Advertisement
০৮ মে ২০২৪
দিন্দা নিয়ে জোরালো সওয়াল রাঠৌরের কাছে

তৃতীয় সিমার আর নয়ের নিষ্ঠুরতায় রক্তাক্ত বাংলা

ভদ্রলোককে কর্নাটক টিমের সঙ্গে তো বটেই, বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতেও দেখা যায়। রবিন উথাপ্পাদের টিমের সঙ্গেও ভদ্রলোক আছেন। এ দিন খেলা শেষে বেরনোর সময় পরিচিত এক সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, নিশ্চয়ই খুব ভাল লাগছে? আপনার হাসিই তো সব বলে দিচ্ছে। বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত বেঙ্গালুরু নিবাসী ভদ্রলোককে বলতে শোনা গেল, “এনি ডে!”

দিন্দার সাতেও বিপর্যস্ত টিম-লক্ষ্মী। সোমবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

দিন্দার সাতেও বিপর্যস্ত টিম-লক্ষ্মী। সোমবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

ভদ্রলোককে কর্নাটক টিমের সঙ্গে তো বটেই, বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতেও দেখা যায়। রবিন উথাপ্পাদের টিমের সঙ্গেও ভদ্রলোক আছেন। এ দিন খেলা শেষে বেরনোর সময় পরিচিত এক সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, নিশ্চয়ই খুব ভাল লাগছে? আপনার হাসিই তো সব বলে দিচ্ছে। বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত বেঙ্গালুরু নিবাসী ভদ্রলোককে বলতে শোনা গেল, “এনি ডে!”

টিমটা সত্যিই এমন বলতে পারে, ম্যাচের দু’দিন বাকি থাকতেও সত্যিই এমন জয়ীর হাসি হাসতে পারে। গত দেড় বছরে ভারতীয় ক্রিকেটের মোটামুটি সমস্ত ঘরোয়া ট্রফি জিতেছে কর্নাটক। মুম্বইয়ের একাধিপত্যের গর্ব খর্ব করে শিঙা ফুঁকেছে নতুন সাম্রাজ্য গঠনের। বাংলা কতটাই বা কী করতে পারত? একটা চ্যাম্পিয়ন আর একটা উচ্চমধ্যবিত্ত টিমের মধ্যে যে পার্থক্য থাকে, কর্নাটক আর বাংলায় ঠিক সেটাই দেখা গেল। বাংলা স্ফুলিঙ্গ তৈরি করল, সেটা চ্যাম্পিয়নের আগ্রাসনে নিভে গেল। কর্নাটক স্ফুলিঙ্গ পেল আর বিপক্ষকে অগ্নিদগ্ধ করে চলে গেল।

এমন ‘অগ্নিদগ্ধ’ অবস্থা থেকে পুনর্জন্ম ঘটাতে বাংলাকে অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফলো-অনটা দেড়শো রানের ব্যবধানে হয়। বাংলাকে যদি এক পয়েন্ট নিশ্চিত করতে হয়, তা হলে ২৫৯ তুলতে হবে। তবেই দ্বিতীয় বার ব্যাট করতে পাঠানো যাবে কর্নাটককে। তখন ছ’পয়েন্ট হারানোটা বাঁচলেও বাঁচতে পারে।

বাংলা দ্বিতীয় দিনের শেষে ৬২-১। সিএবির টুর্নামেন্টে যাঁর ব্যাটিং দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গিয়েছেন ভিভিএস লক্ষ্মণ, সেই অরিন্দম দাস ড্রেসিংরুমে। রোহন বন্দ্যোপাধ্যায়কে সোমবার অন্তত খুব সুবিধের লাগল না। সুদীপ চট্টোপাধ্যায় আপাতত চেনা সুদীপ, কিন্তু আজ ইডেনের প্রথম এক ঘণ্টা তাঁর টেকনিকের পরীক্ষা নেবে। মনোজ তিওয়ারি, এলআরএস, শ্রীবৎস গোস্বামী, উদীয়মান প্রতিভা শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এঁরাও এর পর আছেন। কিন্তু একই সঙ্গে আছে চারশো রানের মারাত্মক মনস্তাত্বিক চাপটাও। বাংলা নির্বাচকদেরও মনে হচ্ছে কাজটা কঠিন, খুব কঠিন।

বাংলা পেসারদের যার দায় এবং দোষ একযোগে নিতে হবে। ৬৯-৫ থেকে যদি কোনও টিম ২৬০-৯-এ পৌঁছয়, তা হলে দায়টা বোলারদের। আবার সেখান থেকে যদি চারশো ওঠে, তা হলে সেই বোলিংয়ের সংজ্ঞা একমাত্র বঙ্গ পেসাররাই দিতে পারবেন। ভাবা যায়, কর্নাটকের ন’নম্বর ১৪৫ করে গেলেন! যেখানে কর্নাটকের দুশোর মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল, সেখানে শেষ উইকেটে যোগ হল ১৪৮! যা দশম উইকেটে রঞ্জিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ। শ্রেয়াস গোপাল বাস্তবে তো নয়ই, স্বপ্নেও ভাবেননি যে চারশো টপকানো যেতে পারে। ম্যাচের শেষে যা বললেন, তাতে আড়াইশো পর্যন্ত তাঁদের ধরা ছিল। মেঘলা সকালে দিন্দাদের সামলে বড়জোর তিনশো। কিন্তু চারশো? কর্নাটককে বাংলার আগাম ক্রিসমাস গিফ্ট ছাড়া কিছু বলা যাচ্ছে না।

অশোক দিন্দা ছাড়া বাকিরা যে লাইন-লেংথে গোটা দিন ফেলে গেলেন, দু’দিন মিলিয়ে যে ভাবে পেসাররা টানা পাঁচটা সেশন বাংলাকে হারিয়ে গেলেন, এক কথায় জঘন্য। অথচ দিন্দা দিনের চতুর্থ বলেই বিনয় কুমারকে তুলে নিয়েছিলেন। বেঙ্গল এক্সপ্রেস শেষ পর্যন্ত থামলেন ৮৭ রানে সাতটা তুলে। কিন্তু তাঁর সতীর্থ পেসারদের হাল এমন যে, উইকেট না পেলে রানটাও আটকাতে পারেন না। সবচেয়ে করুণ অবস্থা তৃতীয় সিমার শিবশঙ্কর পালের। ফিল্ডিংয়ে তাঁকে মাঠের দূর-দূরান্তে ঠেলতে হচ্ছে। নতুন কী পুরনো, যে বলই দেওয়া হোক, হতাশা ছাড়া অধিনায়ককে কিছু দিতে পারছেন না। শিবের প্রথম ইনিংসের হিসেব ২০-৬-৫৮-০। শোনা গেল তিনি আরও একটা সুযোগ পাবেন। কিন্তু শিবের অতীত মাথায় রেখেও বলতে হবে, সেটা ঘটলে সৌরভ সরকারের প্রতি কিছুটা অন্যায়ই হবে।

ভাল তৃতীয় সিমারের অভাব যে বাংলাকে ভোগালো, ঘনিষ্ঠমহলে জাতীয় নির্বাচক বিক্রম রাঠৌরও বলে গেলেন। বাংলা নির্বাচক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় রাঠৌর নাকি আরও বলেন, দিন্দার বোলিং তাঁর ভাল লেগেছে। বিশেষ করে প্রথম দিনের বোলিং। শোনা গেল, বরুণ অ্যারনের বদলে দিন্দা জাতীয় দলে কেন নয়, সে প্রশ্নও রাঠৌরকে করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ঘরোয়া ক্রিকেটে দিন্দার অর্ধেক উইকেটও নেই অ্যারনের। পরপর তিন ম্যাচে দিন্দা এত উইকেট পেলেন। তার পরেও কেন ধবল কুলকার্নিকে অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইট টিকিট দেওয়া হল? রাঠৌর নাকি ইঙ্গিত দিয়েছেন, দিন্দা নজরের বাইরে চলে যাননি।

তবে মঙ্গলবার দিন্দার উপর আর কিছু নির্ভর করে থাকবে না। বাংলার ভাগ্য ঠিক করবে বঙ্গ ব্যাটিং। যাদের জন্য এ দিন দেখা গেল স্লিপ কর্ডনে পাঁচ জন ছেড়ে রেখেছেন বিনয়। ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে আরও এক। বল প্যাডে লাগলেই খুনে চিৎকার, ব্যাটসম্যানকে মানসিক চাপে ফেলতে কড়া চোখে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকা, সবই চলছে।

চলবেও। শেষ উইকেটে ১৪৮-এর ক্রিসমাস উপহার পেলে রিটার্ন গিফ্ট তো এমনই হবে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
কর্নাটক ৪০৮ (গোপাল ১৪৫, গৌতম ৬৩, দিন্দা ৭-৮৭, বীরপ্রতাপ ৩-৯৮)
বাংলা ৬২-১ (রোহন ২৭ ব্যাটিং)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE