Advertisement
E-Paper

পদবির আদ্যক্ষর এক কিন্তু আলোচনায় সোবার্স নন, শ্রীনি

ক্রিকেটের খুব বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা আজ থেকে ঠিক ষাট বছর আগে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সে দিনই অভ্যুদয় স্যর গারফিল্ড সোবার্সের। সোবার্স যেহেতু জীবিত এবং যথেষ্ট সক্ষম, আজ বার্বেডোজ-সহ বিশ্ব ক্রিকেটমহলে আলোচনা এবং নস্ট্যালজিয়ায় তাঁর বারবার ফিরে আসার দিন। ক্যালেন্ডারের ক্রিকেট বরণীয় এই সব দিনেই না দাবি ওঠার কথা, বার্বেডোজে ৩০ মার্চ কেন গ্যারি সোবার্স ডে হিসেবে পালিত হবে না?

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৪ ০২:৫০

ক্রিকেটের খুব বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা আজ থেকে ঠিক ষাট বছর আগে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সে দিনই অভ্যুদয় স্যর গারফিল্ড সোবার্সের।

সোবার্স যেহেতু জীবিত এবং যথেষ্ট সক্ষম, আজ বার্বেডোজ-সহ বিশ্ব ক্রিকেটমহলে আলোচনা এবং নস্ট্যালজিয়ায় তাঁর বারবার ফিরে আসার দিন। ক্যালেন্ডারের ক্রিকেট বরণীয় এই সব দিনেই না দাবি ওঠার কথা, বার্বেডোজে ৩০ মার্চ কেন গ্যারি সোবার্স ডে হিসেবে পালিত হবে না? অথচ ঢাকায় বিশ্ব টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট হিসেবে জমায়েত ক্রিকেট গুণীজনকে যদি মিনি ক্রিকেটবিশ্ব ধরা যায়, তা হলে সেই আলোচনা অন্য একজনকে ঘিরে! পদবির আদ্যক্ষরেই শুধু তিনি আর সোবার্স এক। শ্রীনিবাসন।

হাতের কাছে এত সব তারকা-মহাতারকা ক্রিকেটারের উপস্থিতি অগ্রাহ্য করে কোনও প্রশাসক যে টানা এত দিন আলোচনার টিআরপি-শীর্ষে থাকতে পারেন, তা প্রাক শ্রীনি পর্যায়ে কেউ কখনও দেখেনি। ডালমিয়া? এত দিন ধরে থাকেননি। ললিত মোদী? সবচেয়ে কাছাকাছি নাম, কিন্তু সীমাহীন কৌতূহল ক্যাটেগরিতে শ্রীনির পরে।

সোনারগাঁও এবং শেরাটন হোটেল এই দুটো হোটেল এখানে ক্রিকেটারদের ঘাঁটি। রোববার দুটো জায়গায় ঢুঁ মেরে মনে হল টেবলে-টেবলে বোধহয় একটাই আলোচনার বিষয় শ্রীনি। আরও নিখুঁত করে বললে, তাঁর সম্ভাব্য দুবাই যাত্রা নিয়ে। ক্রিকেটমহলের অদম্য কৌতূহল, শ্রীনি কি সর্বোচ্চ আদালতের লাল চোখ মাড়িয়ে দুবাই যেতে পারবেন? সেখানে ৯-১০ এপ্রিল আইসিসি এগজিকিউটিভ বোর্ডের জরুরি সভা রয়েছে। ছুটকো আইসিসি বৈঠক হলে কোনও ব্যাপার ছিল না। কিন্তু এটা হল তাঁর আইসিসি সর্বময় কর্তা হিসেবে জুলাইয়ে অভিষিক্ত হওয়ার ড্রেস রিহার্সাল। এই বৈঠকে যোগ দেওয়া থেকে তিনি আটকে গেলে আইসিসি-র গদিও আটকে যেতে পারে। তখন ভারত আর আইসিসি দু’কূলই গেল। তাই শ্রীনির এ বারের সফর ঘিরে ক্রিকেটমহলে এত রোমাঞ্চ!

শনিবার মাঝরাতে ভারতীয় দলের লজিস্টিক্স ম্যানেজার সতীশকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলে শ্রীনি-বিরোধী শিবির উদ্বেলিত হয়ে পড়ে। তাদের কাছে মহাযুদ্ধ জয়ের এটা প্রথম সোপান। সতীশ নামটা নেহাতই প্রতীকী। আবার শ্রীনি শিবির ভাব দেখাতে শুরু করে, একটা বোড়ে খেয়ে এত উল্লাসের কোনও মানে হয় না। সতীশ পদাতিক সৈন্য ব্যতীত নন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ইন্ডিয়া সিমেন্টসের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য যে আদালতের নির্দেশে সতীশকে ফিরে যেতে হচ্ছে, সেটা বোর্ডের মেল-এ কোথাও লেখা নেই। এটা একটা প্রেস্টিজ ইস্যুর আকার নিয়েছে। এ দিন সকালে কবে আপনি ফিরছেন জিজ্ঞেস করায় সতীশ এবিপি-কে রাগত ভাবে বললেন, “ঠিক করিনি আমি।” আসল সত্য হল, তাঁর বদলি ময়ঙ্ক পারেখ বাংলাদেশ ভিসা পেয়ে গেলেই সতীশকে পত্রপাঠ কলকাতা হয়ে চেন্নাইয়ের বিমান ধরতে হবে। এ দিন ভারতীয় দলের সঙ্গে মাঠে তাঁকে দেখলাম না।

শ্রীনি-বিরোধী শিবিরের তীব্র বক্তব্য, সতীশ যে কারণে ফিরে আসছেন সেই একই কারণে শ্রীনিরও দুবাই বৈঠকে যাওয়ার কোনও এক্তিয়ার নেই। ইন্ডিয়া সিমেন্টসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হয়ে তিনি কী করে বিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন? ললিত মোদী কাল মাঝরাত থেকেই টুইট শুরু করেছেন, ‘এটা করলে পরিষ্কার সুপ্রিম কোর্ট অবমাননা হবে। ১৬ এপ্রিল পরের শুনানিতে আরও জালে জড়িয়ে যাবেন শ্রীনি।’ একটাই রাস্তা, শ্রীনি যদি ইন্ডিয়া সিমেন্টস থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু সেটা কি সম্ভব? সেটা তো নিজের ঠিকেদারি সংস্থা এম এল ডালমিয়া থেকে জগমোহন ডালমিয়াকে পদত্যাগ করতে বলার মতো। ললিত মোদীরা চান দুবাই যাওয়া থেকে শ্রীনিকে আটকে দিয়ে রাজাকে প্রথম কিস্তিটা দিতে।

এ দিকে নির্বিকার ভারতীয় বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল সরকারি ভাবে বলেছেন, “দুবাই বৈঠকে শ্রীনিই প্রতিনিধিত্ব করবেন। তিনি সবচেয়ে যোগ্য।” আইসিসিতে আজকের ভারতের সুদৃঢ় অবস্থান তাঁর জন্যই, দাবি তুলেছেন পটেল। সমাধানসূত্র বার করা হয়েছে যে, তিনি যাবেন তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট হয়ে। সেটা তো আর বিসিসিআই নয়। কাজেই ইন্ডিয়া সিমেন্টসের ক্লজটা আর থাকল না।

বিদ্রোহীদের যা মানতে ভয়ঙ্কর আপত্তি। তাঁদের মতে, টিএনসিএ তো দিনের শেষে বিসিসিআইয়েরই অনুমোদিত ইউনিট। একই তো হল। রোববার ভারত থেকে আদিত্য বর্মা বললেন, “ওঁকে বৈঠকে যেতে দেওয়ার প্রশ্নই নেই।” আদিত্য এবং তাঁর বন্ধুবান্ধবের আশঙ্কা, দুবাই যেতে দিলে পাখি উড়ে যাবে। তখন যদি বা তিনি ভারতীয় বোর্ডচ্যুত হন, নিশ্বাস নেওয়ার নতুন এবং সম্ভ্রান্ত জায়গা হয়ে দাঁড়াবে আইসিসি। তাই বেড়াল প্রথম রাত্তিরেই মারো!

আদিত্যরা একসঙ্গে চাইছেন আইপিএল সিইও সুন্দর রামনের ওপর অভিযোগ আনার মাধ্যমে শ্রীনির ওপর চাপ বাড়াতে। আদালত সুনীল গাওস্করকে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিয়েছে। তা গাওস্করকে এ দিন মেল করেছেন আদিত্য চিঠিতে লিখেছেন মুম্বই পুলিশ মুদগল কমিটিকে যা কাগজপত্র দিয়েছে তা থেকে পরিষ্কার, উনি ভেতরের সব খবর সরবরাহ করতেন। যাঁর মাধ্যমে বেটিং করা সহজতর হত। সুন্দর নিয়মিত টিপসও দিতেন গুরুনাথ মইয়াপ্পনকে। বুকি পবন এবং বিন্দু দারা সিংহের কথোপকথনেও সুন্দরের নাম এসেছে। ইনি ক্রিকেটে দুর্নীতির রক্ষক ও ভক্ষক। এঁকে অবিলম্বে আইপিএল মহাকর্তার পদ থেকে তাড়ান। ললিত আবার টুইটে যোগ করেছেন, ‘সানি নিশ্চয়ই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’

শ্রীনিকে চার দিক থেকে এই ভাবে ঘিরে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। এমন মারপ্যাঁচ, জট আর প্রতি মুহূর্তের রোমাঞ্চ শ্রীনি বনাম বিরোধীদের সেই ম্যাচ ঘিরে যে, সোবার্স ছেড়ে সেই ম্যাচ নিয়ে ব্যস্ত। ঢাকা ক্রিকেট প্রেসবক্সের উদ্ধৃতি রাখি সবন্তকে নিয়ে জল্পনা কখনও কখনও ফিল্মের প্রবাদপুরুষদের ছাপিয়ে যায়!

srinivasan bcci gautam bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy