Advertisement
১৬ মে ২০২৪

মর্গ্যানের ছোঁয়ায় অক্সিজেন পেয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল

দু’বছর আগে শেষ বার ইস্টবেঙ্গলকে ফেড কাপ এনে দেওয়া কোচের সেই বিখ্যাত লাক ফ্যাক্টরই কি বর্ষবরণের দিনে মুক্ত বাতাস এনে দিল ইস্টবেঙ্গলকে? বেঁচে থাকার অক্সিজেন দিয়ে গেল আর্মান্দো কোলাসোর ছেলেদের? খেলা শুরুর মুখে বলজিত্‌ সিংহ আর কেভিন লোবো তাঁকে দেখতে পেয়ে রিজার্ভ বেঞ্চে এসে বসার জন্য মজা করে ডাকছিলেন। কিন্তু প্রাক্তন লাল-হলুদ কোচ তা দেখে হেসেছেন। রেনেডি সিংহদের নিয়ে বসেন গ্যালারিতে।

ডুডুর শেষ মুহূর্তের গোল। বুধবার মারগাওয়ে।

ডুডুর শেষ মুহূর্তের গোল। বুধবার মারগাওয়ে।

রতন চক্রবর্তী
মারগাও শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৬
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল ১ (ডুডু)

রয়্যাল ওয়াহিংডো ০

দু’বছর আগে শেষ বার ইস্টবেঙ্গলকে ফেড কাপ এনে দেওয়া কোচের সেই বিখ্যাত লাক ফ্যাক্টরই কি বর্ষবরণের দিনে মুক্ত বাতাস এনে দিল ইস্টবেঙ্গলকে? বেঁচে থাকার অক্সিজেন দিয়ে গেল আর্মান্দো কোলাসোর ছেলেদের?

খেলা শুরুর মুখে বলজিত্‌ সিংহ আর কেভিন লোবো তাঁকে দেখতে পেয়ে রিজার্ভ বেঞ্চে এসে বসার জন্য মজা করে ডাকছিলেন। কিন্তু প্রাক্তন লাল-হলুদ কোচ তা দেখে হেসেছেন। রেনেডি সিংহদের নিয়ে বসেন গ্যালারিতে।

সেখানে বসেই কখনও উচ্ছ্বাসে হাততালি দিচ্ছিলেন। কখনও হতাশায় মাথায় হাত উঠছিল তাঁর। আবার কখনও ডুডু-র্যান্টিদের গোলের পর গোল মিস দেখে আফসোসে মুখে শব্দ করেও ফেলছিলেন আগের মতোই। গ্যালারিতে ট্রেভর মর্গ্যানকে দেখে মনে হচ্ছিল আর্মান্দো কোলাসো নন, তিনি এখনও ইস্টবেঙ্গল কোচ। খেলা শেষ হওয়ার দশ সেকেন্ড আগে ডুডু ওমাগবেমির গোলটা দেখে স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ার সময় বলে মর্গ্যান বলে গেলেন, “ইস্টবেঙ্গলের কোচ ছিলাম। ওদের সমর্থন করতে এসেছিলাম। টিমটা জেতায় ভাল লাগছে।” শেষ বার ব্রিটিশ কোচের হাত ধরেই এসেছিল ফেড কাপ। শিলিগুড়িতে। তীব্র চাপের মুখে পড়ে যাওয়া কিছু ফুটবলার তাঁকে মাঠে আসতে অনুরোধ করেছিলেন এ দিন। গোয়ায় ছুটি কাটাতে আসা লাল-হলুদের লাকি কোচ প্রায় তিরিশ কিলোমিটার দূরের স্টেডিয়ামে চলে এসেছিলেন মেহতাবদের টানে। আপনার ফেলে যাওয়া টিমের এই দূর্দশা দেখে কেমন লাগছে? পুরনো ছাত্ররা কি আগের ফর্মেই আছে? পেশাদার মর্গ্যান বললেন, “আমি তো এখন কোচ নই, যে দায়িত্বে তাঁকে প্রশ্ন করুন।”

যাঁর দিকে ‘আঙুল’ তুলে মর্গ্যান চলে গেলেন, সেই আর্মান্দোকে দেখে মনে হচ্ছিল, এই মাত্র আরব সাগরের ডুবে যাওয়া নৌকো থেকে বেঁচে ফিরেছেন। “অক্সিজেন পেলাম বেঁচে থাকার।” বলার পর জোরে শ্বাস নেন। “ম্যাচটা না জিতলে তো আজই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হত আমাদের।” কিন্তু ইনজুরি টাইম নিয়ে একাশি মিনিট বিপক্ষকে দশ জনে পেয়েও কেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল গোলের জন্য? ইস্টবেঙ্গলের গোয়ান কোচ ঢোক গেলেন। “বিপক্ষ সারাক্ষণ যদি গোলের দরজা বন্ধ করে রাখে তা হলে কী হবে। দলের খেলায় আমি খুশি। আপনি এত সমালোচনা করছেন, মাঠে একবার বল পায়ে নামুন।”

চেন্নাইয়ের রেফারি ভাইরামুথুর একটা সিদ্ধান্ত আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের। শুরুতেই দশ জন হয়ে গিয়েছিল সন্তোষ কাশ্যপের দল। অভিষেক দাশকে বিশ্রী ফাউল করে লালকার্ড দেখলেন ওয়াহিংডোর লালমাংঘাইসাংঘা। মনে হচ্ছিল চাপে পড়ে যাওয়া ইস্টবেঙ্গল বর্ষশেষের উত্‌সবটা গোয়ায় পালনের ভাল একটা মঞ্চ পেয়ে গেল হয়তো। কিন্তু কোথায় কী? রক্ষণাত্মক হওয়া দূরে থাক বরং পাহাড়ি দলটা দমে না গিয়ে তীব্র লড়াই চালিয়ে গেল একজন কম থাকা সত্ত্বেও। ছ’জন ডিফেন্স করতে করতে থিওবোল্ড-জ্যাকিচাঁদরা পাল্টা আক্রমণে বারবার বিপদে ফেলে দিচ্ছিলেন ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে। এমনিতেই পাহাড়ি দলগুলোর প্রধান অস্ত্র দৌড়। ওয়াহিংডো দলটা তার সঙ্গে মিশিয়েছে স্কিল। আই লিগ টু থেকে এ বারই ওয়ানে উঠেছে দলটি। নামী কোনও ফুটবলার নেই। তাদের এই লড়াইকে সাবাশ জানাতেই হবে।

ডেম্পোর কাছে বিশ্রী খেলে হারের পরও ইস্টবেঙ্গলের খেলায় অবশ্য কোনও উন্নতি চোখে পড়েনি। বরং মনে হয়েছে টিমটার মধ্যে সমঝোতার বড় অভাব। মাঝমাঠের সেই খেলাটাই হচ্ছে না। না হলে কার্যত নামগোত্রহীন কিছু লড়াকু ছেলের বিরুদ্ধে জিততে কেন এ ভাবে জিভ বেরিয়ে যাবে সুসাক-বার্তোসদের। ম্যাচের পর ডুডুও স্বীকার করে গেলেন, “এখনও উত্‌সব করার মতো কিছু হয়নি। একটু স্বস্তি পেলাম। নতুন বছরে সমর্থকদের একটা ছোট্ট উপহার দিতে পেরে ভাল লাগছে।”

ইস্টবেঙ্গল শুরু করেছিল ৪-১-৩-২ ফর্মেশনে। গোল হচ্ছে না দেখে মরিয়া আর্মান্দো শেষ পর্যন্ত হাতে থাকা সব অস্ত্রই প্রয়োগ করে ফেললেন। বলজিত্‌ আর জোয়াকিমকে নামানোর পর সেটা হয়ে গেল ৪-২-৪। একটা সময় ওয়াহিংডোর অর্ধে দেখা গেল দু’দলের বাইশ ফুটবলারই দাঁড়িয়ে। ইস্টবেঙ্গল আক্রমণের ঝড় তুলছে আর ঠেকিয়ে যাচ্ছেন ওকোচুমু-সামান্ডারা। কিন্তু ভাগ্য যদি বিরূপ হয় তা হলে কী আর করবেন সন্তোষ কাশ্যপরা। খেলার শেষ রেফারিকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ জানাচ্ছিলেন ওয়াহিংডোর কোচ-ফুটবলাররা। ছয় মিনিটের বদলে আট মিনিট ইনজুরি টাইম খেলা চালানোর জন্য। কর্নার থেকে বার্তোস বল ঠেলেছিলেন জোয়াকিমকে। গোয়ার ছেলে বলটা তুলে দেন ডুডুকে। গোলটা করেই ডুডু দৌড়ে চলে এসেছিলেন ভিআইপি গ্যালারির দিকে। যেখানে বসে ছিলেন তাঁর বান্ধবী হিনা আর বোন আসমা ফেলিসিয়া। ডুডুর সঙ্গে তাঁরাও নাচছিলেন তখন। হিনা বলছিলেন, “হোটেল থেকে বেরোনোর সময় ডুডু কথা দিয়েছিল গোল করে রাতে উত্‌সব করবে কোলাবা বিচে গিয়ে।” তবে গ্রুপে এখনও দুটো কঠিন ম্যাচ বাকি ইস্টবেঙ্গলের।

তাঁদের কে বোঝাবে ইস্টবেঙ্গলের এ দিনের ‘লেডি লাক’ তখন বর্ষশেষের উত্‌সবে যোগ দিতে সৈকতমুখী। মেহতাবদের হোটেলে না থাকলেও ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে যে এখনও আছেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যান।

ইস্টবেঙ্গল: শুভাশিস, রাজু, অর্ণব, সুসাক, অভিষেক, বার্তোস, লোবো (জোয়াকিম), মেহতাব, ডিকা (বলজিত্‌), র্যান্টি, ডুডু।

আজ ফেড কাপে

মোহনবাগান : পুণে এফসি (ভাস্কো, ৪-০০)।

ছবি: উত্‌পল সরকার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dudu east bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE