পরপর চারটে ওয়ান ডে সেঞ্চুরি। একটা বিশ্বকাপে চারটে সেঞ্চুরি। এই বছরে আপাতত সবচেয়ে বেশি রানের মালিক। সত্যি, অবসর নেওয়ার আগে যেন নিজের সেরা ক্রিকেটটা খেলছে কুমার সঙ্গকারা। ও সব সময়ই দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। কিন্তু এত অসাধারণ ফর্মে ওকে আগে কোনও দিন দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না। মনে হচ্ছে অবসর ঘোষণা করার পর নিজের খেলায় আরও বেশি করে মন-প্রাণ ঢেলে দিয়েছে সঙ্গা। যাতে সেরা ফর্মে থেকে ক্রিকেটকে চিরবিদায় জানাতে পারে। যাতে ওর অবসরের সময় ক্রিকেটবিশ্ব প্রশ্ন করে— কেন যাচ্ছো? কেউ যেন এটা না বলতে পারে, কেন যাচ্ছো না?
স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে বুধবার সঙ্গার ৯৫ বলে ১২৪ রানের ইনিংস দেখার পর আমার অন্তত মনে হচ্ছে, আরও দু’তিন বছর খুব সহজেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে দিতে পারত সঙ্গকারা। সাঁইত্রিশ বছরের বাঁ হাতি যে এ দিন দারুণ ব্যাট করল সেটাই শুধু নয়। উইকেটকিপিং গ্লাভস হাতেও নতুন কাপ রেকর্ড করল। সত্যি, আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্লেয়ার সঙ্গা। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের প্রতি ওর অবদান অতুলনীয়। এত বছর ধরে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটকে সামলে রেখেছে সঙ্গকারা। ও আর মাহেলা জয়বর্ধনে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের দু’জন স্তম্ভ। আমার তো মনে হয়, এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান সঙ্গকারাই।
কেন, সেই কারণে পরে আসছি। আগে অন্য একটা প্রসঙ্গ নিয়ে একটু বলি। এই যে দেখছেন এই বিশ্বকাপে ক্রিস গেইল, ডেভিড ওয়ার্নাররা প্রচণ্ড ভারী সব ব্যাট নিয়ে নামছে, কোনও দিন সঙ্গাকে দেখেছেন ও রকম ব্যাট ব্যবহার করতে? ভারী ব্যাট নিয়ে ইদানীং খুব লেখালিখি হচ্ছে দেখছি। দেখুন, এখনকার উইকেটে খুব বেশি বাউন্স থাকে না। বেশির ভাগই ফ্ল্যাট উইকেট হয়। তার উপর এখনকার ব্যাটসম্যানরা দেখি ব্যাকফুটের চেয়ে ফ্রন্টফুটে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। ফ্ল্যাট উইকেটে ফ্রন্টফুটে খেলতে গেলে হালকা ব্যাটের চেয়ে ভারী ব্যাট বেশি কার্যকর। তাই বেশির ভাগ ব্যাটসম্যান এখন ভারী ব্যাটের দিকে ঝুঁকছে। তার উপর গেইলের মতো প্লেয়াররা গায়ের জোরে শট খেলে বেশি।
তবে আইসিসির উচিত এখনই এই ব্যাপারটা নিয়ে বসা। আরে, আর কত রকম ভাবে ওরা ব্যাটসম্যানদের সাহায্য করে যাবে? একে তো বেশির ভাগ মাঠের বাউন্ডারি ছোট। তার পর এ সব গদার মতো ব্যাট নিয়ে গেইল, ওয়ার্নাররা নামলে বেচারা বোলারদের কী অবস্থা হবে সেটা আইসিসি ভেবে দেখেছে? এ রকম চললে তো সব বল মাঠের বাইরে যাবেই, বরং এত দূরে ছিটকে পড়বে যে প্রত্যেক ওভারেই নতুন বল আনতে হবে। সে রকম হলে ক্রিকেটে বোলারদের কোনও জায়গাই থাকবে না। এটা থামাতে ব্যাট নিয়ে কিন্তু নিয়ম করতেই হবে। মানে ব্যাট কতটা পুরু হবে, সেটা নিয়ে যেন আইসিসি নিয়ম করার কথা ভাবে।
যাই হোক, সঙ্গার মতো কিছু জাত ব্যাটসম্যান অন্তত দেখিয়ে দিচ্ছে যে, ভারী ব্যাট ছাড়াও ক্রিকেট খেলা যায়। কী ভাবে? ওর টেকনিকটা দেখুন। একেবারে নিখুঁত। কপিবুক ব্যাটসম্যান বলতে যা বোঝায়, সঙ্গা হল তাই। যে জন্য ব্যাট নিয়ে ও সব কারিকুরি ওর লাগে না। বিশ্বের যে কোনও উইকেটে ও সাবলীল ভাবে ব্যাট করতে পারে। ম্যাচের সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা থেকেও টিমকে বের করে আনতে পারে। আর সঙ্গার সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল ওর ঠান্ডা মাথা। কোনও সময়ই দেখিনি ওকে মেজাজ হারাতে। শ্রীলঙ্কায় বোধহয় ক্রিকেটারদের নিয়ে এ দেশের মতো মাতামাতি সত্যিই হয় না। না হলে এত দিনেও সঙ্গার পাশে দুটো শব্দ কেউ বসায়নি কেন? কী শব্দ?
মিস্টার কুল!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা ৩৬৩-৯ (সঙ্গকারা ১২৪, দিলশান ১০৪, ডেভি ৩-৬৩)
স্কটল্যান্ড ২১৫ (কুলশেখরা ৩-২০, চামিরা ৩-৫১)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy