Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্বকাপে ভারতের ভাগ্য কোহলির হাতে

শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে রূপান্তর ঘটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি টিমের। তার পর ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার দায়িত্বে ক’বছর থেকেও ছেড়ে দেন ছেলেমেয়েকে বড় করবেন বলে। এখন তারা বড় হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় কোচের চাকরি যদি বিশ্বকাপের পর আবার খোলে। তিনি, টম মুডি আবার ঝাঁপাতে প্রস্তুত। অ্যাডিলেড ওভালে কমেন্ট্রি করার ফাঁকে সাক্ষাত্‌কার দিলেন এবিপি-কে।

গৌতম ভট্টাচার্য
অ্যাডিলেড শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৭
Share: Save:

শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে রূপান্তর ঘটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি টিমের। তার পর ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার দায়িত্বে ক’বছর থেকেও ছেড়ে দেন ছেলেমেয়েকে বড় করবেন বলে। এখন তারা বড় হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় কোচের চাকরি যদি বিশ্বকাপের পর আবার খোলে। তিনি, টম মুডি আবার ঝাঁপাতে প্রস্তুত। অ্যাডিলেড ওভালে কমেন্ট্রি করার ফাঁকে সাক্ষাত্‌কার দিলেন এবিপি-কে।

প্রশ্ন: ভারতের রাউন্ড দ্য উইকেট স্ট্র্যাটেজি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ভাষ্যকাররা মুণ্ডপাত করছেন। আপনি যে প্রাইভেট রেডিও স্টেশনে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন তার সিগন্যাল প্রেসবক্স থেকে ধরা যাচ্ছে না। একটু বলবেন আপনার কী মতামত?

মুডি: আমি এটা জানতে খুব ইন্টারেস্টেড যে, এই ছকটা শুরু থেকে ওরা কেন নিল? নিশ্চয়ই অনেক ভাবা হয়েছে। টিম অনেক গবেষণা করে দেখেছে এটা করলে ওদের উইকেট পেতে সুবিধে হবে। আমার শুধু একটাই বক্তব্য, অস্ট্রেলিয়ার কুড়ি উইকেট তোলার জন্য এটাই কি উপযুক্ত স্ট্র্যাটেজি? কারণ যখনই তুমি প্রথম বল থেকে এই স্ট্র্যাটেজিতে চলে যাচ্ছ, ক্রিকেটের একটা আউটই তো তোমার হিসেব থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেটা হল এলবিডব্লিউ। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের ভেতরে সুইং করে বল ঢুকছে, তুমি তো আর আউটই পাবে না। এই স্ট্র্যাটেজিতে সবচেয়ে ভুগল আমার মতে শামি। ওর বলটা সুইং করে ভেতরে ঢোকে। কিন্তু রাউন্ড দ্য উইকেট আসা মানে তো অ্যাঙ্গলটাই বদলে গেল। ভারত যত চুলচেরা ভেবেই স্ট্র্যাটেজিটা নিয়ে থাকুক, আমার মতে ওটা প্ল্যান ‘বি’ হওয়া উচিত ছিল। প্ল্যান ‘এ’ ওভার দ্য উইকেট। না খাটলে তখন এটা।

প্র: একই সঙ্গে রাউন্ড দ্য উইকেট আসাটা তো বিপক্ষের ডান-হাতি অফস্পিনারের জন্য ফুটমার্কসও তৈরি করে দিচ্ছে। এটা তো নাথন লিয়ঁকে ফ্রি গিফ্ট।

মুডি: আমার মনে হয় ওরা বিপক্ষের কী সুবিধে হতে পারে ভেবে ছকটা তৈরি করেনি। ভেবেছিল নিজেদের দশ উইকেট পেতে এই ভাবে সুবিধে হবে। এখানে আমি তর্ক করতে চাই— দশ উইকেট যে সব নিয়মে পাওয়া যাবে তার একটা ধারাকে তো নিজেরাই উড়িয়ে দিচ্ছ— এলবিডব্লিউ!

প্র: ভারতীয় ক্রিকেটের একটা চূড়ান্ত টালমাটাল আর অস্থির বছর ছিল ২০০৫। সে বার ভারতীয় কোচের পদে আপনি আবেদন করেও গ্রেগ চ্যাপেলের কাছে হেরে যান। সে বারের তুলনায় এখন কি উপমহাদেশীয় টিমকে কোচিং করানোর ব্যাপারে আরও বেটার অবস্থায় আছেন বলে মনে করেন?

মুডি: অবশ্যই। জীবনে অভিজ্ঞতা একটা মস্ত বড় জিনিস। সে ক্রিকেট হোক। জীবনের যে কোনও লাইন হোক— চাকরি কী ব্যবসা। আমার কোচিং জীবনে যে দু’বছর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, অনেক শিখেছি। জ্ঞান বেড়েছে, কোচিং স্কিল বেড়েছে, উপমহাদেশীয়দের মনোভাব সম্পর্কেও ধারণা বেড়েছে।

প্র: উপমহাদেশীয় মনোভাব মানে?

মুডি: মানে আমি বুঝতামই না মানসিকতাতে কত রকম সমস্যা হয়। কমিউনিকেশনে হয়। শ্রীলঙ্কা কোচ হয়েই প্রথমে আমি প্লেয়ারদের সঙ্গে গ্রুপে আর আলাদা করে একা-একা কথা বলি। আমার ধারণা ছিল, কী বোঝাতে চাই সেটা সবার কাছে একেবারে জলের মতো পরিষ্কার করতে পেরেছি। তার পর একদিন মাহেলা এসে আমাকে বলল, কোচ তোমার সঙ্গে কথা আছে। বললাম, কী কথা? এ বার বলল, কোচ একটা ছোট প্রবলেম হয়েছে। তুমি এত দিন ধরে কী বলছ মালিঙ্গা আমাকে বলেছে ও একটা কথাও জড়ানো ইংরেজির জন্য বোঝেনি (হাসি)। শুনে প্রথম বুঝলাম এই চাকরির জন্য আলাদা তৈরি হতে হয়। আর সেটাই চ্যালেঞ্জ।

প্র: ভারতীয় কোচের চাকরিটা বিশ্বকাপের পর খুলবে। আপনি তো এমনিতেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে দু’বছর ধরে কোচিং করছেন। আবার কোচের জন্য আবেদন করার সমস্যা কোথায়?

মুডি: এতটুকু নেই। ভারতীয় ক্রিকেট টিমকে কোচিং করানো তো মাউন্ট এভারেস্টে ওঠার মতো। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্লাস আপনাদের এই টিমকে দেখে মনে হচ্ছে বিদেশে টেক-অফ করার জন্য দু’পা বাড়িয়ে রয়েছে। একেবারে ইয়ং টিম। এদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেলে দারুণ লাগবে। আর বললাম তো, পাঁচ বছর আইপিএলে কোচিং করানোর পর উপমহাদেশীয় মানসিকতা এখন আমি ভালই বুঝতে পারি।

প্র: পারিবারিক যে সমস্যাটা ছিল ছেলেদের সময় দেওয়া। সেটা কি আর নেই?

মুডি: ছেলেদের নয়। ছেলে আর মেয়ে। ছেলে এখন ইউনিভার্সিটি চলে গেছে। মেয়ের হাইস্কুল শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী বছরে। সো আমি ঝাড়া হাত-পা।

প্র: এই কয়েক বছর দুটো মহাদেশেই কোচিং করিয়ে কী মনে হল? ভারতীয় উপমহাদেশ কী নিতে পারে অস্ট্রেলিয়ার? আর অস্ট্রেলিয়াই বা কী নিতে পারে ভারতের?

মুডি: দু’দেশই যেটা নিতে পারে তা হল একে অন্যের ডেরায় গিয়ে ঠিকমতো মানিয়ে নিতে পারা। ভারতের এই টিমকে দেখে যেটা মনে হচ্ছে। এরা বিদেশে এসে প্রচণ্ড লড়াই দিতে খুব উদগ্রীব। ওদের খিদেটা খুব সহজেই ধরা পড়ছে। এই যে কোনও পরিবেশে গিয়ে মানিয়ে নেওয়া, এটা আমি শ্রীলঙ্কান কোনও কোনও ক্রিকেটারের মধ্যে অসামান্য দেখেছি। এ বার সেই অ্যাটিটিউডটাই ভারতের গোটা গ্রুপে আনতে হবে।

প্র: শ্রীলঙ্কায় কার মধ্যে দেখেছেন?

মুডি: কুমার সঙ্গকারার মধ্যে। অসাধারণ মানসিকতা। বিশ্বের যে কোনও মাঠে ফেলে দিন, ঠিক মানিয়ে নেবে ওখানকার মতো করে। কুমার অতুলনীয়। দশটা ডাবল হান্ড্রেড আছে ওর। ভাবা যায়!

প্র: আপনার কি মনে হয় না লারা-সচিন-কালিসের একই সঙ্গে সঙ্গকারার নামও উচ্চারিত হওয়া উচিত?

মুডি: অবশ্যই হওয়া উচিত। এটা খুব অন্যায় যে, হয় না। কুমারের গড় ৫৮। সেটা যখন কিপিং করছে। আর যখন শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছে, তখন ৬০। মাহেলার মধ্যে লিডারশিপ কোয়ালিটি খুব বেশি। সবাইকে নিয়ে চলতে পারে। কিন্তু কুমারের পাশে আমি ওকেও রাখব না। কুমার পারফর্মার হিসেবে অসাধারণ। পারফেকশনের শেষ কথা।

প্র: কর্ণ শর্মা আপনার অধীনে আইপিএল খেলে প্রথম নজরে পড়েন। এখানে কি কর্ণ মোহভঙ্গই করলেন না?

মুডি: আমি মোহভঙ্গ বলব না। বলব, জীবনের প্রথম টেস্ট খেলার অনেক চাপ থাকে। অনেক সীমাবদ্ধতাও থাকে। নতুন আসা ছেলেকে একটা সার্বিক বোলিং প্ল্যানের মধ্যে নিজেকে ফিট করাতে হয়। আমার মনে হয় স্ট্র্যাটেজির কিছু কিছু বদল কর্ণের করা উচিত ছিল।

প্র: আর একটা মতবাদ হল, সানরাইজার্সের নেটে ওয়ার্নার ওকে এত খেলেছেন যে, কর্ণের রহস্যময়তা, যেটা লেগস্পিনারের আসল অস্ত্র, সেটাই কাজ করেনি।

মুডি: আমার মনে হয় না। সানরাইজার্স নেটে ওয়ার্নার খুব বেশি খেলেনি কর্ণকে। আপনাকে একটা কথা বুঝতে হবে। ওয়ার্নার বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের এক জন। যে কোনও বোলারকেই ও ভাল খেলে।

প্র: দুটো বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য আপনি। গত তিরিশ বছরের সেরা অস্ট্রেলিয়া টিমে ওয়ার্নারকে রাখবেন?

মুডি: ওয়ার্নার ওর সেরা ফর্মটা সবে খুলতে শুরু করেছে। এখুনি অ্যাডজেক্টিভ দিয়ে বড় বড় কথা বলতে চাই না। তবে এ ভাবে আগামী ক’বছর খেললে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার গত তিরিশ বছরের সেরাদের মধ্যে ও ঢুকবে।

প্র: বিশ্বকাপে কী হবে?

মুডি: বিশ্বকাপে এই প্রথম টি টোয়েন্টি স্কিলস ভীষণ ভাবে গোটা টুর্নামেন্টে ফুটবে।

প্র: যেমন?

মুডি: যেমন শুরুর দিকে পাওয়ার প্লে-তে টিমগুলো প্রচণ্ড মারবে। শেষ দিকে রান আটকে রাখার মোক্ষম বলগুলো প্রয়োগ করবে। ফিল্ডিং হবে বিদ্যুতের মতো। আমাদের দেশের এত বড় বড় মাঠে ফিল্ডিংটা ভীষণ ইম্পর্ট্যান্ট। এ বার আরও হবে। আমার মতে চূড়ান্ত দল নির্বাচনে যদি দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সমান-সমান হয়, যার ফিল্ডিং ভাল, তার নির্বাচিত হওয়া উচিত। এই বিশ্বকাপ যে গতিতে পৌঁছবে, তাতে দারুণ ট্যালেন্টেড কিন্তু ফিল্ডিংয়ে প্যাসেঞ্জার ট্রেন— তার কোনও জায়গা নেই।

প্র: ফেভারিট কারা?

মুডি: আমার সেমিফাইনাল বাছা এই চারটে টিম: অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড আর ইন্ডিয়া।

প্র: এর মধ্যে?

মুডি: এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া আর সাউথ আফ্রিকা। নিউজিল্যান্ডকে আমি উড়িয়ে দিতে চাই না। ওরা নিজের দেশে খেলছে। সো ইন্ডিয়া থাকবে ফোর্থ। ঠিক এই মুহূর্তে আমার তাই বিচার।

প্র: ভারতের আসল লোক কে হবেন? যাঁর পারফরম্যান্সের ওপর টিমের জেতা-হারা হয়তো নির্ভর করে থাকবে?

মুডি: নিঃসন্দেহে বিরাট কোহলি। ওয়ান ডে-তে কী ব্যাটিংটাই না ও করে। একা ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়। আমার মনে হয় ইন্ডিয়া বিরাটের দিকেই তাকিয়ে থাকবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gautam bhattacharya Virat Kohli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE