Advertisement
E-Paper

শ্রীনিবাসনের বোর্ড মরুশহরে হারল এবং জিতল

দুবাইয়ের যুদ্ধবিরতি। শান্তির লক্ষ্যে এ বার চলো সিঙ্গাপুর। এ রকমই এক অভাবনীয় মোড় নিয়ে মঙ্গলবার দুবাইয়ে আইসিসি-র এক্সিকিউটিভ বোর্ডের প্রথম দিনের সভা শেষ হল। কথা ছিল, ভোট হয়ে এক ঐতিহাসিক ডামাডোলে দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাবে ক্রিকেট বিশ্ব। কাঠামোটাই নড়ে যাবে বিশ্ব ক্রিকেটের। সেই ভোট হওয়া এড়ানো গিয়ে সর্বসম্মত ভাবে পরিস্থিতি থেকে মুক্তির সম্ভাব্য ছক তৈরি করা হল।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ ১৮:২৫

দুবাইয়ের যুদ্ধবিরতি। শান্তির লক্ষ্যে এ বার চলো সিঙ্গাপুর।

এ রকমই এক অভাবনীয় মোড় নিয়ে মঙ্গলবার দুবাইয়ে আইসিসি-র এক্সিকিউটিভ বোর্ডের প্রথম দিনের সভা শেষ হল। কথা ছিল, ভোট হয়ে এক ঐতিহাসিক ডামাডোলে দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাবে ক্রিকেট বিশ্ব। কাঠামোটাই নড়ে যাবে বিশ্ব ক্রিকেটের। সেই ভোট হওয়া এড়ানো গিয়ে সর্বসম্মত ভাবে পরিস্থিতি থেকে মুক্তির সম্ভাব্য ছক তৈরি করা হল। সিঙ্গাপুরে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত সমাধানের রাস্তা খোলা রেখে।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, চূড়ান্ত মর্যাদা আর রেষারেষির লড়াইয়ে শ্রীনিবাসনের ভারত হারল এবং জিতল।

হারল এই জন্য যে, চূড়ান্ত ক্ষমতা ভোগ এবং কোষাগার ভরার যে উচ্চাকাঙখা শ্রীনিবাসন দেখেছিলেন সেটা সফল করা গেল না। ভারত ভাবতেই পারেনি বাকি দেশগুলো এত প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াও এতটাই হতাশ যে, প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আইসিসি প্রেসিডেন্ট অ্যালান আইজ্যাক বলতে বাধ্য হয়েছেন, “এত সমস্যা তৈরি হল তিন দেশের ড্রাফ্ট পজিশন পেপার মিডিয়ায় লিক হয়ে যাওয়ায়। এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হল যে, আলোচনা না হয়ে ব্যাপারটা বিতর্কের দিকে চলে গেল।”

তিন প্রধান দাবি করেছিল, তাদের জন্য অবনমন থাকবে না। তারা পয়েন্ট তালিকায় সর্বশেষে থাকলেও তাদের নামানো যাবে না। অন্য সব দেশের তীব্র আপত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, বাকিদের জন্য যা নিয়ম, তিন প্রধানের জন্যও তাই। ভারত সবশেষে থাকলে তাদেরও নামতে হবে। টাকার যে পরিমাণ অতিরিক্ত বাটোয়ারার কথা খসড়া প্রস্তাবে ছিল সেটাও পুরোপুরি গৃহীত হল না। ঘুরিয়ে আইসিসি একটা ডেভেলপমেন্ট ফান্ড করল। সেখান থেকে ভারতীয় বোর্ড বাড়তি টাকা পাবে। কিন্তু যে পরিমাণ চেয়েছিল তার অর্ধেকও পাবে না।

এই অবধি যদি শ্রীনিবাসনের হার হয়, তা হলে জিত হল আইসিসি-র প্রথম চেয়ারম্যান পদে বসা সুনিশ্চিত করে ফেলা। জুন মাসেই তিনি আইসিসি বোর্ডের সর্বক্ষমতাসম্পন্ন চেয়ারম্যান হিসেবে দেখা দেবেন। প্রথম দু’বছর তিন প্রধানের বাইরে কেউ আইসিসি চেয়ারম্যান হতে পারবেন না। তার পরে ঘুরিয়েফিরিয়ে যে কোনও পূর্ণ সদস্য দেশের লোকই হতে পারেন। শ্রীনিবাসন এটাও নিশ্চিত করে ফেললেন যে, কার সঙ্গে ভারত কোথায় খেলবে সেটা আইসিসি-র এফটিপি-র ওপর নির্ভর না করে বিসিসিআই নিজেই ঠিক করবে। এ দিন যেমন বিসিসিআই ঠিক করল, ২০১৫-র পর পাকিস্তানের সঙ্গে নিরপেক্ষ দেশের মাঠে টেস্ট সিরিজ খেলবে। আইসিসি-র মূল সব টুর্নামেন্ট সংগঠনের ব্যাপারেও ভারত যে অগ্রাধিকার পাবে সভা একমত হল। সবচেয়ে বড় কথা, প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভারত লিখিয়ে নিল, আইসিসি-তে শক্তিশালী নেতৃত্ব দান প্রয়োজন। যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র হবে বিসিসিআই।

সুতরাং এ দিন দুবাইয়ে অনুপস্থিত থাকা শ্রীনিবাসন যদি এক পা পিছিয়ে থাকেন, তা হলে দু’পা এগিয়েছেন। তবে ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব প্রকাশ পেতে সিঙ্গাপুর বৈঠক অবধি যাবে।

বিবদমান দু’পক্ষে হম্বিতম্বি এবং তীব্র বাকবিতণ্ডা চলছিল গোটা দিন ধরে। একটা সময় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি বোর্ডকর্তারা ফোন করে নিজের দেশে বলতে থাকেন, ভারতীয় বোর্ড যে পরিমাণ অসভ্যতা করছে তা বিস্ময়কর। দুপুরের দিকে পরিস্থিতি রীতিমতো অগ্নিগর্ভ চেহারা নিয়েছিল। এই সময় আইসিসি-র প্রস্তাবের বিরুদ্ধে লিখিত প্রতিবাদ জমা দেয় বাংলাদেশ। ঢাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেটমহলে কর্তারা উত্তেজিত ভাবে বলতে থাকেন, “আমাদের প্রেসিডেন্টকে চাপ দিয়ে সই করানো যাবে না। ওঁর বাবা দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। উনি নিজেও একজন সাংসদ।” পাকিস্তান বোর্ডকর্তারাও তখন ক্রুদ্ধ। বলছিলেন, “ভারতকে যা ইচ্ছে তাই করতে দেব না। প্রাক্তন ক্রিকেট ক্যাপ্টেনরা ভারতের বিরুদ্ধে স্টেটমেন্ট দিচ্ছে। লয়েড দিয়েছে। আজ আলি বাখার দিয়েছে। ওদের ভোট না থাকলেও জনমত তৈরি করার ক্ষমতা আছে, ভারত বুঝছে না।”

প্রচণ্ড উত্তেজক ভাবে চলতে থাকা একটা ওয়ান ডে ম্যাচ যদি দুম করে শেষ ওভারে আলোর অভাবে ড্র হয়ে যায়, তা হলে যেমন হবে, দিনটা যেন তেমনই গেল। কিন্তু কে বলতে পারে, সিঙ্গাপুর বৈঠকের আগে দুবাইয়ে মরুভূমির বালিতেই নতুন কোনও কাঁটার খোঁজ পাওয়া যাবে না?

বিশ্ব ক্রিকেট ঐক্যবদ্ধ দেখাচ্ছে, অজস্র ফাটল-সহ!

srinivasan ICC indian cricket bcci
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy