শনিবার রাতে কেকেআর ব্যাটসম্যানদের কাণ্ড-কারখানা দেখতে দেখতে একটা কথাই মনে হচ্ছিল, ওদের একজন ভাল ডাক্তারের খুব দরকার। গলায় স্টেথো ঝোলানো, সাদা অ্যাপ্রন পরা নয়। প্যাড-আপ করা, ব্যাট হাতে নিয়ে মাঠে নামা একজন ক্রিকেটের ডাক্তার। যে কিনা ক্রিকেটের রোগ ভাল সারাতে পারে। যে নেটে ঢুকে ব্যাটসম্যানদের হাতে ধরে শিখিয়ে দিতে পারবে, কার কার কোথায় ভুল হচ্ছে। শনিবার যে ভাবে ১৩৩ রানের টার্গেটের কাছেও পৌঁছতে পারল না গৌতম গম্ভীর ও তার ব্যাটসম্যানরা, তাতে এমনটা মনে হওয়া নিশ্চয়ই অস্বাভাবিক নয়?
নাইটদের প্রধান রোগ এখন দুটো। ইউসুফ পাঠান এবং গৌতম গম্ভীর। দু’জনেরই ব্যাটিং ফর্ম তলানিতে। গম্ভীরের সমস্যা হল, ও আবার অধিনায়ক। একজন অধিনায়ক খারাপ ফর্মে থাকলে ম্যাচে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়ে। গম্ভীরের মতো একজন কোয়ালিটি ব্যাটসম্যানকে এ ভাবে ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যর্থ হতে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। নিজে ব্যাটসম্যান বলে জানি, একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান পরপর এ ভাবে ব্যর্থ হতে থাকলে তার মনের মধ্যে কী ঝড় চলে।
গম্ভীরের দরকার এখন এমন একজন গাইডের, যে ওকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখার দায়িত্ব নেবে। একটা হাই প্রোফাইল ম্যাচে ব্যাট হাতে ক্রিজে নামার জন্য যে ইস্পাতকঠিন মানসিক শক্তি লাগে, সেটা একবার ভেঙে গেলে তা ফের গড়ে তোলা সোজা নয়। এখন এই কাজটাই করতে হবে গম্ভীরকে। আর সে জন্য ওকে কিছুটা সময় নিতেই হবে। এই সময়ে ও কাউকে পাশে পেলে ভাল হয়। যতদূর জানি, গম্ভীরের পছন্দের কোচ তো কেকেআরের ব্যাটিং কোচও। ডব্লিউ ভি রামনের কাছে অফ ফর্মে থাকাকালীন আগেও টিপস নিয়েছে গম্ভীর। এ বারও নিশ্চয়ই নেবে বা নিচ্ছে। দেখা যাক কী হয়।
শনিবারের ম্যাচে গম্ভীরের ব্যাটিং দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল ও আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছে। ফুটওয়ার্ক, শট বাছাই দেখেই এটা বোঝা যায়। মিচেল জনসনকে বাদ দিলে পঞ্জাবের বোলিং এমন কিছু আহামরি নয়। সেই বোলিংয়ের বিরুদ্ধেও যে রকম ইতস্তত ব্যাটিং করল নাইটদের ক্যাপ্টেন, যে ভাবে ভুল টাইমিংয়ে মিড অফে অতি সহজ কা্যচ দিয়ে আউট হল, তাতে বলতে বাধ্য হচ্ছি, কয়েকটা ম্যাচে ওর বিশ্রাম দরকার।
গম্ভীরকে কয়েকটা ঘটনা মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে। সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার দীনেশ চান্দিমল নিজের ফর্ম খারাপ হওয়ায় নেতৃত্ব ছেড়ে দেয় লাসিথ মালিঙ্গাকে। গত বার আইপিএলের কথা মনে করে দেখুন। রিকি পন্টিং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নেতৃত্বের ভার ছেড়ে দিয়েছিল এবং গত বছরই পরপর ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ায় সানরাইজার্স হায়দরাবাদের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ায় সঙ্গকারা। সঙ্গকারা তো কয়েকটা ম্যাচ বিশ্রাম নিয়ে ফিরে এসে রানও পেয়েছিল।
আমি বলছি না, গম্ভীর নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে একেবারে সরে যাক। প্রয়োজনে ও কয়েকটা ম্যাচ বিশ্রাম নিতে পারে। এই সময়টা নেটে কাটাক, কোচেদের সঙ্গে কথা বলুক। আত্মবিশ্বাসটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুক। তার পর আবার ম্যাচে নামুক।
এ বার আসি ইউসুফ পাঠানে। ওরও ফুটওয়ার্কের দফা রফা। কোনও আনকোরা ক্রিকেটারের মতো দেখাচ্ছে ওকে। শট বাছাইও তথৈবচ। আমি এই দলের কোচ হলে এবং পুরো ক্ষমতা দেওয়া থাকলে এই ম্যাচের পরই ইউসুফকে বসিয়ে মনবিন্দর সিংহ বিসলাকে প্রথম এগারোয় নিয়ে আসতাম। ওকে দিয়েই কিপিং করাতাম আর রবিন উথাপ্পাকে মনোযোগ দিতে বলতাম শুধু ব্যাটিংয়ে। সূর্যকুমার যাদব ভালই ব্যাট করছে। ওকে ব্যাটিং অর্ডারে উঠিয়ে কালিসকে একটু মাঝামাঝি জায়গায় নিয়ে আসলে খারাপ হবে বলে মনে হয় না। চাপের মুখে মিডল অর্ডারে ধরে খেলার মতো তেমন ব্যাটসম্যান নেই এই দলে। শনিবার পুরো দলটা যখন খারাপ ব্যাট করে গেল, সূর্যকুমার (১৭ বলে ৩৪) দুশো স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করল। এই পিচে বল থমকে আসছে, রান তোলাটা সহজ কথা নয়। সেখানে যে ছেলেটা এই স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করছে, তাকে তো গুরুত্ব দিতেই হবে। সূর্য উপরের দিকে দ্রুত রান তুলে দিলে, নাইটদের মিডল অর্ডারে চাপটা কিছুটা হাল্কা হতে পারে।
কোনও সন্দেহ নেই, নাইটদের বোলিংটা অনেক ভাল। নারিন, চাওলারা এই উইকেট থেকে পুরো ফায়দা তুলে নিল এ দিন। না হলে কিংস ইলেভেনকে মাত্র ১৩২ রানে গুটিয়ে দেওয়া যায় না। আমার তো মনে হল ম্যাক্সওয়েল, মিলারদের রোখার ছক তৈরি করতে গিয়ে নাইটরা নিজেদের ব্যাটিংয়ের দূর্বলতাগুলো নিয়ে ভেবেই উঠতে পারেনি। ফলস্বরূপ যা হওয়ার হল। ১৩৩-এর টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ১০৯-এ গিয়েই থেমে যেতে হল। দেখা যাচ্ছে, আগে ব্যাট করলে ওরা তবু কিছুটা ভাল ব্যাট করতে পারছে। কিন্তু রান তাড়া করতে নামলে সে ভাবে চাপ সামলাতে পারছে না।
সব মিলিয়ে নাইটদের কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি রোগের দাওয়াই খুঁজে নিতে হবে। না হলে প্লে অফে ওঠার দৌড় কঠিন হয়ে পড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy