ম্যাচ শেষে। মেক্সিকোর গোলরক্ষক গুলেরমো ওচোয়া। ছবি: এএফপি।
যে ছ’ফুটিয়া ‘দেওয়ালের’ সামনে আটকে গিয়েছিল নেইমার-অস্কারদের যাবতীয় আক্রমণ, তাঁর কিন্তু ব্রাজিল ম্যাচে খেলার কথাই ছিল না প্রথমে। একেবারে শেষ মুহূর্তে গুলেরমো ওচোয়াকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেন মেক্সিকো কোচ মিগেল হেরেরা।
“আমি ঠিক করতে পারছিলাম না, কাকে নামাব। আমার হাতে তিনটে গোলকিপার এবং তিন জনই খুব ভাল। সে জন্যই দোটানায় ছিলাম,” ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলেন হেরেরা। তা হলে কখন ঠিক করেন ওচোয়াকে নামাবেন? কোচের ব্যাখ্যা, “একেবারে শেষ মুহূতের্। আমার গোলকিপার কোচের সঙ্গে কথা বলি। ও আমায় বলে, মেমোকে নামাতে। কারণ ও চাপটা বেশি নিতে পারে।”
তারপরের ঘটনার সাক্ষী গোটা ফুটবল বিশ্ব। নেইমার, অস্কারদের ছাপিয়ে নায়ক হয়ে যান একজনই। মেমো। যাঁকে ফুটবল দুনিয়া এখন চিনছে গুলেরমো ওচোয়া নামে।
ম্যাচের সেরা হওয়া এখনও মেক্সিকোর প্রিয় ‘মেমোর’ কাছে স্বপ্নের মতোই। বলেন, “ভাবতেই পারিনি কোনও দিন এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যাব। মনে হচ্ছে এখনও স্বপ্ন দেখছি।” আরও বলছেন, “কোনও সন্দেহ নেই এটাই আমার ফুটবল জীবনের সেরা ম্যাচ। বিশ্বকাপে সমর্থকদের সামনে এমন পারফরম্যান্স করার থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না।”
২০০৫ থেকে মেক্সিকো জার্সিতে খেলছেন তিনি। অভিষেক হয় হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে। ২০০৬ ও ২০১০ বিশ্বকাপের দলে থাকলেও কোনও ম্যাচ খেলেননি। এখানে দুটো ম্যাচ খেলে এখনও গোল খাননি। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে স্বপ্নের পারফরম্যান্স নিজের পরিবারকে উৎসর্গ করলেন ওচোয়া। বলছেন, “এই পারফরম্যান্স আমার পরিবারের জন্য। আমার ভাল আর খারাপ সময়ে ওরা পাশে ছিল। প্রতি ম্যাচে আমার যত না টেনশন হয়, তার থেকে বেশি চাপে থাকে আমার পরিবার।”
ব্রাজিলের চারটে নিশ্চিত গোল আটকে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে ম্যাচের সেরা মুহূর্ত হিসাবে বেছে নিচ্ছেন নেইমারের হেডটা আটকানো। যা তাঁর মতে, কঠোর প্র্যাকটিস আর সঠিক রিফ্লেক্সের উপহার। “নেইমারের হেড বাঁচানোটাই সেরা সেভ ছিল। ওটা সবথেকে কঠিন ছিল কারণ অনেকটা ঝাঁপাতে হয় বলটা বাঁচানোর জন্য।” সঙ্গে ওচোয়া যোগ করেন, “হেডটা খুব ভাল মেরেছিল নেইমার। ওই সময় আর কিছু ভাবছিলাম না। আপনাআপনি লাফালাম। রিফ্লেক্সটা ঠিকঠাক ছিল বলে হাতটা লাগাতে পেরেছিলাম।”
ম্যাচ শেষে দলের সেরা অস্ত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কোচ হেরেরা বলেন, “ক্যাম্পোসের পরে এটাই কোনও মেক্সিকান গোলকিপারের সেরা পারফরম্যান্স। ক্যাম্পোস বিশ্বমানের ছিলেন। কিন্তু মেমো দলকে ভরসা দেয়। ও গোলপোস্টের নীচে থাকা মানে আলাদা একটা আত্মবিশ্বাস থাকে দলে।”
মঙ্গলবার রাতের পরে মেমোর ভক্তের তালিকা কিন্তু বেড়েই চলেছে। যার মধ্যে আছেন ব্রাজিল কোচ লুই ফিলিপ স্কোলারিও। বলেন, “আজ আমরা খুব খারাপ খেলিনি। কিন্তু একটা ফুটবলারের কাছেই আটকে গেলাম। যার নাম ওচোয়া।”
মেমোর এই একার কীর্তি নতুন কিছু নয়। ফরাসি লিগে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, এডিনসন কাভানির মতো তারকারাও আটকে গিয়েছেন ওচোয়ার কাছে। কিন্তু বিশ্বমঞ্চ আলোড়িত করা এই গোলকিপারের হাতে এই মুহূর্তে কোনও ক্লাব নেই। ‘ফ্রি-এজেন্ট’ হিসাবেই বিশ্বকাপে খেলতে এসেছেন ওচোয়া। কিন্তু ব্রাজিল ম্যাচের পরে শোনা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই তাঁর এজেন্টের ফোন ব্যস্ত থাকছে বড় ক্লাবগুলোর প্রস্তাবে। শোনা যাচ্ছে, আর্সেনাল, লিভারপুলের মতো ইপিএলের বড় ক্লাবগুলো এখনই যোগাযোগ করা শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy