Advertisement
E-Paper

পিচে কোদাল নামিয়েও শেষে স্ট্র্যাটেজি নিয়ে সেই ধোঁয়াশা

রঞ্জি ট্রফির মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে মহানাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল বঙ্গ ক্রিকেটে। যেখানে রেলওয়েজ ম্যাচের জন্য বরাদ্দ দু’টো পিচের একটাকে ডিজাইনার বানানোর প্রবল চেষ্টা চলল মঙ্গলবার গোটা দিন ধরে। তার পরেও সেই পিচে খেলা হবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রাখা হল। যেখানে ক্রিকেটারদের পর বাংলার নির্বাচকদের মুখেও এ বার তালাচাবির বন্দোবস্ত করে ফেলল সিএবি!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৪:০৭
বাংলা-রেল রঞ্জি ম্যাচের জন্য দু’টো পিচ তৈরি ইডেনে। কোন পিচে খেলা হবে তা নিয়ে জট। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

বাংলা-রেল রঞ্জি ম্যাচের জন্য দু’টো পিচ তৈরি ইডেনে। কোন পিচে খেলা হবে তা নিয়ে জট। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

রঞ্জি ট্রফির মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে মহানাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল বঙ্গ ক্রিকেটে।

যেখানে রেলওয়েজ ম্যাচের জন্য বরাদ্দ দু’টো পিচের একটাকে ডিজাইনার বানানোর প্রবল চেষ্টা চলল মঙ্গলবার গোটা দিন ধরে। তার পরেও সেই পিচে খেলা হবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রাখা হল। যেখানে ক্রিকেটারদের পর বাংলার নির্বাচকদের মুখেও এ বার তালাচাবির বন্দোবস্ত করে ফেলল সিএবি!

গত বার থেকেই দেখা যাচ্ছে রঞ্জিতে বাংলা বনাম রেল মানে প্রথমে স্ফুলিঙ্গ, শেষে আগ্নেয়গিরিতে রূপান্তর। গত মরসুমে রেলের মাঠে প্রথমে ‘মানকাডিং’-এর মুখে পড়তে হয়েছিল বাংলাকে। ‘প্রতিশোধ’টা রঞ্জির কোয়ার্টার ফাইনাল যুদ্ধে তুলেছিল ইডেন, তত্‌কালীন রেল অধিনায়ক মুরলী কার্তিককে বল-বিকৃতির লজ্জায় ডুবিয়ে। ইডেন-দর্শকের উন্মত্ত ব্যারাকিংয়ের সামনে ফেলে। চলতি রঞ্জি মরসুমে রেল আসছে, কিন্তু কোনও কার্তিক আর নেই। ‘ব্রাত্য’ বঙ্গসন্তান এক নয়, তিন জন আছেন। অরিন্দম ঘোষের সঙ্গে অনুষ্টুপ মজুমদার। এবং অর্ণব নন্দী। কিন্তু বাংলা বনাম বাঙালির ঝাঁঝ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে বঙ্গ ক্রিকেটে উদ্ভুত নাটকের পর নাটকে।

এ দিন সকালে বাংলার প্র্যাকটিস ছিল ইডেনে। যে সমস্ত ক্রিকেটারদের ক্লাব ক্রিকেট ছিল, তাঁরা আসেননি। কিন্তু বঙ্গ ক্রিকেটের দুই স্তম্ভ অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল এবং মনোজ তিওয়ারি ছিলেন। প্র্যাকটিসের একদম শেষ দিকে দেখা যায়, সবুজ নয়, পাশের উইকেটে গিয়ে স্পিনারদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিশাল হিট মারছেন লক্ষ্মী। অর্থাত্‌, যে উইকেটে টার্নের আয়োজন চলছিল এত দিন, যেখানে জল বন্ধ গত পাঁচ-ছ’দিন ধরে। সেখানে লক্ষ্মীর সঙ্গে বাংলার বোলিং কোচ রণদেব বসু এবং এক নির্বাচকও ছিলেন। তখনও বোঝা যায়নি কী চলছে। পরে বোঝা গেল। মালিদের দেখা গেল, তিনটে কোদাল নিয়ে পিচের দিকে এগোতে। পিচ চাঁছা হল জায়গায়-জায়গায়। একবার নয়, দু’বার। পরে প্র্যাকটিস পিচ থেকে মাটি তুলে এনে জায়গাগুলো ভর্তিও করা হল।

কেন এমন? শোনা গেল, উইকেটে টার্ন কতটা ধরছে দেখতে গিয়ে বাংলা আবিষ্কার করে, উইকেটে হিট করালে টার্ন হচ্ছে না। আর বলটা পড়ার পর এত আস্তে আসছে যে ব্যাটসম্যান অনেকটাই সময় পেয়ে যাচ্ছে শট খেলার। লক্ষ্মীকে সে কারণেই পিচে ব্যাট করিয়ে দেখে নেওয়া হয়। তার পরই ঠিক করা হয়, পিচ কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়কে বিশেষ ভাবে বলা হবে, পিচে আরও টার্নের ব্যবস্থা করতে। যা হল। আর প্র্যাকটিস উইকেট থেকে মাটি তুলে এনে জায়গা ভরাট করার ব্যাখ্যা যাতে উপর-উপর দেখে ব্যাপারটা ধরা না যায়। বলা হল, ম্যাচ রেফারির হাতে পিচ তুলে দেওয়ার আগে সব সেরে ফেলা হবে। এটাও সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হল যে, তামিলনাড়ু ঘরের মাঠে র্যাঙ্ক টার্নার বানায়। এ বারও পরপর দু’টো ম্যাচ ‘খোঁয়াড়ে’ ফেলে জিতেছে, যার একটায় ইনিংসে চূর্ণ হয়েছে মুম্বই। তা হলে বাংলা কেন ঘরের মাঠের সুবিধে নেবে না? যুক্তি হিসেবে ঠিকই। তামিলনাড়ু যদি র্যাঙ্ক টার্নার বানাতে পারে, বাংলার চেষ্টাতেও অন্যায় নেই। বিশেষ করে কোয়ার্টার ফাইনাল স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে যখন শেষ দু’টো ম্যাচে সরাসরি জয় প্রয়োজন। কিন্তু সেই যুক্তিতে অটল কোথায় থাকতে পারল বাংলা? টিম ম্যানেজমেন্টের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাতে বললেন, ডিজাইনার পিচেই শেষ পর্যন্ত খেলা হবে, কে বলল? পাশের সবুজটাতেও হতে পারে! সাংবাদিকরা যে দেখছে, সেটা টিমও জানে। দেখেছে। ‘গুগলি’ কিন্তু তাই থাকতেই পারে!

অর্থাত্‌, ধোঁয়াশা। নতুন নাটক।

যার একটা অঙ্ক আবার সন্ধের সিএবিতে দল নির্বাচনী বৈঠকেও অভিনীত হল। বাংলা ওপেনার অরিন্দম দাস গত ম্যাচে ১০৮ বলে ১৯ করার পর এক নির্বাচক বলে দিয়েছিলেন, অরিন্দমের এটাই শেষ। ওকে অনেক টানা হয়েছে, আর হবে না। নির্বাচনী বৈঠকে ঘটল উল্টো। অরিন্দম থাকলেন। পরে সিএবি যুগ্ম-সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “অরিন্দম টিমের সেকেন্ড হায়েস্ট স্কোরার। ওর জায়গা নিয়ে প্রশ্নই উঠতে পারে না।” উল্টে নির্বাচকরা কড়া ধাতানি খেলেন সৌরভের। শুনলেন, মিডিয়ায় নির্বাচনী বৈঠকের খবর কী ভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে? নির্বাচকদের স্পষ্ট বলে দেওয়া হল, কোনও বিষয়ে মিডিয়ায় একটা শব্দও আর বলা যাবে না! বঙ্গ ক্রিকেটের অধুনা ‘সিইও’ সৌরভও পরে অরিন্দম-প্রশ্নে এক নির্বাচকের মুখ খোলা নিয়ে ঝাঁঝিয়ে বলে গেলেন, “আপনারা নির্বাচকদের গিয়ে জিজ্ঞেস করুন না, কেন মিডিয়ায় মুখ ওঁরা খুলছেন? কেন টিমের খবরাখবর বাইরে যাচ্ছে? টিম এথিক্স বলে কি কিছু নেই?” আর প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলা নির্বাচনী বৈঠকে সেই ধাতানির তীব্রতা এতটাই যে, নির্বাচকদের কেউ কেউ স্রেফ পরে ফোন বন্ধ করে দিলেন!

এত কিছুর পর প্রশ্ন একটাই। পয়েন্ট টেবলের প্রবল চাপের সঙ্গে পারিপার্শ্বিকের এত চাপের মধ্যে থেকে টিমটা উঠে দাঁড়াতে পারবে তো? কে না জানে, শেষ দু’টো ম্যাচে এ দিক-ও দিক মানে অবনমনের আতঙ্কের টিমকে তাড়া করা? কে না জানে, স্ট্র্যাটেজি পাল্টে সবুজ পিচের দিকে গেলে কোনও এক অনুরীত সিংহ বা কৃষ্ণকান্ত উপাধ্যায়ের মুখে পড়া। যাঁরাও পেস বোলিংটা জানেন। যাঁরা কলকাতার সাংবাদিকদের ফোন করে খোঁজ নিচ্ছেন, পিচটা কী দাঁড়াল? গ্রিন টপ?

বঙ্গ ক্রিকেটের ‘সিইও’-র ক্রিকেট-সংস্কৃতির আমূল সংস্কার সত্যিই টিমকে বিশল্যকরণীর খোঁজ দিল কি না, উত্তর ইডেনে। কাল থেকে।

bengal strategy pitch eden gardens
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy