Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বেচারা স্টেইন তো আর জানত না ব্ল্যাকবেল্টের সামনে পড়তে হবে

৩২ বছর আগে কপিল’স ডেভিলসের বিশ্বজয়ী টিমে তিনিও ছিলেন। এ বার ধোনিদের মিশন নিয়ে আনন্দবাজারে এক্সক্লুসিভ কাপ আড্ডায় দিলীপ বেঙ্গসরকর৩২ বছর আগে কপিল’স ডেভিলসের বিশ্বজয়ী টিমে তিনিও ছিলেন। এ বার ধোনিদের মিশন নিয়ে আনন্দবাজারে এক্সক্লুসিভ কাপ আড্ডায় দিলীপ বেঙ্গসরকর

মারমুখী রাহানে। ৬০ বলে ৭৯ বাউন্ডারি ৭, ছক্কা ৩।

মারমুখী রাহানে। ৬০ বলে ৭৯ বাউন্ডারি ৭, ছক্কা ৩।

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩২
Share: Save:

আপনাদের কাগজে কলামটা লিখে একটু সিসিআই যাব। ওখানে কয়েক জন বন্ধু-বান্ধব আছে। ক্রিকেট নিয়ে আড্ডায় সন্ধেটা কাটিয়ে দেব। বিশ্বকাপ চলছে যখন, অবশ্যই ওটা নিয়ে চর্চা হবে। ভারত কী করবে না করবে, দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটা নিয়ে আলোচনা হবে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই রবিবারের আড্ডায় আমাদের ছেলেটার কথা উঠবে।

অজিঙ্ক রাহানের কথা বলছি।

ছেলেটা যে ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখতে ছোট থেকে নানা কঠিন অবস্থার সঙ্গে লড়েছে, সেটা এত দিন জাতীয় দলে খেলে ফেলায় সবাই জানে। একটা গল্প বলি, যেটা অজানা। অজিঙ্কিয়াকে (রাহানে) দেখে খুব সাদাসিধে-গোবেচারা মনে হয়, তাই তো? মনে হয়, সাত চড়ে টুঁ শব্দ করবে না? ও সব ভুলে যান। ও কিন্তু ব্ল্যাকবেল্ট!

ঠিকই পড়লেন। আসলে ওর কেরিয়ারের একটা ফেজ-এ ওর বাবার মনে হয়েছিল, ছেলের প্রতিভা আছে ঠিকই, কিন্তু বড্ড গোবেচারা। বোলার ওকে দেখে ভয় পাবে, সে সব ব্যাপারই নেই। অজিঙ্কিয়ার বাবা ঠিক করলেন, ক্রিকেটীয় স্কিলে উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ছেলের মানসিক খোলনলচেও পাল্টে ফেলতে হবে। সোজা নিয়ে গেলেন ক্যারাটে ক্লাসে। যেখানে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে শারীরিক ভাবে লড়তে লড়তে এক দিন ছেলে ব্ল্যাকবেল্ট হয়ে গেল! শিখে গেল মার খেতে খেতে এক সময় কী ভাবে পাল্টা মার দিতে হয়।

রবিবার মেলবোর্নে ওর ইনিংসটা দেখে মনে হচ্ছিল ওই ক্যারাটে ক্লাস, শরীরযুদ্ধে নেমে ব্ল্যাকবেল্টের মুকুট কোথাও না কোথাও গিয়ে কাজ করছে স্টেইনকে তুলে ছয় মারার সময়। মনে হচ্ছিল, প্র্যাকটিসের জন্য ডোম্বিভেলি থেকে দক্ষিণ মুম্বইয়ের দেড় ঘণ্টা করে বাদুর ঝোলা ট্রেনে আপ-ডাউন করে করে যে কাঠিন্যটা ভেতরে ভেতরে জমা হয়েছে দিনের পর দিন, কোথাও গিয়ে মর্নি মর্কেলকে সপাটে বাউন্ডারি মারতে ওকে সাহায্য করছে! আসলে এই পর্যায়ের ক্রিকেটে স্কিল আপনার থাকতেই হবে। দরকার মানসিক কাঠিন্য। যেটা যুদ্ধ জেতাবে। বেচারা স্টেইন! ও তো আর জানত না আসলে এক ব্ল্যাকবেল্টের পাল্লায় পড়েছে।

এটা বলছি না যে, ভারত আজ দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিল স্রেফ অজিঙ্কিয়ার জন্য। অবশ্যই না। ডে’ভিলিয়ার্সদের টিমটা আসলে দেখতে যত ঝকঝকে, আদতে তা নয়। ব্যাটিং দাঁড়িয়ে থাকে আমলা আর ডে’ভিলিয়ার্সের উপর। বোলিংয়ে স্টেইন আর মর্কেল। মুশকিল হল, স্টেইন একবার মার খেয়ে গেলে, বাকি বোলিং ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। ব্যাটিংয়েও দু’একটা উইকেট দ্রুত চলে গেলে অসম্ভব চাপ তৈরি হয়ে পড়ে। রবিবার মেলবোর্নে ভারতের সামনে পড়ে দু’টোই হল, আর ক্রিকেটবিশ্ব বুঝল যে দক্ষিণ আফ্রিকার চোকার্স বদনাম এমনি-এমনি আসেনি।

তার উপর ভারতীয়দের ও রকম রে-রে ব্যাটিং। শিখর ধবনের সেঞ্চুরি বোঝাল যে আস্তে আস্তে ওর আত্মবিশ্বাস কোথায় যাচ্ছে। শুরুতে উইকেট পড়ার পর ঘাবড়ে না গিয়ে খেলাটাকে ধরে ফেলল ধবন-কোহলি। পরে যেটাকে অন্য লেভেলে নিয়ে চলে গেল অজিঙ্কিয়া। ভারতের ব্যাটিং-ব্র্যান্ডটাই পাল্টে দিয়ে গেল ও।

অনূর্ধ্ব সতেরোর সময় থেকে অজিঙ্কিয়াকে দেখছি। এত ভাল ফুটওয়ার্ক, ব্যাকফুট প্লে, গ্যাপ খুঁজে বার করার ক্ষমতা খুব কম ভারতীয় ক্রিকেটারেরই আছে। টেকনিকের দিকে ও-ই সেরা। আইপিএল খেলে-খেলে মানসিকতাও এখন নিখুঁত। কী কী শট খেলল ও! পেসারদের কখনও পুল, কখনও সোজা হিটে গ্যালারিতে ফেলে দিল!

আসলে ধোনির টিমের মানসিকতাটাই এখন পাল্টে গিয়েছে। একটা মিলও পাচ্ছি। তিরাশিতে আমরা যখন প্রথম বিশ্বকাপ জিতি, তার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে খেলছিলাম। ওদের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচ জেতার পরই আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যদি চাপে ফেলা যায়, ওরা ভাঙবে। ওই একই বিশ্বাস নিয়ে আমরা বিশ্বকাপে ওদের বিরুদ্ধে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নামলাম, আর ফের হারালাম। কাপ ফাইনালে আবার দেখা, আবার হারালাম। ধোনির ভারতকে আবার বিশ্বাসটা ফিরিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ায় খারাপ টেস্ট আর ওয়ান ডে সিরিজের পর আচমকাই দেখছি ওদের মধ্যে একটা অদ্ভুত বিশ্বাস ঢুকে গিয়েছে।

এ বার থেকে শুধু নামব আর হারাব!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dilip vengsarkar rahane world cup 2015
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE