Advertisement
১৮ মে ২০২৪

দিল্লি-জয়ে নামার আগে হাবাস যেন ভাঙবেন তবু মচকাবেন না

রবের্তো কার্লোসের প্রবাদে পরিণত সেই বাঁক খেয়ে আছড়ে পড়া ফ্রি কিক কখন দেখবে বৃহস্পতিবারের যুবভারতী? বিশ্ব ফুটবলের ‘বুলেট ম্যান’ আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি মাঠে নামবেনই এবং সেটা দ্বিতীয়ার্ধে। কিন্তু মাহেন্দ্রক্ষণটা কখন তা বলেননি।

যুবভারতীতে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি হিউমদের। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

যুবভারতীতে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি হিউমদের। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:১৯
Share: Save:

রবের্তো কার্লোসের প্রবাদে পরিণত সেই বাঁক খেয়ে আছড়ে পড়া ফ্রি কিক কখন দেখবে বৃহস্পতিবারের যুবভারতী?

বিশ্ব ফুটবলের ‘বুলেট ম্যান’ আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি মাঠে নামবেনই এবং সেটা দ্বিতীয়ার্ধে। কিন্তু মাহেন্দ্রক্ষণটা কখন তা বলেননি।

দেল পিয়েরো গত বার এই ম্যাচেই প্রচুর হইচই করে এসে ‘স্তব্ধতার গান’ শুনিয়ে হতাশ করেছিলেন আশি হাজারের স্টেডিয়ামকে। এ বার বিয়াল্লিশের প্রাক্তন ব্রাজিলিয়ান মহাতারকা কী করবেন সেটা সময় বলবে। তবে ম্যাচের আগের দিন বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা সাইড ব্যাককে খুব কাছ থেকে দেখে মনে হল, বিপক্ষ কোচ আন্তোনিও হাবাসের মতোই দিল্লির মার্কি-কাম-ম্যানেজার একটু বেশিই সিরিয়াস।

সেটা কেমন? দিল্লি টিমের অন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অনুশীলনে প্রায়ই টানা ফ্রি কিক মারেন কার্লোস। এবং যখন মারেন তখন তাঁর দলের কোনও কিপারই গোলের নীচে নাকি দাঁড়াতে চান না।

যুবভারতীর ম্যাচে স্প্যানিশ কিপার জুয়ান, না স্বদেশি অমরিন্দর— কে থাকবেন আটলেটিকো দে কলকাতার গোলে? অনুশীলনে হাবাস ধোঁয়াশা রেখেছেন। দেখা গেল, পালা করে তাঁর দুই গোলকিপারকেই ফ্রি কিক আটকানোর কৌশল শেখাচ্ছেন এটিকে-র হেডমাস্টার।

এমনিতে কার্লোসের সঙ্গে হাবাসের লড়াইয়ের ইতিহাস স্প্যানিশ কোচের কাছে সুখদায়ক নয়।

লা লিগা থেকে কোপা আমেরিকা। দু’বার দেখা হয়েছে দু’জনের। কোচ এবং ফুটবলার হিসেবে। দু’বারই জিততে পারেননি হাবাস।

ভ্যালেন্সিয়ার কোচ থাকার সময় হাবাস এক বার লা লিগায় মুখোমুখি হয়েছিলেন রবের্তো কার্লোসের রিয়াল মাদ্রিদের। ১-১ ড্র।

অন্য বার হাবাস বলিভিয়ার কোচ থাকার সময় কোপা আমেরিকায় মুখোমুখি হয়েছিলেন মারিও জাগালোর ব্রাজিলের। সেই টিমে ছিলেন কার্লোস। ফল হাবাসের বিপক্ষে ১-৩।

তার পর হয়তো আবার দেখা এ দিন রাজারহাটের পাঁচতারা হোটেলের লবিতে। তবে একেবারে অন্য মঞ্চে। দু’জনেই এখন কোচের ভূমিকায়। তা-ও আবার এমন একটা দেশের পেশাদার লিগে, বিশ্ব ফুটবলে যাদের সেই অর্থে কোনও নম্বর নেই। ফিফায় অবস্থান ১৬৭-তে।

রাশভারী হাবাসকেই দেখা গেল কার্লোসের দিকে এগিয়ে যেতে। সৌজন্য বিনিময় করতে। এবং দিল্লি ডায়নামোস কোচের প্রথম প্রশ্নটাই এল মজা আর কটাক্ষ মিশিয়ে! ‘‘আরে, মিস্টার হাবাস? আপনার দেখছি দারুণ পরিবর্তন হয়েছে! হেয়ারস্টাইলটাও পাল্টে ফেলেছেন!’’

শুনে কলকাতা কোচ গম্ভীর হতে হতেও হেসে ফেললেন। তার পর নিজের পুরো কামানো মাথায় হাত বুলিয়ে পাল্টা বললেন, ‘‘ঠিকই। সত্যিই, লা লিগার সময়ের মতো এখন আমার হেয়ারস্টাইল নেই!’’ তার পরেই দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরলেন। ফটোগ্রাফারদের দাবি মিটিয়ে চলে গেলেন নিজেদের গন্তব্যে।

মুহূর্তের ঝলক ও মজার মোড়কের কটাক্ষতেই ধরা পড়ছিল কলকাতা বনাম দিল্লি কতটা হাইভোল্টেজ হতে পারে, আইএসএলের প্রথম পাঁচে থাকা দু’দলের কাছে।

হাবাসের কলকাতা দল থেকে প্রায় প্রতিদিন কমে যাচ্ছে এক জন করে প্রথম একাদশের ফুটবলার। যা দেখে ছোটবেলায় পড়া ‘হারাধনের ছেলে’ কমে যাওয়ার গল্প মনে পড়তে বাধ্য। হেলডার পস্টিগার পর জোসেমিও মাদ্রিদ ফেরার পথে। আরাতা ইজুমির পর জাভি লারাও ম্যাচের বাইরে চলে গেলেন এ দিন। নাদং ভুটিয়া? তিনিও তো অনুশীলনে হেঁটে গেলেন সারাক্ষণ! অর্ণব মণ্ডল হাফ ফিট। কলকাতার বেশির ভাগ কর্তাদের সঙ্গে এখন কথা বললেই শুনতে হচ্ছে, আর্তনাদ!

ডাকাবুকো এবং দাদাগিরির জন্য পরিচিত কলকাতার চিফ কোচ কি দিল্লির সামনে পড়ে একটু টলমল? না হলে দেড় বছরের কলকাতার কোচিং জীবনে প্রথম বার কেন হাবাসের মুখ থেকে বেরোবে, ‘‘দিল্লি নিয়ে ভাবার সময় নেই। আমার টিমের সমস্যা সামলাতেই সব সময় চলে যাচ্ছে।’’ তার পরেই অবশ্য বলছেন, ‘‘এ নেই, ও নেই বলে তো আর কাঁদতে বসতে পারি না। যারা আছে তাদের নিয়েই তিন পয়েন্টের জন্য লড়ব। এখনও ন’টা ম্যাচ রয়েছে।’’ টিমের সঙ্গে জড়িত অনেকের অবশ্য দাবি, এটা হাবাসের নতুন স্ট্র্যাটেজি। ম্যাচের আগের দিন বিপক্ষকে আত্মতুষ্ট রাখার কৌশল। নইলে আসল সময়ের জন্য তাঁর মগজাস্ত্রে তূণ নাকি তৈরি আছে।

দলের ‘মিনি হাসপাতাল’ হয়ে ওঠা অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে কলকাতার কর্তারা আশার আলো দেখছেন শুধু হাবাসের মতো ‘ডাক্তার’ রয়েছেন বলেই। এক কর্তা তো বলে দিলেন, ‘‘হাবাসের কপালটা দেশপ্রিয় পার্কের দুর্গার চেয়েও বোধহয় বড়। দেখবেন কী ভাবে ম্যাচটা ঠিক বার করে আনবেন। মনে আছে, গতবার এ রকম গেল গেল-র মধ্যেই চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন! লোকটা যেন ম্যাজিক জানেন!’’

দিল্লি কোচ কার্লোস আইএসএল টু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদারের তালিকায় অবশ্য কলকাতার নাম রাখেননি। পুণে, গোয়া, চেন্নাইয়ানের সঙ্গে নিজেদের রেখেছেন। রাতে অনুশীলন সেরে বেরোনোর সময় হাবাসের কাছে একান্তে তোলা হয় বিষয়টা। কলকাতার কোচের মুখ থেকে সামান্যতম সৌজন্য বেরোয়নি কার্লোসের জন্য। ‘‘গত বার জিকোও অনেক কথা বলেছিল। কোনও টিমই সব ম্যাচ জেতে না। আমি কিন্তু হেরে যাওয়ার লোক নই। দু’টো ম্যাচ হারার পর সবাই যে ভাবে আমাদের বাতিল করে দিচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। দিল্লিকে হারালেই কিন্তু দেখবেন অনেক কিছু বদলে যাবে।’’

আসলে অন্য অনেকের মতোই হাবাসের চোখ এড়াইনি স্টেডিয়ামের বাইরের অন্য রকমের ছবিটা। ছয় নম্বর ম্যাচ খেলতে নামছে তাঁর টিম। অথচ টিম-বাস ঘিরে গত বারের মতো সেই কলরব নেই ঘরের মাঠেও। ফুটবলাররা স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরোলে সেলফি তোলার সেই আগের আকুতি নেই। কর্তাদের দৌড়োদৌড়ি উধাও। লিগ টেবলের হিসেবে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ অথচ টিকিটের হাহাকার নেই!

হাবাসের টিমের অনেক ‘নেই’ যেন বদলে দিয়েছে আবহটাই।

তাই কার্লোস যখন অনুশীলনের পর হোটেলের সুইমিং পুলের ধারে তুরীয় মেজাজে, তখন বাইপাসের ধারের অন্য হোটেলে হাবাস জাদুদণ্ডের (পড়তে হবে কার্যকরী প্লেয়ার) খোঁজে সহকারীদের নিয়ে কার্যত বিনিদ্র।

বিশ্ব ফুটবলের তৃতীয় বিশ্বে এসে রবের্তো কার্লোস তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যবধান ২-০ বাড়িয়ে নেবেন, এটা যে কিছুতেই মেনে নিতে পারবেন না কলকাতার ‘বিগ বস’।

সুনীলের হ্যাটট্রিক

সংবাদ সংস্থা • মুম্বই

মরসুমের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকের আলোয় মুম্বই সিটি এফসিকে দুরন্ত জয় এনে দিলেন সুনীল ছেত্রী। বুধবার সুনীলের দাপটে মুম্বই ঘরের মাঠে ৫-১ হারাল নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসিকে। সুনীলের দুটি গোল পেনাল্টি থেকে এলেও গোটা ম্যাচে সতীর্থ সনি নর্ডি ও সুভাষ সিংহের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়াই এ দিন মুম্বইকে জেতানোর পিছনে প্রধান ভূমিকা নিল। এ দিনের তিন গোলের পর টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোল শিকারির তালিকায় শীর্ষে উঠে গেলেন সুনীল। তাঁর মোট গোলের সংখ্যা দাঁড়াল ৬। মুম্বইয়ের বাকি দুটি গোল সনি আর ক্যাপ্টেন ফ্রাঞ্জ বার্তিনের। এই নিয়ে ঘরের মাঠে তিনটি জয়ের সুবাদে আপাতত পয়েন্ট তালিকায় দু’নম্বরে মুম্বই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

isl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE