Advertisement
E-Paper

শ্রীনি অনড়, গদি বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন

বৃহস্পতিবার বারবেলায় সারা ক্রিকেট দুনিয়া যখন অধীর আগ্রহ নিয়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের অপেক্ষায় থাকবে, তখন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ নম্বর কক্ষে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন তাঁর গদি বাঁচানোর লড়াই শুরু করবেন। তার আগের দিন পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে মৌনতা বজায় রেখে শ্রীনি বুঝিয়ে দিলেন, আদালতের মন্তব্য সত্ত্বেও ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের গদি আঁকড়ে থাকতে তিনি মরিয়া। আজ আদালতে দিন শুরু হতেই সেই যুদ্ধে নেমে পড়বেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৪

বৃহস্পতিবার বারবেলায় সারা ক্রিকেট দুনিয়া যখন অধীর আগ্রহ নিয়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের অপেক্ষায় থাকবে, তখন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ নম্বর কক্ষে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন তাঁর গদি বাঁচানোর লড়াই শুরু করবেন। তার আগের দিন পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে মৌনতা বজায় রেখে শ্রীনি বুঝিয়ে দিলেন, আদালতের মন্তব্য সত্ত্বেও ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের গদি আঁকড়ে থাকতে তিনি মরিয়া। আজ আদালতে দিন শুরু হতেই সেই যুদ্ধে নেমে পড়বেন তিনি।

কিন্তু কী ভাবে? বিচারপতি এ কে পট্টনায়েক এবং বিচারপতি ইব্রাহিম কলিফুল্লা যে রকম কড়া মেজাজে, তাঁদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নিজের গদি বাঁচানোর চেষ্টা কী করে করবেন শ্রীনিবাসন?

এ দিন সকালেই ছানি কাটাতে অপারেশন টেবিলে উঠতে হয়েছিল তাঁকে। তা সত্ত্বেও বাড়ি ফিরে সারা দিন ধরে আইনজীবীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসেন। একাধিক বৈঠকের পর শ্রীনি শিবিরের খবর, দু’ভাবে এই শেষ লড়াইটা লড়তে পারেন তিনি। এক, তিনি হয়তো আদালতকে বলবেন, এ ভাবে আগাম নোটিস না দিয়ে তাঁকে পদ ছেড়ে চলে যেতে বলাটা ঠিক কি না, তা ভেবে দেখা হোক। আর দুই, তিনি বিচারপতিদের জানাতে পারেন, তাঁদের কথাই মেনে নিচ্ছেন। কিন্তু পদত্যাগ নয়, আপাতত সরে দাঁড়াবেন ও তদন্তে বিন্দুমাত্র নাক গলাবেন না। কত দিনের জন্য তাঁকে সরে থাকতে হবে, তার একটা সময়সীমাও বেঁধে দিক আদালত, এমনটাও আবেদন করতে পারেন শ্রীনি। সেপ্টেম্বরে বোর্ড নির্বাচনের কথা ভেবেই যে এই সীমা নির্ধারণের আবেদন জানাতে পারেন শ্রীনি, ওয়াকিবহাল মহলের তেমনই ধারণা।

আইনজ্ঞ মহলে অবশ্য একটা সাধারণ ধারণাও ঘোরাফেরা করছে। তা হল, আদালতের পর্যবেক্ষণ পুনর্বিবেচনার জন্য রিভিউ পিটিশন বা কিউরেটিভ পিটিশন করতে পারেন শ্রীনির আইনজীবীরা। এতে বিচারপতিদের চ্যালেঞ্জও করা হবে না, আবার তাঁরা রাজি হলে ফের নতুন করে শুনানির জন্য আরও কিছু সময়ও পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ক্রিকেট প্রশাসনে থাকা এক আইন বিশেষজ্ঞ কর্তার ধারণা, “খুব কম ক্ষেত্রেই এই আবেদনগুলি নেওয়া হয়। সেটা নির্ভর করে পুরোপুরি বিচারপতিদের উপর। রিভিউ পিটিশন গ্রাহ্য না হলে কিউরেটিভ পিটিশন করা যায় ও তাতে সাধারণত বিচারপতিদের চেম্বারে আবেদনের শুনানি হয়।” শ্রীনির আইনজীবীরা কোন রাস্তায় হাঁটবেন, সেটাই এখন দেখার।

আদালতের পর্যবেক্ষণ যা-ই হোক, শ্রীনিবাসনের দূর্গ কিন্তু এখনও অটূট। বোর্ড নির্বাচনে যাঁদের ভোটাধিকার আছে, তাঁদের প্রত্যেকেই সারা দিন ধরে মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলেন। এমনকী পাছে কেউ কারও কথা ফাঁস করে দেন, সেই ভয়ে নিজেদের মধ্যে ফোনালাপও হয়নি কারও। জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই সময়ে বোর্ডের হট সিটে বসতে অনেকে রাজি থাকলে কী হবে, সেই ইচ্ছার কথা প্রকাশ করারও সাহস নেই তাঁদের। আগের দিন যাঁর নাম ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শোনা যাচ্ছিল, সেই শিবলাল যাদব এ দিন শুধু বলেন, “শ্রীনিবাসন পদত্যাগ করবেন না। আদালত বোর্ডের কী ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে, সে দিকেই তাকিয়ে আছে বোর্ড।” জগমোহন ডালমিয়া এ দিনও সেই একই কথা বললেন, “সময় এলেই সব বলব। এখন নয়।” বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে রাজি নন কেউই।

বরং মুখ খুলেছেন প্রাক্তনরা। প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট শশাঙ্ক মনোহর সিবিআই-এর হাতে এই কেলেঙ্কারির তদন্তের ভার তুলে দেওয়ার দাবি তুলে দিলেন। এখানেই শেষ নয়, আইপিএলের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন না হওয়া পর্যন্ত লিগই বন্ধ রাখতে বলছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন আর এক প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট আইএস বিন্দ্রাও। তাঁর বক্তব্য, আরব আমিরশাহিতে এই টুর্নামেন্ট নিয়ে যাওয়া মানে ভারতীয় ক্রিকেটকে ফের সেই পাঁকেই ফেলে দেওয়া। যেখান থেকে তাঁরা ক্রিকেটকে টেনে তুলেছিলেন। বিন্দ্রা এ দিন মন্তব্য করেন, “শ্রীনিবাসনকে ঘাড়ধাক্কা না দিলে ও যাবে বলে মনে হয় না। সুপ্রিম কোর্ট যা বলেছে, তা ওর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করার মতোই। কিন্তু, আমি জানি, তাতেও ও সরবে না। এই দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে যে জড়িয়ে রয়েছি, তা ভেবেই লজ্জা হচ্ছে। জগমোহন ডালমিয়া ও আমি বোর্ডে থাকাকালীন একটা প্রস্তাব পাশ হয়েছিল যে, আমিরশাহিতে ভারতীয় ক্রিকেটকে নিয়ে যাওয়া হবে না। তার পরেও কী করে আইপিএল ওখানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হল, তা ভেবে অবাক হচ্ছি।”

বিন্দ্রা ও মনোহরের কথায়। সবিস্তার...

শশাঙ্ক মনোহর বলেন, “সিবিআই-এর হাতেই এই মামলার তদন্তের ভার তুলে দেওয়া উচিত। আর যতদিন না ক্রিকেটের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ফিরে আসে, তত দিন আইপিএল বন্ধ রাখা উচিত। আমিরশাহিতে ভারতীয় ক্রিকেট না নিয়ে যাওয়ার যে প্রস্তাব পাশ হয়েছিল, তা তো আর প্রত্যাহার করা হয়নি। তা সত্ত্বেও কী করে ওখানে আইপিএলের ম্যাচ করার সিদ্ধান্ত হল?” বিন্দ্রাও মনোহরের এই বক্তব্যে সায় দিয়ে বলেন, “ক্রিকেটে পরিচ্ছন্নতা ফিরিয়ে আনার পর ২০১৫-য় না হয় ফের আইপিএল শুরু করা যাবে। এটাই তো ভাল প্রস্তাব।”

শ্রীনির শহরে বসেই এ দিন আর এক প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট এ সি মুথাইয়া বলে দেন, “এর পরেও কী করে শ্রীনি গদি আঁকড়ে পড়ে থাকতে পারে, সেটা ভেবেই অবাক হচ্ছি। আদালত বলার পরই তো ওর পদত্যাগ করা উচিত ছিল। দেশের আইনও মানবে না!”

তবে সব গোলাগুলিই আসছে প্রাক্তনদের তরফে। বোর্ডের বর্তমান কর্তারাই যে মুখে কুলুপ এঁটে বসে রয়েছেন, তা নয়। আইসিসি-র বর্তমান কর্তারাও একেবারে চুপ। ঘটনার উপর শুধু নজর রাখছেন তাঁরা। তবে প্রাক্তন আইসিসি প্রধান এহসান মানি দাবি করেছেন, “ভারতীয় ক্রিকেটকে তো বিপন্ন করে তুলেছেই শ্রীনিবাসন, এ বার ও আইসিসি-র পদে বসলে বিশ্ব ক্রিকেটেরও বদনাম হবে। শুধু বিসিসিআই নয়, আইসিসি থেকেও সরে যাওয়া উচিত ওর।”

srinivasan bcci
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy