Advertisement
E-Paper

ভারত সিডনিতে অস্ট্রেলিয়াকে সামলাতে পারবে না, ক্লার্কদের হারাতে হবে অ্যাডিলেডে

ওপরের হেডলাইনের মতো বিতর্কিত মন্তব্য কেউ করবেই না। বিশেষ করে টুর্নামেন্টের এই পর্যায়ে। কোয়ার্টার ফাইনালিস্টরাই ঠিক হয়নি তো সেমিফাইনাল নিয়ে আগাম কে মন্তব্য করতে চাইবে? কিন্তু তিনি জন বুকানন বরাবরই আলাদা। ক্রিকেটবোধের ওপর ভিত্তি করে জ্যোতিষচর্চা আর ঠোঁটকাটা বিশ্লেষণকে সাহস করে বরাবর জীবনে চলেছেন। বুধবারও ব্রিসবেনের কাছাকাছি একটা ফার্মহাউসে থাকার সময় অকল্যান্ড থেকে আনন্দবাজারের ফোন পেয়ে ভবিষ্যতগণনায় রাজি হয়ে গেলেন...

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০৪:০৩

ওপরের হেডলাইনের মতো বিতর্কিত মন্তব্য কেউ করবেই না। বিশেষ করে টুর্নামেন্টের এই পর্যায়ে। কোয়ার্টার ফাইনালিস্টরাই ঠিক হয়নি তো সেমিফাইনাল নিয়ে আগাম কে মন্তব্য করতে চাইবে? কিন্তু তিনি জন বুকানন বরাবরই আলাদা। ক্রিকেটবোধের ওপর ভিত্তি করে জ্যোতিষচর্চা আর ঠোঁটকাটা বিশ্লেষণকে সাহস করে বরাবর জীবনে চলেছেন। বুধবারও ব্রিসবেনের কাছাকাছি একটা ফার্মহাউসে থাকার সময় অকল্যান্ড থেকে আনন্দবাজারের ফোন পেয়ে ভবিষ্যতগণনায় রাজি হয়ে গেলেন...

প্রশ্ন: বিশ্বকাপ কারা জিতবে?

বুকানন: চারটে টিমের যে কোনও কেউ। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা বা ইন্ডিয়া।

প্র: এরাই আপনার তা হলে সেমিফাইনালিস্ট?

বুকানন: না সেটা বলছি না। হতেই পারে এদের যে কেউ কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে গেল। আমার তো মনে হয় এই বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে অনেক রোমাঞ্চ দেখার মালমশলা জমিয়ে রেখেছে। তবে সেমিফাইনাল যারাই যাক, চ্যাম্পিয়ন হবে এই চারটে দেশের কেউ।

প্র: শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান আপনি ধরছেন না?

বুকানন: না। পাকিস্তান এক-আধ দিন দারুণ চমকে দেবে। হয়তো ফেভারিটদের হারিয়ে দেবে। কিন্তু টানা জিতে চলা ওদের পক্ষে বোধহয় সম্ভব নয়।

প্র: দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কে অনেকে কিন্তু আশা হারিয়ে ফেলছে।

বুকানন: আমি সেই দলে পড়ি না। আমার তো মনে হচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে অন্য সাউথ আফ্রিকাকে দেখবেন। মর্কেল, স্টেইন এরা অ্যাটিটিউড কতটা নকআউট ম্যাচে গিয়ে চেঞ্জ করে দেখবেন। ইমরান তাহির সম্পর্কেও আমি আশাবাদী। যত টুর্নামেন্ট এগোবে, ততই ও ব্যাটসম্যানদের ঝামেলায় ফেলবে।

প্র: আপনি কি বলতে চাইছেন যে ডে’ভিলিয়ার্সরা প্রতিবার যেমন গ্রুপ লিগে দারুণ খেলে নক আউটে ছিটকে যায়, তাই ইচ্ছাকৃত নিজেদের দেরিতে পিক করাচ্ছে?

বুকানন: হতে পারে (হাসি)। নাও হতে পারে। আমি শুধু এটুকু বলছি, ওদের যা টিম কখনও আশা ছাড়ার নয়। এতগুলো এক্স ফ্যাক্টরওয়ালা প্লেয়ার রয়েছে, যে কোনও সময় ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে।

প্র: যেমন?

বুকানন: যেমন ডে’ভিলিয়ার্স। কী ব্যাটসম্যান! এই ফর্ম্যাটে যা খুশি তাই করতে পারে।

প্র: সে তো ভারতেরও কোহলি আছে। শ্রীলঙ্কার আছে সঙ্গকারা।

বুকানন: এক হল না। সঙ্গকারা বা কোহলি দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। অসামান্য স্কিল ওদের। কিন্তু ওরা স্কিল নির্ভর প্লেয়ার। দানবীয় লণ্ডভণ্ড করে দেওয়া ওদের পক্ষে সম্ভব বলে আমি মনে করি না।

প্র: সেটা আপনার মতে আর কে কে পারেন?

বুকানন: ডে’ভিলিয়ার্স আছে। গেইল আছে। ম্যাক্সওয়েল। বোলিংয়ে সাউদি, যে হিট করেও বল করতে পারে। সুইংও করাতে পারে। যে কোনও সময় দু’টো উইকেট নিয়ে নিল বা মোক্ষম সময়ে একটা মেডেন। ব্যস, ওখানেই তো খেলা ঘুরে গেল। মিচেল স্টার্ক যেমন। যে কোনও সময় ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

প্র: যে ব্যাটসম্যানদের কথা বললেন, তাঁরা কী পারেন যা সঙ্গা বা কোহলির দ্বারা সম্ভব নয়?

বুকানন: এরা স্কিলে যদি বা পিছিয়ে থাকে, পাওয়ার হিটিংয়ে এগিয়ে। এরা ৫০ বলে সেঞ্চুরি করতে পারে। ৮ বলে ৩৫ করে দিতে পারে। কুড়ি বলে ৫০ করে দিতে পারে। একটা ম্যাচ এদের ইনিংসের ওপর ভর করে একেবারে ইউ-টার্ন নিয়ে নিতে পারে। এটাই এদের এক্স ফ্যাক্টর।

প্র: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কোনও কোনও মহানায়কের গোধুলিবেলায় আবির্ভূত হয়েছে বলে কোনও দিনই এঁরা এ ধরনের ক্রিকেটে আর মাস্টার হতে পারবেন না, আপনি নিজের বইয়ে লিখেছিলেন। নাম করেছিলেন সচিন, সৌরভ আর পন্টিংয়ের। তখনকার মতো প্রবল বিতর্ক হলেও পরে দেখা গেছিল আপনিই ঠিক ছিলেন। এ বার বলুন তো, ওয়ান ডে বিশ্বকাপটাই কি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়ে যাচ্ছে না?

বুকানন: আমার মনে হয় না। বরঞ্চ আমার তো মনে হচ্ছে টিমগুলোর ব্যাটিং মডেল এ বার সেই সাবেকি টার্গেট সেটিংয়ে ফিরে গিয়েছে। সেই প্রথম ১০ ওভার দেখে খেলা। তার পর একটা ফ্লো রেখে শেষ ১৫/২০ ওভারে প্রচণ্ড রান রেট বাড়িয়ে নেওয়া। একমাত্র তফাত হল, এখন টি-টোয়েন্টি স্কিলসম্পন্ন হওয়ায় টিমগুলো অনেক কনফিডেন্ট যে, শেষ পনেরো ওভারে ১০/১২ করেও ওভারপিছু তুলে দিতে পারবে। তফাত বলতে এটা।

প্র: কিন্তু পাওয়ার হিটিংয়েও তো নতুন কত স্টাইল দেখা যাচ্ছে। আপনি বেসবল থেকে ক্রিকেটের ধার নেওয়ার কথা বলতেন কেকেআরে থাকার সময়। এ বার ম্যাকালাম এমন কিছু শট খেলছেন যার ক্রিকেট অভিধানে কোনও নামই নেই। বরং বেসবলের কাছাকাছি।

বুকানন: আমি সম্পূর্ণ একমত। চলতি বিশ্বকাপে বেসবলের শট ক্রিকেটে চলে এসেছে। বেসবল পিচারের মতো পা দুটো ফাঁক করে ম্যাকালাম সুইং করছে। এই ওয়াইড স্টান্স, সুইং আর স্ম্যাশ করার ধরনটা পুরো বেসবল। আমি জানতাম এটা হবেই। অনিবার্য ছিল।

প্র: তা হলে ম্যাকালাম নতুন ব্যাটিং টেকনিকের জন্ম দিলেন?

বুকানন: বিশ্বকাপে ম্যাকালাম। কিন্তু আদি আবিষ্কর্তা আমি বলব জেসন গিলেসপিকে। আমি অস্ট্রেলিয়ার কোচ থাকাকালীন অনেক বার দেখেছি গিলেসপি পা ফাঁক করে ওই রকম বেসবল পিচারের মতো দাঁড়িয়ে সুইং অভ্যেস করছে। ওর কথা কেউ জানে না। তবে বিশ্বকাপে প্রথম এটা প্রতিষ্ঠা পেল।

প্র: ব্যাটসম্যানদের ঝুড়ি-ঝুড়ি রান তোলা নিয়ে বিশ্বকাপে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন ব্যাট-বলের লড়াইয়ে কোনও ভারসাম্য থাকছে না। ব্যারি রিচার্ডস তো বলেছেন ব্যাট ট্যাম্পারিং হচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া উচিত। আপনি কী মনে করেন?

বুকানন: এ বার একে নিয়মটা ব্যাটসম্যানদের ফেভারে রয়েছে যে, সার্কেলের ভেতর সব সময় পাঁচ জন থাকবে। তার ওপর নিউজিল্যান্ডে পুরো ব্যাটিং ট্র্যাক। অস্ট্রেলিয়াতেও মোটামুটি তাই। নিয়ম আর কন্ডিশন দুটোই ব্যাটসম্যানদের পক্ষে চলে গেছে।

প্র: এটা থামানো হবে কী করে? সঞ্জয় মঞ্জরেকর তো আইসিসিকে চিঠি লিখেছেন?

বুকানন: আমি ঠিক শিওর নই ও ভাবে কন্ট্রোল করা যাবে কি না। এটা তো ক্রিকেট স্পেসিফিক সমস্যা নয়। প্রযুক্তি এসে তো অন্য খেলাগুলোকেও বদলাচ্ছে। গল্ফ বদলাচ্ছে। টেনিস বদলেছে। টেনিস র্যাকেটের প্রযুক্তি তো আমরা এখনও বন্ধ না করে আধুনিক সময়ের প্রভাব হিসেবে ধরে নিয়েছি। ক্রিকেট ব্যাটের বেলা কি অন্য রকম হবে? আমি জানি না।

প্র: যাক এ বার বলুন সবাই যেটা পড়তে চাইবে। ইন্ডিয়াকে কেমন দেখছেন? অস্ট্রেলিয়ায় ইন্ডিয়া পার্ট টু।

বুকানন: হ্যাঁ পার্ট টু-ই বটে। যারা অনেক স্মার্ট। অবশ্য কাল ম্যাচের পর ধোনির কথা আমি টিভিতে শুনছিলাম। সেটা শুনে মনে হল ইন্ডিয়া পার্ট ওয়ানটাও স্মার্টই ছিল। আমরা হয়তো ধরতে পারিনি।

প্র: কেন?

বুকানন: কারণ প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশনে ধোনির কথা শুনে আমার মনে হল টেস্ট সিরিজে দারুণ লড়াই করার পর ইন্ডিয়া ট্রায়াঙ্গুলার সিরিজটাকে সিরিয়াসলি নেয়নি। তখন থেকেই নীরবে ওরা কাপের জন্য গোছাচ্ছিল। ফিটনেস তৈরি করছিল। আমি তো ওদের ম্যাচগুলো যতটা পারি টিভিতে দেখেছি। এত ফিট ইন্ডিয়ান টিম আমার জীবনে দেখিনি। সার্কেলের মধ্যে যেন বিদ্যুত্‌ খেলছে। ধোনিও স্টাম্পের পেছনে খুব শার্প। ইন্ডিয়ান বোলিংও ধারাবাহিক ভাল করছে। এই উন্নতি হঠাত্‌ একটা সকালে উঠে হতে পারে না। নিশ্চয়ই তিন-চার সপ্তাহ ধরে ওরা তৈরি হয়েছে।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

প্র: কোয়ার্টার ফাইনালে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ মেলবোর্নে ভারতের সামনে পড়বে।

বুকানন: ওহ সেটা কোনও প্রবলেম হওয়া উচিত নয়। সেমিফাইনাল...উঁহু...

প্র: উঁহু কেন?

বুকানন: ইন্ডিয়া সেমিফাইনাল খেললে সিডনি তো?

প্র: সম্ভবত তাই। আর সামনে অস্ট্রেলিয়া পড়া উচিত। যদি ধরে নেওয়া যায় অস্ট্রেলিয়া হারাবেই পাকিস্তানকে।

বুকানন: দেখুন ভাই সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া-ইন্ডিয়া খেলা হলে আমি কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকে ফেভারিট ধরব। আপনার পাঠকদের পড়তে হয়তো ভাল লাগবে না কিন্তু এটাই আমার মনের কথা।

প্র: কী বলছেন? এই নতুন ভারতকে এ বারের গ্রীষ্মে মাইকেল ক্লার্কের টিম দেখল কোথায়?

বুকানন: কিছু আসে যায় না। সিডনিতে বল বেশি ঘুরছে না। অনেক ডেড পিচ। সেখানে অস্ট্রেলিয়াকে সামলানো মুশকিল হবে। সিডনি কেন মেলবোর্নেও অস্ট্রেলিয়াকে হারানো শক্ত।

প্র: আপনি তো এমন বলছেন যেন অস্ট্রেলিয়া অপরাজেয়। এই টুর্নামেন্টেই তো ক্লার্কের টিম একটা ম্যাচ দিব্য হেরেছে।

বুকানন: হেরেছে কিন্তু একটা নির্দিষ্ট কন্ডিশনে। সিডনি-মেলবোর্নে খেলা হলে ওটা অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খুব সুবিধেজনক হয়ে যাবে।

প্র: কোথায় হবে না?

বুকানন: অ্যাডিলেডে হবে না। আমার মতে তাই কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় থাকবে। অ্যাডিলেডের সাইড বাউন্ডারি ছোট। ড্রপ-ইন উইকেট। ড্রপ-ইন পিচে ব্যাটসম্যান দুমদাম মেরে দিতে পারে। ভারতের বেস্ট চান্স হবে যদি অ্যাডিলেডে পাকিস্তান হারিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে।

প্র: বলছেন তখন পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারতের ফাইনাল যাওয়াটা সহজ?

বুকানন: ইয়েস অনেক সহজ!

world cup 2015 gautam bhattacharya john buchanan india
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy