রিয়ালের তৃতীয় গোলের পর উল্লাস রোনাল্ডোর। ছবি: এএফপি।
রিয়াল মাদ্রিদ-৩ (বেল, ইস্কো, রোনাল্ডো)
বরুসিয়া ডর্টমুন্ড-০
ক’দিন ধরেই একটা কথা শুনছিলাম। গতবার এই বরুসিয়ার কাছেই সেমিফাইনালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের। রোনাল্ডোরা এ বার বদলা নেওয়ার জন্য তৈরি।
টিভিতে ম্যাচটা যা দেখলাম তাকে কিন্তু বদলা বললে কমই বলা হবে। একেই গতবার বরুসিয়ার জার্সি গায়ে খেলা গোটজে চলে গিয়েছে বায়ার্নে। ম্যাচ সাসপেনশন আর চোটের কারণে বুধবার রাতে মাঠে ছিল না লেওয়ানডস্কি, সুবোতিচ, বেন্ডার, গুন্দোগান-সহ বরুসিয়ার প্রথম দলের ছ’জন। নিজেদের মাঠে রিয়াল এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করল পুরোদমে। এতটাই যে, ডর্টমুন্ডে ফিরতি ম্যাচের আগেই বের্নাবাওতে জার্মান ক্লাবকে এক প্রকার উড়িয়ে সেমিফাইনালের টিকিট প্রায় পাকা করে ফেলল কার্লো আন্সেলোত্তির দল। পরের সপ্তাহে বিরাট অঘটন না ঘটলে রোনাল্ডোদের শেষ চারে যাওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে আমার ধারণা।
তবে একটা কথা বলব। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এক মরসুমে ১৪ গোল করে রোনাল্ডোর রেকর্ড বুকে ঢুকে পড়ার দিনে ও কিন্তু সাধারণত যে দুর্ধর্ষ স্পিডে অপারেট করে থাকে সেটা ওর খেলায় দেখতে পেলাম না। হয়তো চোট রয়েছে বলে। যে কারণে কোচ ওকে পুরো সময় মাঠেও রাখলেন না। ১০ মিনিট আগেই তুলে নিলেন। তবে যতক্ষণ মাঠে ছিল রিয়াল সুপারস্টার, ততক্ষণ নিজের মেজাজেই খেলেছে।
এ ধরনের হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে লড়াইয় ঘরের মাঠে শুরুতেই গোল পেয়ে গেলে প্রতিপক্ষ চাপে পড়বেই। গত রাতে ঠিক সেটাই হতে দেখলাম। রিয়ালের বিবিসি যাদের ফুটবল মহলে ইদানীং বলা হচ্ছে সেই বেল, বেঞ্জিমা আর ক্রিশ্চিয়ানো শুরু থেকেই আক্রমণে যে ঝড় তুলল, তা থামানো সম্ভব হয়নি য়ুরগেন ক্লপের দলের। হাফটাইমের আগেই বেল আর ইস্কোর গোলে পিছিয়ে পড়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য বরুসিয়ার হামেলসরা খেলাটা একটু ধরার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রিয়াল ডিফেন্সে পেপে একাই একশো হয়ে সেই পাল্টা আক্রমণ সামলে দেওয়ায় বুন্দেশলিগার দল হালে পানি পায়নি। তবে তিন গোল হজম করার ম্যাচেও আমার চোখ টেনেছে বরুসিয়া গোলকিপার উইদেনফেলার। ও যে ভাবে বেল ও মদরিচের দূরপাল্লার বাঁক খাওয়ানো শট বাঁচাল, অনবদ্য। ছেলেটা বরুসিয়া গোলপোস্টের নীচে না থাকলে রিয়ালের গোল আরও বাড়ত জোর দিয়ে বলতে পারি।
ম্যাচের আগে টিভিতে যখন রিয়াল টিম দেখাচ্ছিল, তখন গত এল ক্লাসিকোতে দুর্দান্ত খেলা ডি’মারিয়াকে দেখতে না পেয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এ রকম প্রতিশোধের ম্যাচে ডি’মারিয়া নেই কেন? পরে ধারাভাষ্যে জানলাম, অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওর জায়গায় ইস্কো ঢুকেছে শেষ মুহূর্তে। কিন্তু খেলা দেখে তো একবারও মনে হল না, ইস্কো কোচের চটজলদি সিদ্ধান্তে প্রথম এগারোয় ঢুকেছে। যে ইস্কো আগে স্ট্রাইকারের পিছনে ‘ফলস নাইন’ হিসেবে কোচের পরিকল্পনায় থাকত, সে যে মিডফিল্ডেও এমন অনবদ্য খেলবে সত্যিই ধারণা ছিল না। আর ৪-৩-৩ ছকে রিয়ালের বিবিসি-কে মিডফিল্ড থেকে জাবি আলোন্সো, মদরিচ, ইস্কোদের সাপোর্টিং ফুটবলের জন্যই এই ম্যাচে প্রথম থেকেই ঝলমলে দেখাচ্ছিল।
মদরিচের নিখুঁত ডিস্ট্রিবিউশনে শুরু থেকেই ম্যাচের দখল চলে গিয়েছিল রোনাল্ডোদের পায়ে। আর বারবার ওভারল্যাপে এসে কোয়েন্ত্রাও, কারভাজালরা ডিফেন্সিভ থার্ডে হানা দেওয়ায় এক-এক সময় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছিল জার্মানদের যাবতীয় প্রতিরোধ। রিয়াল মাঝমাঠে এই ত্রিভুজ পাওয়ার হাউসকে অকেজো করে দেওয়ার অঙ্ক বরুসিয়া কোচের নোটবুক থেকে যেন বেরোতে দেখলাম না। ৪-২-৩-১ ছকে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে নেমেও দেখনদার কিছইু সে ভাবে করতে পারেনি বরুসিয়া। হেনরিখ, রিউসরা কেমন যেন অগোছাল ভাবে খেলে গেল নব্বই মিনিটই। শুরুতেই কারভাজালের থেকে বল পেয়ে বেলের গোল থেকে বিপক্ষের যে অগোছাল চেহারার সূচনা। ইস্কোর গোলের সময়ও একই ছবি। আর রোনাল্ডো যখন ৩-০ করল ততক্ষণে বরুসিয়ার কাঁধ ঝুলে গিয়েছে।
গতবার জার্মানিতে রিয়ালকে ৪-১ হারিয়েছিল বরুসিয়া। সেই ম্যাচে একাই একশো হয়ে জিতিয়েছিল লেওয়ানডস্কি। এ বার সেই পুরনো স্মৃতি আর সেই ফুটবলারই ভরসা যুরগেন ক্লপের। কারণ, ফিরতি ম্যাচে লেওয়ানডস্কি ফিরবেন বরুসিয়া দলে। তবে রিয়াল মাঝমাঠ বুধবার রাতের মতো খেললে অঘটনের কোনও আশাই দেখতে পাচ্ছি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy