দেশের জার্সিতেও উথাপ্পার ব্যাটে একই মন্ত্র
রবিন উথাপ্পার ব্যাটগুলো আমার বেশ ভাল লাগে। সোজাসুজি বললে, ওর ব্যাটের পিছনে যে কথাগুলো লেখা থাকে, সেটা আমার ভাল লাগে। লেখা থাকে: বিলিভ বিকাম। মানে, বিশ্বাস রাখলে তার ফলও পাবে। জীবনের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝাতে বোধহয় ওই দু’টো শব্দই যথেষ্ট। যদি নিজের উপর বিশ্বাস রাখো, তা হলে নিশ্চিত তুমি কিছু করে দেখাবে। সাফল্য পাবে। আর তুমি যদি সেটা করে দেখাতে পারো, তা হলে নিজের প্রতি বিশ্বাসটাও তোমার বেড়ে যাবে। চলতি টুর্নামেন্টে আমি এই ব্যাপারটার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছি, এবং বিশ্বাস রেখে ফলও পেয়েছি। পরপর তিনটে ডাক করার পর আমার মনে সন্দেহের বীজ জন্মেছিল। মনে মনে ভাবতাম, আমার মধ্যে কি আর কিছু আছে? ক্রিকেটের এই পর্যায়ে কি আর আমি থাকার যোগ্য? আমি কি একটা রানও করতে পারব? উত্তরগুলো তখন অস্পষ্ট ঠেকত। আমিরশাহিতে তখন খেলছিলাম আমরা।
তার পর, রবিনের ব্যাটের পিছনে ওই শব্দ দু’টো দেখলাম। বড় বড় করে লেখা। বলব না, শব্দ দু’টো ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। কিন্তু এটা ঠিক যে একটা প্রভাব ফেলেছিল। আমি নিজের উপর, নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখতে চাইছিলাম। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে যে ম্যাচটায় আমি এক রান করলাম, সেটা শুরু হওয়ার আগে নিজেকে নিজে বলছিলাম, আমি এখনও যথেষ্ট ভাল। আজ শুধু বল দেখে খেলব। প্রথম বলেই আমি প্রায় আউট হয়ে যাচ্ছিলাম। নিজেকে নিয়ে গুচ্ছের সংশয় মিছিল করে ফিরে আসছিল। কিন্তু নিজে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থেকে ও সব সংশয় মাথা থেকে বার করে দিয়েছিলাম। যদিও ম্যাচটায় আমি মাত্র ১ রান করেছিলাম, হেরেওছিলাম, কিন্তু আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে আমার খেলাটা আবার ফিরতে চলেছে। বিশ্বাস করতে শুরু করে দিয়েছিলাম যে, আমি পারব। আবার পারব।
মনে হয় রবিনের ব্যাটের পিছনের দু’টো শব্দ ওর জীবনেও কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। এ বার ঘরোয়া মরসুমটা ওর দুর্দান্ত গিয়েছে। উইকেটের মধ্যে ওর নড়াচড়াও খুব ভাল হচ্ছে। যে ভাবে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে রবিন ব্যাট করল, দেখে মনে হল যে ওর আত্মবিশ্বাসটাও এখন খুব ভাল জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। রবিনের টাচ এখন এত ভাল পর্যায়ে গিয়েছে যে, অক্ষর পটেলের বলে ওর একটা লফটেড শট দেখে পঞ্জাব ক্যাপ্টেন জর্জ বেইলি পর্যন্ত প্রশংসা করল। আমার মনে হয়, স্ট্রোক খেলার সময় ওর যে ব্যালান্স থাকে সেটা যে কোনও ট্র্যাপিজ আর্টিস্টকে হারিয়ে দিতে পারে।
বোলিং বিভাগে পীযুষ ‘পিসি’ চাওলাও খুব পিছিয়ে থাকবে না। কেকেআরের ও প্রধান স্ট্রাইক বোলার। মনে হয়, পিসি যে দু’টো কাজ সবচেয়ে ভাল পারে, সে দু’টোই করছে। উইকেট তুলছে আর গালে টোল ফেলছে! পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ও দু’টো ব্যাপারই খুব ভাল করে করল। ম্যাক্সওয়েল আর সহবাগকে আউট করল। আবার গালে টোল ফেলার মর্যাদার যুদ্ধটাও চালিয়ে গেল প্রীতি জিন্টা আর ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে। দু’জন বড় ব্যাটসম্যানকে আউট করে পিসি আমাদের ম্যাচটা জিতিয়ে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু টোল ফেলার যুদ্ধটা মিস জিন্টাই জিতলেন। মাইলখানেক এগিয়ে থেকে!
আমাদের পরবর্তী প্রতিপক্ষ মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। মাঠ এবং মাঠের বাইরে ওদের এত ভাল ভাল প্লেয়ার আছে যে দেখে মাঝে মাঝে মনে হয়, চাইলে দু’টো এগারো জনের টিম ওরা নামিয়ে দিতে পারে! সচিন-পাজি, অনিল ভাই, জন্টি রোডস তালিকাটা বেড়েই চলবে। ওদের টিমে যা অভিজ্ঞতা আছে, সেটা সম্পদ। তা ছাড়া টুর্নামেন্টে কিছু অদ্ভুত ওলটপালট দেখার পর বলব, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স মারাত্মক টিম। গত বারের চ্যাম্পিয়ন ওরা। টুর্নামেন্টে এখনও ভাল ভাবে আছে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হারানোর পর যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসীও থাকবে। ব্যক্তিগত ভাবে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে খেলতে আমি পছন্দ করি। সেটা আইপিএলে হোক বা রঞ্জিতে। আমি সব সময়ই চেয়েছি বড় টিমের বিরুদ্ধে পারফর্ম করতে। আশা করছি মুম্বইয়ের বিরুদ্ধেও আমার ভাল ফর্ম চলবে। আমি সেটা বিশ্বাস করি। নিশ্চয়ই মুম্বইয়ের বিরুদ্ধেও কিছু করে দেখাতে পারব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy