Advertisement
E-Paper

ফুটবল আইপিএলের নেপথ্যে নীতা-প্রফুল্ল যুগলবন্দিই

চিয়ার গার্ল থেকে নাচা-গানাপ্রচুর ঢাক ঢোল পিটিয়ে ক্রিকেট আইপিএল শুরু হয়েছিল। কিন্তু ছয়-সাত বছর পর দেখা যাচ্ছে, নাইট রাইডার্সের মতো দু’একটি দল বাদে ক্রিকেট আইপিএলের বেশির ভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজি এখনও লাভের মুখ দেখেনি। অন্তত কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকে টিমগুলি যে তথ্য দিয়েছে তাতে সেটাই উঠে এসেছে। ব্যাডমিন্টন বা টেনিস লিগে লাভ হবে কি না তার জল মাপা শুরু হয়নি।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১৪

চিয়ার গার্ল থেকে নাচা-গানাপ্রচুর ঢাক ঢোল পিটিয়ে ক্রিকেট আইপিএল শুরু হয়েছিল। কিন্তু ছয়-সাত বছর পর দেখা যাচ্ছে, নাইট রাইডার্সের মতো দু’একটি দল বাদে ক্রিকেট আইপিএলের বেশির ভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজি এখনও লাভের মুখ দেখেনি। অন্তত কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকে টিমগুলি যে তথ্য দিয়েছে তাতে সেটাই উঠে এসেছে।

ব্যাডমিন্টন বা টেনিস লিগে লাভ হবে কি না তার জল মাপা শুরু হয়নি।

এটা জানার পরও সেপ্টেম্বরে শুরু হতে যাওয়া সাতশো কোটির ফুটবল আইএসএলে কর্পোরেট দুনিয়া কেন এত আগ্রহী হয়ে পড়ল? কারা টেনে নিয়ে এসেছেন শিল্পপতি থেকে বলিউড তারকা, ক্রিকেটার থেকে লগ্নি বিশেষজ্ঞদের।

দিল্লির ফুটবল হাউসের খবর, ফুটবল আইএসএলের জন্য যে দু’টি মস্তিষ্ক কাজ করেছে তাদের একজন নীতা অম্বানী, অন্য জন ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল। রিলায়্যান্সের মালিক মুকেশ অম্বানীর স্ত্রী নীতা কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকটা দেখেন। এবং আইপিএলের মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মালিক। আর প্রফুল্ল পটেল শেষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ভারী শিল্প দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। সুগার লবির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রফুল্লরও শিল্প মহলে যোগাযোগ রয়েছে প্রচুর। দিল্লি থেকে ফেডারেশন সচিব কুশল দাশ বললেন, “নীতা অম্বানী এবং আমাদের প্রেসিডেন্টের ব্রেন চাইল্ড এই টুর্নামেন্ট। আমিও বেশ কয়েক বার ওদের সঙ্গে মিটিং করেছি। দু’জনেরই ভাবনা ফুটবল মাঠে সব রকমের মানুষকে টেনে আনতে হবে। মা-মেয়েকে নিয়ে, বাবা-ছেলেকে নিয়ে বা তরুণ প্রজন্ম খেলা দেখতে আসুক চাইছিলেন দু’জনেই। যে পরিবেশ এখন নেই। তা ছাড়া এদেশে ফুটবলের বিশাল বাজার আছে সেটাও কাজ করছে এই টুর্নামেন্ট করার পিছনে।”

চার বছর আগে আইএমজি-আরের সঙ্গে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের পনেরো বছরের চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে স্পনসর আইএমজি-আরের শর্ত ছিল ক্রিকেট আইপিএলের ধাঁচে টুর্নামেন্ট করার ছাড়পত্র দিতে হবে। কুশলবাবু বললেন, “আই লিগ এবং ফেড কাপ থেকে কোনও রিটার্ন পাবে না ওরা জানতেন। তবুও অনেক চেষ্টা করেছি। স্পনসররা আশা করছে এই টুর্নামেন্ট সফল হবে। ছয়-সাত বছর ঠিকঠাক চললে আমারও মনে হয় লগ্নিকারীরা টাকা ফেরত পেতে শুরু করবে।” মুম্বইয়ে ফোন করে জানা গেল, আইএমজি-আর এবং ফেডারেশন কর্তারা মনে করছেন, শুরুতে আইপিএল যত বিজ্ঞাপন টানত, এখন আর ততটা টানছে না। এই সুযোগ নিতে চাইছেন নীতা-প্রফুল্ল দু’জনেই। এবং লগ্নির সব দিক দেখেই আঁটঘাট বেঁধে নেমেছেন ওঁরা। এর সঙ্গে পরে যুক্ত হল স্টার ইন্ডিয়া। টুর্নামেন্ট বিপণনের অন্যতম শর্ত ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার। কারণ স্পনসররা সেটা সব সময়ই চান। জানা গিয়েছে, নীতা-প্রফুল্ল-সম্প্রচার স্পনসরের প্রতিনিধির নেতৃত্বেই বাছা হয়েছে সুপার লিগের আট পার্টনারকে। ক্লাব বাছার পর নীতা অম্বানী বলে দিয়েছেন, “যুব সমাজকে ফুটবলে আগ্রহী করার মাধ্যমে ভারতের ফুটবল ইকোসিস্টেমটাই বদলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি আমরা।” আর প্রফুল্লর বক্তব্য ছিল, “সেলিব্রিটি এবং কর্পোরেট জগৎ এগিয়ে আসায় ফুটবল লাভবানই হবে। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের আগে আর্থিক ভাবে লাভবান হবে ভারতীয় ফুটবল।”

নীতা-প্রফুল্লর মতো দুই ব্যক্তিত্ব ফুটবল আইপিএলের সামনে থাকলেও, ভারতে ফুটবল বাজারও যে যথেষ্ট শক্তিশালী সেটা বোঝানোর জন্য একটা টিম কাজ করেছে। তাতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের জেফারসন স্ল্যাক। তার সঙ্গে ছিলেন স্বদেশীয় অ্যান্ডি নি। রিলায়্যান্সের পক্ষ থেকে ওই টিমে ছিলেন শ্রীনিবাসন, আশু জিন্দাল ও প্রীতি শ্রীবাস্তব। শেষ তিন জনেরই দিল্লির ফুটবল হাউসে গত চার বছর যাতায়াত আছে।

ক্রিকেট আইপিএলের ললিত মোদীর জায়গাটা সেই অর্থে নিয়েছেন জেফারসনই। পরিকাঠামো থেকে বিপণন, তিনিই ছিলেন শিল্পপতি, ক্রিকেটার, বলিউড তারকাদের আগ্রহী করার নেপথ্যে। আইএমজি-র ফুটবল সংক্রান্ত বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক উন্নয়নের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জেফারসন কাজ করেছেন ইউরোপের প্রথম সারির ক্লাবে। চেলসি, বার্সেলোনা, এসি মিলান, জুভেন্তাস ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এক সময়। শুধু তাই নয়, চিনে ক্লাবদের নিয়ে এ রকম একটা টুর্নামেন্ট করে সে দেশের ফুটবলের খোলনলচেই বদলে দিয়েছেন তিনি। বাণিজ্যিক সাফল্যও পেয়েছে লিগ। লিগ পার্টনাররা যাতে শুরুতেই হতাশ না হয়ে পড়েন সে জন্য দেখা যাচ্ছে, খেলার জন্য যে শহরগুলোকে বাছা হয়েছে সেখানে ফুটবল আগে থেকেই জনপ্রিয়।

আই লিগ ক্লাবেদের বাধায় অনেকখানি এগিয়েও গত মরসুমে টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়ার পর আইএমজি-আর দমেনি। ক্লাব জোটের বিরোধিতা থামাতে মাঠে নামেন ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল স্বয়ং। কর্মসমিতির সভায় রীতিমতো ধমক দিয়ে তিনি নাকি ক্লাবেদের মধ্যে ভাঙন ধরান। ডেম্পো, শিলং লাজং সরে যায়। তারা তো টিমও কিনে নিয়েছে আইএসএলের। নরম হয় অন্য ক্লাবও। এখন তো আর ক্লাব জোট বলে কিছু নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কলকাতা দল কেনার জন্য আগ্রহী করতে গুরগাঁওয়ের অফিসে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, হর্ষ নেওটিয়াদের সঙ্গে দীর্ঘ মিটিং করেন জেফারসন-সহ পুরো আইএমজিআর টিমই। সেখানে নীতা বা প্রফুল্ল ছিলেন না। তবে অন্য কিছু আই লিগ পার্টনারকে আগ্রহী করতে ওই দু’জনের প্রভাব কাজ করেছে বলে মুম্বইয়ের খবর। দরপত্র তোলা ৩০ টি কোম্পানিকেই বোঝানো হয়েছিল ফুটবল বাজারের কথা। শেষ পর্যন্ত ১৬ টি দরপত্র জমা পড়ে। শুধু শিল্পপতি নিয়ে বাজারে নামলে আইএসএল জমবে না। এটা জানাই ছিল। সে জন্যই ফুটবল নিয়ে আগ্রহ আছে এ রকম কিছু সেলিব্রিটিকে খোঁজা হয়। যাঁদের টানে মাঠ ভরবে। যাঁদের সামনে রাখলে বিপণন হবে। সচিন, রণবীর কপূর, জন আব্রাহাম, সলমন খানদের এ জন্যই অর্ন্তভুক্ত। ব্যতিক্রম শুধু সৌরভ। তিনি নিজেই কলকাতা কিনতে আগ্রহী ছিলেন। সৌরভ-হর্ষ-সঞ্জীব গোয়েনকারা এতটাই সিরিয়াস যে অন্যতম পার্টনার স্পেনের বিখ্যাত ক্লাব আটলেটিকো মাদ্রিদের সিইও মিগেল অ্যাঞ্জেল গিলকে তারা নিয়ে আসছেন ৬ মে। লা লিগার শীর্ষে থাকা ক্লাব থেকে বিদেশি ফুটবলার আনতে আগ্রহী সৌরভ। কিন্তু ফিফার নিয়মে সেটা সম্ভব কি না, তা নিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া চলছে।

ফেডারেশন সচিব কুশলবাবু বললেন, “এ বার হয়তো ফিফার নিয়মের জন্য বর্তমান ফুটবলারদের পাওয়া যাবে না। তবে যদি টুর্নামেন্ট সাফল্য পায় তা হলে পরের বার থেকে ফিফার নিয়মের মধ্যে পড়ে এ রকম সময় করা যেতে পারে আইএসএল।” তিনি জানিয়ে দেন, নতুন টুর্নামেন্ট সফল করতে রেফারি-সহ অন্যান্য সাহায্য দেবে ফেডারেশন। প্রতিটি কমিটিতেও থাকবে ফেডারেশনের প্রতিনিধি।

ratan chakraborty isl
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy