ইউসুফ পাঠান আজ আর সমালোচকদের নিয়ে বিশেষ ভাবেন না। বরোদার পাঠান জানেন, দু’টো ম্যাচে তাঁর ভাল ফর্ম দেখে এখন যারা তাঁর গুণগান করছে, দু’টো ম্যাচ খারাপ গেলে গুণকীর্তন আবার কটুক্তিতে পাল্টে যাবে! জানেন, সমালোচকদের বুঝিয়ে লাভ নেই। বাইশ গজের জীবন কী, বাইশ গজের বাইরের পৃথিবীর বোঝা সম্ভব নয়।
ইউসুফ পাঠান বরং আজ মনে করেন, সমালোচকরা তাঁর শিক্ষক। কোচ। যারা নিরলস শিক্ষা দিতে থাকে, তাঁর কখন কী করা উচিত!
“যারা বলার তারা তো বলেই যাবে। দু’টো ম্যাচে খারাপ খেললেই বলবে, এ তো খেলতেই পারছে না। ইউসুফ পাঠানের খারাপ সময় আবারও শুরু হল। এ বারও আইপিএল শুরুর সময় কত কীই না শুনতে হয়েছে,” বুধবার টিম হোটেলে যখন কথাগুলো বলছিলেন সিনিয়র পাঠান, বোঝা যাচ্ছিল ফর্মের প্রত্যাবর্তনেও ভেতরের ক্ষতের নিরাময় ঘটেনি। আইপিএল সেভেনের নিলাম-পর্বের সময় থেকেই তাঁকে নিয়ে নানা কড়া প্রশ্ন উঠেছিল। প্রশ্ন উঠছিল, তাঁকে ঘরে রাখা নিয়ে। এবং টুর্নামেন্টের মধ্যভাগ পর্যন্তও চেনা ইউসুফকে দেখা যায়নি। দেখা গিয়েছে শেষ দু’তিনটে ম্যাচে। বিশেষ করে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে, ডেল স্টেইনকে মেরে ২৮ বলে ৩৯ নট আউটে রুদ্ধশ্বাস জয় এনে দেওয়ার পর।
তাই সে দিন ও রকম পাঠানোচিত উল্লাস দেখা গেল? তাই ও ভাবে ব্যাট উঁচিয়ে দেখাচ্ছিলেন? সমালোচকদের মুখগুলো খুঁজছিলেন?
“না, না ওটা উচ্ছ্বাস প্রকাশের একটা ভঙ্গি ছিল শুধু। ম্যাচটা খুব ক্লোজ ছিল। তার আগে বেশ কয়েকটা ক্লোজ ম্যাচ হেরে গিয়েছিলাম। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে সেটা আবার হোক, চাইনি। নিজেকে বলেছিলাম, ইউসুফ তুমি জানো যে তুমি থাকলেই রানটা উঠে যাবে। অপেক্ষা করো সেই ওভারটার যেটা তোমাকে পনেরো-কুড়ি দেবে। আগে চালাতে গেলে আউট হয়ে যেতে পারো। তা হলে লাভ বিপক্ষের, তোমার নয়,” একটু থেমে ‘আহত’ কেকেআর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের সংযোজন, “আর সমালোচকদের দিকে কখনওই ব্যাট দেখাইনি। ওরা আমার শিক্ষক। কোচ। আমাকে তো ওরাই সব শেখাচ্ছে!”
কিন্তু ব্যাটিংয়ে এই পরিবর্তনটা রাতারাতি এল কী ভাবে? আগের ইউসুফ পাঠান ছিলেন শুধু হার্ডহিটার। গত দু’তিনটে ম্যাচে দেখা যাচ্ছে, ইউসুফ পাঠান মানে হার্ডহিটিং প্লাস দায়িত্ববোধ। কেকেআরের আইপিএল ভাগ্যের মতো কি আপনার ব্যাটিং-ফর্মও রাতারাতি পাল্টাতে শুরু করল? মানেন না ইউসুফ। “চেঞ্জটা অনেক দিন এসেছে। এ বার ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি ধারাবাহিক রান করেছি। টিমকে জিতিয়েছি। আর আমার খারাপ ফর্ম নিয়ে এত কথা হচ্ছিল। আরে, আমার খারাপ ফর্ম ছিল কখন? গত দু’টো মরসুম চোটের জন্য ভাল খেলতে পারিনি। এ বার পারছি। আইপিএলে প্রথম কয়েকটা ম্যাচে তাড়াতাড়ি আউট হয়ে গিয়েছিলাম। কয়েকটায় নট আউট ছিলাম। দেখতেন আউট না হয়ে ওই ম্যাচগুলোয় যদি পাঁচ রান করে নট আউট থেকে যেতাম, সবাই বলত বাহ্ কী ভালই না খেলছে,” সোজাসাপ্টা ইউসুফ। তার পর আরও চাঁছাছোলা, “আমি সে ভাবে ক্রিকেট খেলতে চাই না। চাই টিমের কথা ভেবে খেলতে। আসলে ক্রিজে পৌঁছে ব্যাটসম্যানকে যা কিছু সামলাতে হয়, সেটা আর কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। কখনও পরিস্থিতি এমন থাকে হাতে পাব দু’টো ওভার, যা করার ওর মধ্যেই করতে হবে। সব সময় সেখানে সফল হওয়া সম্ভব? যাক গে।”
ঠিকই, যাক। পরিবর্তনের পাঠান বরং স্বপ্ন দেখছেন ইডেনে প্লে অফ খেলার! লিগ টেবলে প্রথম দুইয়ে শেষ করে। চটজলদি হিসেব ফেলছেন, “বাকিরা যে ভাবে হারছে, তাতে শেষ দু’টো ম্যাচ আমরা জিতে শেষ করলে কে বলতে পারে ইডেনেই প্লে অফে নামব না? আর তখন একটা ম্যাচ জিতলেই তো ফাইনাল।”
পরিবর্তনের পাঠান ফাইনালেও আটকে থাকছেন না। ট্রফি দেখছেন। বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, আবার ফিরতে চলেছে দু’বছর আগের মোহিনী রাত!
আর আপনি? বাকি কয়েকটা ম্যাচে আপনি কী করবেন?
“কী আবার? আমাকে শুধু দু’টো ওভার দাও। একটু দেখে নিই। তার পর ফেলো না কোথায় বল ফেলবে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy