মধ্যে থাকা সুনীল ছেত্রী বা শন রুনি--- ছিলেন একেবারে ফ্যাকাসে। তা বলে বেঙ্গালুরু সুযোগ পায়নি তা নয়। পরে নামা রবিন সিংহের হেড পোস্টে লেগে ফিরেছে। দু’টো ভাল সেভ করেছেন শিল্টন পালও। তবুও বাগানে ফুল ফোটাতে পারলেন না বোয়া-সনিরা মূলত গোল করতে না পারায়।

ভাল খেলিয়াও ড্র— এটা গ্রুপ লিগের ম্যাচের ফল হিসাবে ক্ষতিকর। গতবার ফেড কাপে কোনও ম্যাচ না হেরে সঞ্জয় সেনের মহমেডান ছিটকে গিয়েছিল। এ বার সে রকম কিছু হবে না তো? ভুক্তভোগী সেই সঞ্জয় কোচ হিসাবে বাগানের প্রথম ম্যাচ খেলে ওঠার পর প্রশ্ন শুনে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন। “ওটা তিন দলের গ্রুপ ছিল, এ বার তো পাঁচ দলের। দু’টো দল সেমিফাইনালে যাবেই। আমরাও যাব।” আশাবাদী হতেই পারেন চেতলার ভদ্রলোক। অন্তত আজকের খেলা দেখে সেটা বলা যেতেই পারে।

মোহনবাগান: শিল্টন, প্রীতম, বেলো, আনোয়ার, শৌভিক, কাতসুমি, লালকমল, ডেনসন, সনি (সাবিথ) , বোয়া, বলবন্ত (জেজে)।

mohanbagan ratan chakraborty bengaluru armando colaco derek perera mariano dayas karim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy