সমাপ্তি অনুষ্ঠান জমজমাট। শেষ হল গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমস। ছবি: এএফপি
বিতর্কে শুরু, বিতর্কে শেষ। দু’দিনের মধ্যেই রহস্যজনক ভাবে পড়ল যবনিকা। গ্লাসগোয় আইওএ মহাসচিব রাজীব মেটা আর কুস্তির রেফারি বীরেন্দ্র মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিল পুলিশ।
মদ্যপান করে গাড়ি চালানো আর আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার অভিযোগ ছিল মেটার বিরুদ্ধে। বীরেন্দ্রর উপর আনা হয়েছিল যৌন হেনস্থার অভিযোগ। যে জন্য প্রায় ২৪ ঘণ্টার বেশি পুলিশ হেফাজতে কাটান দু’জন। কমনওয়েলথ গেমসের মতো আসরে দেশের সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে তাঁদের গ্রেফতারি নিয়ে যেমন বিতর্কের ঝড় উঠেছিল, তেমনই হঠাৎ ছাড়া পাওয়া নিয়েও বিতর্ক কম নেই। প্রাক্তন আইপিএস অফিসার কিরণ বেদির টুইট, ‘প্রমাণের অভাব মানেই গ্রেফতারের সময় নির্দোষ ছিল এমনটা কিন্তু সব সময় হয় না...প্রমাণটা ব্যাখ্যা করার ভার স্কটিশ পুলিশের উপরই বর্তায়! কোর্টের কাছে পুলিশের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নাও লাগতে পারে! তার মানে এই নয় গ্রেফতার করাটা ভুল।’
মেটার অবশ্য সাফাই, “ঘটনাটার ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। মদ্যপান করে গাড়ি চালাইনি। পরীক্ষায় (মদ্যপানের) কিছু পাওয়া যায়নি। পুলিশ যা প্রমাণ দেখিয়েছিল সেটা গ্রহণ না করার জন্য কোর্টকে ধন্যবাদ।” তা হল ঘটনাটা কী হয়েছিল? তিনি বলেন, “একটা পার্টি থেকে বেরিয়ে এসে অন্য কোথাও যাচ্ছিলাম। তখনই দুর্ঘটনাটা ঘটে তবে তার জন্য আমি দায়ী নই। অন্য গাড়িতে থাকা মহিলা রং সাইডে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। মেডিক্যাল রিপোর্টেও কিছু পাওয়া যায়নি। তাই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যায়নি।”
সোমবার গ্লাসগোর শেরিফ কোর্টে দু’জনকে প্রথমে তোলা হয় চার নম্বর ঘরে। সেখান থেকে ফের তিন নম্বর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে গুরুতর অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়। তখন আন্দাজ করা হচ্ছিল, জামিন নাও পেতে পারেন মেটারা। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই নাটকীয় পট পরিবতর্ন। গ্লাসগোয় ভারতীয় দূতাবাস জানিয়ে দেয়, স্কটল্যান্ড পুলিশ কোর্টে তোলার মতো যথেষ্ট প্রমাণ না থাকায় দুই অভিযুক্তকেই ছেড়ে দিচ্ছে। কোর্টে ছিলেন উত্তরপ্রদেশ অলিম্পিক সংস্থার মহাসচিব আনন্দেশ্বর পান্ডে। তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ অভিযোগ আনার মতো কিছু পায়নি। রাজীব মেটা বন্ধুর গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তখনই পার্কিং লট থেকে বেরনোর সময় মামুলি দুর্ঘটনা ঘটেছিল।”
এরপরই প্রশ্ন উঠে যায়, তা হলে রাজীব মেটা আর বীরেন্দ্রকে যথেষ্ট প্রমাণ না থাকলে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড গ্রেফতার কেন করবে? তার উপর বীরেন্দ্রকে ইতিমধ্যেই জাতীয় কুস্তি সংস্থা সাসপেন্ড করে দিয়েছে। রাজীব মেটা তো গ্রেফতার হয়েছিলেন হোটেল থেকে। প্রমাণ না থাকলেও গ্রেফতার করে কোর্টে হাস্যাস্পদ হওয়ার ঝুঁকিই বা কেন নেবে পুলিশ?
সকালে আবার অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সংস্থার যুগ্মসচিব এসএম মালি। একটি টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেছিলেন, ‘গ্লাসগোয় যা হয়েছে সেটা এমন কোনও বড় ব্যাপার নয়। ভারতে এমন ঘটনা হামেশাই ঘটে।’ যা শোনার পর অনেকে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন। তবে অশ্বিনী নাচাপ্পার মতো কেউ কেউ মনে করেন, আইওএ-তে এটা স্বাভাবিক। যেখানে একটা ‘পচা ফল’-এর জায়গা নেয় আর একটা ‘পচা ফল’। ‘কিছুই বদলায়নি আইওএ-তে’ পরিষ্কার বলে দেন প্রাক্তন অ্যাথলিট নাচাপ্পা।
সবচেয়ে বড় বিতর্কটা দেখা দিয়েছিল রাজীব মেটার বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ ওঠার পরও তাঁকে আইওএ কর্তারা সাসপেন্ড না করায়। তার উপর এসএম মালির মতো কারও কারও পরোক্ষে মহাসচিবের পাশে থাকার ইঙ্গিতও তো ছিল।
বীরেন্দ্র মালিকের ক্ষেত্রে অবশ্য তাঁকে সাসপেন্ড করতে সময় নেয়নি জাতীয় কুস্তি সংস্থা। রবিবারই এই সিদ্ধান্তটা নেওয়া হত। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় কিছু করা যায়নি। সোমবার প্রেসিডেন্ট সাসপেনশনের নোটিস জারি করেন। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হলে বড়সড় শাস্তির মুখে পড়তে পারতেন বীরেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy