Advertisement
E-Paper

ফান গলের গণ্ডগোলে ডুবল নেদারল্যান্ডস

প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট তো দু’দলই আক্রমণাত্মক পাস মেরেকেটে দশ শতাংশ খেলেছে। নব্বই শতাংশই ডিফেন্সিভ পাস। বল পেলেই পিছনে খেলছে। নয়তো স্কোয়ার পাস। ফুটবলের ভাষায় ফেসিং সাইড পাস। মানে, তোমার সামনে যে আছে তাকে বল দাও। ঘুরতে যেও না।

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০৫:০৭
দেশের জন্য প্রাণপাত। সাও পাওলোয় মেসি। ছবি: উৎপল সরকার

দেশের জন্য প্রাণপাত। সাও পাওলোয় মেসি। ছবি: উৎপল সরকার

এ বারের বিশ্বকাপের সেরা ট্যাকটিশিয়ান কোচ লুই ফান গলের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস? না কি, হিসেবের গণ্ডগোল? কোনটা নেদারল্যান্ডসের টাইব্রেকারে হেরে ফাইনাল খেলতে না পারার কারণ? মনে হয়, এটাই আগামী ক’দিন ফুটবলমহলের গবেষণার বিষয় হয়ে থাকবে। আগেই তিনটে পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলে এ দিন ডাচ কোচ তাঁদের আগের ম্যাচেই টাইব্রেকার নায়ক গোলকিপার ক্রুলকে নামাতেই পারলেন না। উল্টে প্রথম আর তৃতীয় পেনাল্টি সেভ করে নায়ক আর্জেন্তিনা কিপার রোমেরো।

আগের রাতেই অমন গোলের বন্যা দেখার পর বুধবার রাতে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালটা দেখতে কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে লাগছিল! কিন্তু সামান্য কিছু ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতা থেকে আবার এটাও বুঝতে পারছিলাম, এত বড় মঞ্চে এটাই খেলার সঠিক চরিত্র। কেন আমি নিজের ডিফেন্সের দরজা হাট করে খুলে রেখে হা রে রে করে আক্রমণে যাব? আর বিপক্ষ সেই সুযোগে প্রতি-আক্রমণে একের এক গোল তুলে নেবে!

ব্রাজিলের মহাভুল এই ম্যাচে আর্জেন্তিনা করেনি। নেদারল্যান্ডসও নয়।

প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট তো দু’দলই আক্রমণাত্মক পাস মেরেকেটে দশ শতাংশ খেলেছে। নব্বই শতাংশই ডিফেন্সিভ পাস। বল পেলেই পিছনে খেলছে। নয়তো স্কোয়ার পাস। ফুটবলের ভাষায় ফেসিং সাইড পাস। মানে, তোমার সামনে যে আছে তাকে বল দাও। ঘুরতে যেও না।

দু’দলই প্রথমার্ধে এত কম ডাইরেক্ট পাস খেলেছে যে, অ্যাটাকিং থার্ডে ফাউলের সংখ্যা হাতে গোনা। পঁয়তাল্লিশ মিনিটে দু’টো দল মোটে একটা করে কর্নার পেয়েছে। হাফটাইমের পরে তবু খেলার গতি খানিকটা বেড়েছিল। দু’দলেরই। ম্যাচটা দেখলে মনে হতেই পারে যে, বিপক্ষের প্রচণ্ড গতির সঙ্গে আগের দিনের ব্রাজিলের মতো অহেতুক সমান তালে পাল্লা না দিয়ে আর্জেন্তিনা বুদ্ধি করে খেলাটা স্লো করে দিয়েছে। বল হোল্ড করেছে। বেশি স্কোয়ার পাস খেলেছে। কিন্তু আসলে সেটা এই ম্যাচে দু’দলই করেছে। মনে হয়, চব্বিশ ঘণ্টা আগেই ব্রাজিলের সাত গোল হজম করা দেখে সাও পাওলোর মাঠে এ দিন দু’দলই খানিকটা মানসিক চাপে ছিল। আমাদেরও না ওই দশা হয়!

এবং সেই চাপটা হাফটাইমের পর যখনই একবার মাথা থেকে সরে গিয়েছে, দু’দলই ওপেন খেলতে শুরু করে দেয়। তা সত্ত্বেও দু’দলের সামনেই একটার বেশি পজিটিভ গোলের সুযোগ আসেনি। তার মধ্যে নব্বই মিনিটের একেবারে শেষের দিকে রবেনের সুযোগটা বেশি ছিল। এত কম পজিটিভ গোলের সুযোগ আসার কারণ, দু’দলেরই খুব ভাল ডিফেন্সিভ অর্গানাইজেশন। নেদারল্যান্ডস ডিফেন্স তো এই টুর্নামেন্টে ভাল খেলছিলই। এ দিন আর্জেন্তিনা রক্ষণ সংগঠনও আমার মতে ওদের সব ম্যাচের মধ্যে সর্বোত্তম ছিল। আসলে নতুন ছেলে নামালে তার মধ্যে একটা কিছু করে দেখাব-র মোটিভেশন বেশি কাজ করে। আর্জেন্তিনার বিলিয়া-গ্যারেদের মধ্যে সেই ইচ্ছাশক্তিটা কাজ করেছে।

সব শেষে মেসি এবং রবেন প্রসঙ্গ।

প্রথমে মেসি। ওকে দু-তিনজন মিলে আটকেছে। সেটাই স্বাভাবিক। মেসি বুদ্ধি করে ঘনঘন জায়গা বদল করেছে। সতীর্থকে পাস দিয়ে সেকেন্ড বল নিতে ফাঁকা জায়গায় গিয়েছে। নয়তো নিজের মার্কারদের এক পাশে টেনে নিয়ে গিয়ে পেরেজ-ইগুয়াইন, লাভেজ্জি-আগেরোকে অ্যাটাকের জায়গা করে দিয়েছে। কিন্তু মারাদোনার মতো মার্কারদের বুলডোজ করে বেরিয়ে গিয়ে নিজেই যে গোল করবে, সেটা পারেনি। আসলে মারাদোনার সময় ওর পাশে একটা বুরুচাগা বা একটা কানিজিয়া ছিল। তারাও ভাল বল প্লেয়ার। কিন্তু এখানে মেসি একাই। বল দিয়ে বল পাচ্ছে না। যা করতে হবে নিজেকেই। ফুটবলের মতো দলগত খেলায় সেটা হয় সেটপিস থেকে। মেসি এই ম্যাচে প্রায় সব ফ্রিকিক, কর্নার নিয়েছে। কিন্তু আজ তার বিধি বাম।

রবেনেরও প্রায় এক দশা। দু-তিন জন মার্কারকে টপকাতে পারেনি হাজার গতি আর ড্রিবল পায়ে থাকলেও। কিন্তু তার তো একটা ফান পার্সি বা স্নাইডার ছিল। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের থ্রি মাস্কেটিয়ার্স-ই আজ যেন একশো কুড়ি মিনিট ম্লান।

এর পর তো ম্যাচের নিষ্পত্তি টাইব্রেকারে হওয়াই স্বাভাবিক ঘটনা!

subrata bhattacharya fifaworldcup netherlands
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy