Advertisement
E-Paper

নাদাল-স্টেইনের সংসার ঘুরে বঙ্গ ক্রিকেটে ঢুকতে চান ‘ক্রিকেট নাট’

এবি ডে’ভিলিয়ার্সের অদ্ভুত একটা স্বভাব আছে। ব্যাট করতে নামলে নাকি জীবনে স্কোরবোর্ড দেখবেন না, ভুলতে চেষ্টা করবেন প্রেক্ষাপট সহজ না কঠিন, বা বল করতে কে আসছে! তাঁর মতো ঠান্ডা মাথার নিপাট ভদ্রলোকও নাকি খুব কম দেখা যায়। ম্যাচের দিন সকালেও মেসেজ করলে ‘স্মাইলি’ সমেত উত্তর আসে।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০৩:৩৩
গ্রেম স্মিথকে নিয়ে নেপথ্যের নায়ক প্রসন্ন।

গ্রেম স্মিথকে নিয়ে নেপথ্যের নায়ক প্রসন্ন।

এবি ডে’ভিলিয়ার্সের অদ্ভুত একটা স্বভাব আছে। ব্যাট করতে নামলে নাকি জীবনে স্কোরবোর্ড দেখবেন না, ভুলতে চেষ্টা করবেন প্রেক্ষাপট সহজ না কঠিন, বা বল করতে কে আসছে! তাঁর মতো ঠান্ডা মাথার নিপাট ভদ্রলোকও নাকি খুব কম দেখা যায়। ম্যাচের দিন সকালেও মেসেজ করলে ‘স্মাইলি’ সমেত উত্তর আসে। ক্রিকেট ও ব্যক্তিগত জীবনে ডে’ভিলিয়ার্সের রাগারাগি বিরলতম ঘটনার শ্রেণিভুক্ত। ব্যতিক্রম নাকি একবারই হয়েছিল। শারজায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টিম ১৭০ অল আউট হয়ে যাওয়ার পর। বিরতিতে ড্রেসিংরুমে ঢুকে উত্তেজিত এবি বলে দিয়েছিলেন, “বয়েজ, নাউ আই নিড ক্যারেক্টার ফ্রম ইউ। ওদের একশো ষাটের মধ্যে ধ্বংস করে তবে মাঠ ছাড়তে হবে।”

ডেল স্টেইনকে খুনে চোখমুখ, পাথুরে বডি ল্যাঙ্গোয়েজ নিয়ে ব্যাটসম্যান-বধের লক্ষ্যে বল হাতে ছুটে আসতে তো সবাই দেখেছেন, দেখছেন। কিন্তু ক’জন জানেন, স্টেইন-গানের অন্তরালে একটা সংবেদনশীল মননও লুকিয়ে আছে? যে স্টেইনকে বাইশ গজে খেপিয়ে দিলে ব্যাটসম্যানের হাসপাতালে বেডের বন্দোবস্ত হয়ে যায়, সেই একই স্টেইন স্বল্প পরিচিত কারও চিকিৎসার জন্য স্বয়ং একটা হাসপাতালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর হয়ে যেতে নাকি দু’মিনিটও ভাবেন না! পরে বরং স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে ফোন করে বলবেন, “বুঝলে, আমার এখন বেশ টাকাপয়সা হয়েছে। আর্থিক যে কোনও দরকারে বোলো।”

রাফায়েল নাদালের দৈনন্দিন নির্ঘণ্টটা কী? জিম সেশন আর প্র্যাকটিসেই বেরিয়ে যায় বারো-তেরো ঘণ্টা। ও হ্যাঁ, কোনও নির্দিষ্ট এক জনের থেকে পরামর্শ নেওয়া রাফার নাকি স্বভাববিরুদ্ধ। তার জন্য টিম আছে। তারা একযোগে বললে, নাদাল শোনেন।

ডাগআউটে সতীর্থদের টেনশন করাটা নাকি বিরাট কোহলির তীব্র অপছন্দের। প্রেশার ম্যাচে সেটা আরও বাড়লে বিরাট পরিষ্কার বার্তা পাঠান, “ওদের প্যানিক করাটা বন্ধ করতে বলো তো। আমি তো আছি। একাই ম্যাচ শেষ করে আসব!”

এরোসিটি-র জেডব্লিউ ম্যারিয়টের ঘরের বক্তা যিনি, তাঁকে দেখলে কিছুতেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হবে না যে, বিগত দশ বছরে ক্রীড়াজগতের ভিন্ন ক্ষেত্রের বৈচিত্র এত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখা হয়ে গিয়েছে। ক্ষেত্র বলতে তিনটে। ক্রিকেট। আন্তর্জাতিক টেনিস। এবং ভারতীয় হকি টিম। পেশায় তামিল ভদ্রলোক ‘পারফরম্যান্স অ্যান্ড টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট’।

নাম প্রসন্ন আগোরাম। বর্তমান আইপিএল ঠিকানা দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত স্থায়ী ঠিকানা স্টেইন-ডে’ভিলিয়ার্সের দক্ষিণ আফ্রিকা ড্রেসিংরুম। চুক্তি শেষে যে স্টেশনে নামতে চান বঙ্গ ক্রিকেট!

“ভিডিও অ্যানালিস্টের সঙ্গে আমার তফাত হল আমি রেকর্ডিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে টেকনিক্যাল, ট্যাকটিক্যাল, স্ট্র্যাটেজিক্যাল পয়েন্ট দেব। আমি বলে দিতে পারব ডেথে মর্নি মর্কেল নর্মাল ডেলিভারি ক’টা করবে। বা বাউন্ডারি খেয়ে গেলে তার পরের বলটা কী করতে পারে,” বলছিলেন প্রসন্ন। “আমার জীবনটাও বড় অদ্ভুত। কোচ জোয়াকিম কার্ভালহো যখন ইন্ডিয়ান হকি টিমের জন্য আমাকে ডাকলেন, হকির বিন্দুবিসর্গও জানতাম না। অথচ আমাকে জয়েন করেই জার্মানি যেতে হল। হকি খেলাটা শিখেছিলাম প্লেনে। কার্ভালহো ফ্লাইটে বুঝিয়েছিলেন কাকে বলে পেনাল্টি কর্নার।”

শুধু তাই নয়, ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা-র সঙ্গে যোগাযোগও আশ্চর্য ভাবে। ক্রিকেট বিশ্বে সম্ভবত তিনিই একমাত্র সাপোর্ট স্টাফ যিনি কোনও উপমহাদেশের বাইরের কোনও আন্তর্জাতিক টিমে যুক্ত। জাতীয় হকি দলের সঙ্গে আঠারো মাসের ‘মধুচন্দ্রিমা’-র পরিসমাপ্তি সুখের হয়নি। পাকিস্তানের সোহেল আব্বাসের ঘাতক পেনাল্টি কর্নার আটকানোর সমাধান দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু বেজিং অলিম্পিকে ভারত যোগ্যতাঅর্জন না করতে পারায় ফিরে আসেন ক্রিকেটে। যোগ দেন আরসিবি-তে। সেখানেই তখন রে জেনিংস, স্টেইন, ডে’ভিলিয়ার্সদের উদ্যোগে দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ। এবং আধ ঘণ্টার ইন্টারভিউ শেষে সসম্মানে পাশ।

“ডে’ভিলিয়ার্স, স্টেইনকে তার পর ভাল করে চিনেছি। বিরাটকে আবার ওর পনেরো বছর বয়স থেকে দেখছি। স্টেইন আর বিরাট, দু’জনেরই দু’টো আলাদা সত্ত্বা আছে। স্টেইনের হাসপাতালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর হয়ে যাওয়ার ঘটনাটা আমার সঙ্গেই হয়েছিল। চোখে সমস্যা ছিল। চিকিৎসার টাকা ছিল না। স্টেইন দু’টোরই সমাধান করে দিয়েছিল। বিরাটও মাঠের বাইরে একেবারে অন্য মানুষ। আপনি যদি ওকে বলেন, তোমার এটা ভুল হয়েছে, শুনবে। বলবে না, শুনুন আপনার চেয়ে আমি ক্রিকেটটা বেশি খেলেছি। ওটা আমাকেই ভাবতে দিন। নাদালের সঙ্গেই সবচেয়ে কম সময় কেটেছে আমার। পাঁচ-ছ’মাস,” বলছেন প্রসন্ন। ২০১৫ পর্যন্ত প্রসন্নর দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের সঙ্গে চুুক্তি আছে। মিটলে তিনি ঢুকতে চান বঙ্গ ক্রিকেটে।

কেন? “বেঙ্গল ভাল টিম। কিন্তু ফাইনাল হার্ডলটা টপকাতে পারছে না। আমি মুম্বইয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পাঁচ বার ভাবব। কারণ ওরা এমনিই চ্যাম্পিয়ন, তাই কোনও চ্যালেঞ্জ নেই। কিন্তু বাংলায় আছে। আপনাদের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে।” বঙ্গ অধিনায়কও প্রবল ভাবে চাইছেন প্রসন্নকে বাংলায় নিয়ে আসতে। যিনি নিজের ছেলের নাম রেখেছেন সচিন, মেয়ের লারা! যাঁকে নিজের বই ‘ইন্ডিয়ান সামার’-এ প্রাক্তন ভারতীয় কোচ জন রাইট অভিহিত করেছেন ‘ক্রিকেট নাট’ বলে।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ভিশন ২০২০’-র সংসারে ইনি কি খুব বেমানান ঠেকবেন?

rajarshi gangopadhyay ipltag
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy