বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের দিনে।
স্মরণীয় গোলে স্মরণীয় জয়! আকাশদীপ সিংহের গোলে ভারতীয় হকির গুমোট আকাশ ফের সোনালি হয়ে ওঠার দারুণ সম্ভাবনা।
এশীয় র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর দক্ষিণ কোরিয়াকে তাদেরই ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে ১-০ হারিয়ে ভারত এশিয়াড হকির ফাইনালে উঠল দুর্গাষষ্ঠীর দুপুরে। বারো বছর পর। আর এশিয়ান গেমসে ষোলো বছর স্বর্ণ পদক-অভুক্ত ভারতীয় দলের চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে মহাষ্টমীর দিন।
অন্য সেমিফাইনালের স্কোরলাইন বিচারে চূড়ান্ত যুদ্ধে এই মুহূর্তে ভারতকেই ফেভারিট দেখাচ্ছে। পাকিস্তান এ দিন যেখানে নির্ধারিত এক ঘণ্টায় ম্যাচ গোলশূন্য থাকার পর পেনাল্টি শু্যট-অফে মালয়েশিয়াকে কোনওক্রমে ৬-৫ হারিয়েছে, সেখানে শক্তিশালী কোরিয়ানদের বিরুদ্ধে প্রথম দুই কোয়ার্টারে গোলের অন্তত তিনটে সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করার পর অবশেষে ৪৪ মিনিটে রোভিং ফরোয়ার্ড আকাশদীপের অনবদ্য গোলে জয় তুলে নিয়েছে ভারত। সিওনহক হকি স্টেডিয়ামে কোরীয় সমর্থকদের নিশ্চুপ করিয়ে দিয়ে আকাশদীপ ‘ডি’-এর মধ্যে গোলপোস্টের দিকে পিছন ফিরে থাকা অবস্থায় বল ধরে, টার্ন না করে, একই অ্যাকশনে দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে অনবদ্য ফ্লিকে গোলে পাঠান।
আট বারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় হকির পুরনো গরিমা বহু বছরই অস্তমিত। ইদানীং দক্ষিণ কোরিয়াও তাদের জুজু। ২০১২ অলিম্পিকেও কোরীয়দের কাছে হেরেছিল ভারত। এমনকী গত বছর আজলান শাহেও দক্ষিণ কোরিয়াকে ভারতীয়রা হারাতে পারেনি। এ দিনের আগে কোরীয়দের বিরুদ্ধে ভারতের শেষ জয় ছিল ২০১২ এশিয়া হকি চ্যাম্পিয়নশিপে। ফলে যেখানে এ বারের এশিয়াডে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে হেরে একটা সময় ভারতীয় হকি দলের সেমিফাইনালে ওঠাই ঘোরতর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল, সেখানে দু’ম্যাচ পরেই সর্দার সিংহের দলের সামনে সোনার পদকের হাতছানি যথেষ্টই তাৎপর্যের।
ইনচিওনে একটা সময় রুপিন্দর-রঘুনাথদের বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পাশে মনে হচ্ছিল, ভারতীয় মেয়ে হকি দলই হয়তো খানিকটা মুখরক্ষা করবে। অথচ এই মুহূর্তে অনেক বছর পর এশিয়াড হকিতে ভারতের ছেলে-মেয়ে, দু’দলের সামনেই পদক জেতার চমৎকার সুযোগ। বুধবারই জাপানের বিরুদ্ধে রিতু রানির দলের ব্রোঞ্জ পদকের প্লে-অফ লড়াই। ভারতের মেয়ে হকি দলের কাছেও ছেলেদের ফাইনালের মতোই বদলার ম্যাচ। কারণ, সর্দাররা যেমন ইনচিওনে গ্রুপ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরেছেন, তেমনই রিতু রানিরা গত এশিয়াডে জাপানের কাছেই প্লে-অফে হারায় অল্পের জন্য পদক-মঞ্চে দাঁড়াতে পারেননি।
তবে আপাতত সর্দার সিংহদের দিকেই ভারতীয় হকি মিডিয়ার প্রচারের সব আলো গিয়ে পড়ছে। ভারতের অস্ট্রেলীয় কোচ টেরি ওয়ালশ এ দিন সাংবাদিকদের বলে দেন, “আমাদের বেশ কয়েক জন প্লেয়ার আজ মাঠে নিজেদের ক্ষমতার চেয়েও এক ধাপ উঁচুতে উঠতে পেরেছিল। এবং সেই এনার্জিটা ম্যাচে আগাগোড়া রেখেছে। লিগ ম্যাচের চেয়ে নক-আউটের পার্থক্যটা আমাদের ছেলেরা নিজেরা বুঝেছে আর বিপক্ষকেও বুঝিয়ে দিয়েছে। আশা করি ফাইনালেও ওরা এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। ভারত-পাক ম্যাচ সব সময়ই টেনশনের। তার উপর এটা আবার ফাইনাল। ফলে টেকনিক-ট্যাকটিক্সের পাশাপাশি মানসিক লড়াইয়েও আমাদের জিততে হবে সে দিন। শেষ বার আমরা আন্তর্জাতিক হকির ফাইনালে চার গোলে হেরেছি। গত মাসেই কমনওয়েলথ গেমসে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। সেখান থেকে আজ আমরা এশীয় হকির সেরা শক্তি কোরিয়াকে তাদের মাঠেই হারিয়ে এশিয়ান গেমসের ফাইনালে পৌঁছেছি। অর্থাৎ, আমরা যেমন অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারছি, তেমনই আমাদের শেখার দিকটাও সঠিক আছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy