ইন্ডিগো বিপর্যয়ের জন্য এ বার ক্ষমা চাইলেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী কে রামমোহন নায়ডু। একই সঙ্গে কঠোর এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। শুধু ইন্ডিগো নয়, দেশের উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ-কেও তদন্তের আওতায় আনা হবে বলে জানান বিমানমন্ত্রী। তিনি জানান, ইন্ডিগো বিপর্যয়ে কী ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে ডিজিসিএ, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি এ-ও স্পষ্ট করেন, প্রয়োজনে ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্সকে বরখাস্তও করা হতে পারে!
ইন্ডিগো বিপর্যয়ের পর প্রশ্নের মুখে পড়েছে কেন্দ্রের ভূমিকাও। অনেকেরই প্রশ্ন, কেন্দ্র কি আন্দাজ করতে পারেনি? বিপর্যয়ের শুরু থেকেই কেন পদক্ষেপ করা হল না? এই সব প্রশ্নের মধ্যেই দেশবাসী, বিশেষত ভোগান্তির শিকার হওয়া যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন নায়ডু। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি ক্ষমা চাইছি। এক জন মন্ত্রী হিসাবে আমারও দায়িত্ব। যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে, তখন আমার উপরও অতিরিক্ত দায়িত্ব বর্তায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাই এখন চ্যালেঞ্জ।’’ তার পরেই বিমানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কাউকে রেয়াত করা হবে না। সকলকে জবাবদিহি করতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না-ঘটে, তা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।’’
‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ এই বিপর্যয় ঘটানো হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান বিমানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘ইন্ডিগো যে ভাবে কাজ করে, তাতে এ ধরনের ঘটনা বাঞ্চনীয় নয়।’’ নায়ডুর প্রশ্ন, ‘‘কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল?’’ মন্ত্রী স্পষ্ট বলেন, ‘‘এটি এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তদন্ত করে দেখছি। তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ নায়ডু এ-ও জানান, তদন্তে যদি ইন্ডিগোর সিইও-র কোনও গাফিলতি প্রকাশ্যে আসে, তবে তাঁকে বরখাস্ত করা হবে। পাশাপাশি, ইন্ডিগোর উপর জরিমানা আরোপের কথা বলেন মন্ত্রী। নায়ডুর কথায়, ‘‘আমি ডিজিসিএ-র কাছেও জানতে চাই। তদন্ত শেষ হলে আমরা ডিজিসিএ-র দিকেও নজর দেব।’’ দুর্ভোগে পড়া যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
গত ১ ডিসেম্বর থেকে বিপর্যস্ত ইন্ডিগোর উড়ান পরিষেবা। একের পর এক উড়ান বাতিলে সমস্যায় পড়েছেন যাত্রীরা। ইন্ডিগো-বিপর্যয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে কেন্দ্র। নায়ডুর নির্দেশেই চার সদস্যের কমিটি ইন্ডিগো বিপর্যয়ের তদন্ত করছে। ইন্ডিগোকে শো কজ় নোটিস জারি করা হয়। সোমবার সেই নোটিসের জবাবও দেয় ইন্ডিগো। তারই মধ্যে ইন্ডিগোর সিইও এবং অন্য কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন নায়ডু। কেন এমন পরিস্থিতি হল, তা জানতে চান ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষের কাছে।
মঙ্গলবার ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করেছে ডিজিসিএ। বিমানমন্ত্রী নায়ডু সোমবারই আভাস দিয়েছিলেন ইন্ডিগোর পরিষেবা কাটছাঁটের বিষয়ে। তিনি জানিয়েছিলেন, ইন্ডিগোর শীতকালীন বিমানসূচি কমানো হবে। তাদের ‘স্লট’ অন্য বিমানসংস্থাকে দেওয়া হবে। তার পরেই মঙ্গলবার ডিজিসিএ ইন্ডিগোর পাঁচ শতাংশ পরিষেবা কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে আরও পাঁচ শতাংশ কমানোর কথাও জানায় তারা। অর্থাৎ, বর্তমানে প্রতি দিন ইন্ডিগোর যা উড়ান-সংখ্যা রয়েছে, তার থেকে ১০ শতাংশ কম উড়ান উড়বে। বুধবার বিকেলের মধ্যে ইন্ডিগোকে নতুন সূচি প্রকাশের নির্দেশও দিয়েছে ডিজিসিএ। যাত্রীদের টিকিটের ভাড়ার টাকা দেওয়ার কেন্দ্রের নির্দেশের কথা জানান নায়ডু।