Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Health

জটিল অস্ত্রোপচার করে তরুণীকে বাঁচালেন ২ সরকারি ডাক্তার

মেয়ে যে সুস্থ হয়ে যাবে, ভাবেনি পরিবারও। পরের দিন গোটা পরিবার তাদের খেতের ফসল আর মাছ নিয়ে চলে আসে হাসপাতালে।

অ্যানেস্থেটিস্ট শতাব্দী সরকার, রুবিনা বিবি (মাঝে) ও চিকিৎসক অপূর্ব পৈলান

অ্যানেস্থেটিস্ট শতাব্দী সরকার, রুবিনা বিবি (মাঝে) ও চিকিৎসক অপূর্ব পৈলান

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২০ ০৪:৫১
Share: Save:

করোনা ছাড়া অন্য রোগের চিকিৎসায় বিলম্ব বা গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। ভুগছেন সাধারণ মানুষ।

তাঁদের দলেই ঠাঁই পেতে পারতেন ১৮ বছরের রুবিনা বিবি। কিন্তু গল্পটা বদলে দিয়েছেন দুই নবীন সরকারি চিকিৎসক। তাঁদের এক জনের একা অস্ত্রোপচারের অভিজ্ঞতা মেরেকেটে দেড় বছরের। আর অ্যানেস্থেটিস্ট হিসেবে অন্য জনের অভিজ্ঞতা মাত্র এক বছরের। দু’জনেই স্নাতকোত্তর, তিন বছরের বাধ্যতামূলক বন্ডে উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিযুক্ত। জটিল অস্ত্রোপচার করে তাঁরাই বাঁচিয়েছেন তরুণী ও গর্ভস্থ সন্তানকে।

মেয়ে যে সুস্থ হয়ে যাবে, ভাবেনি পরিবারও। পরের দিন গোটা পরিবার তাদের খেতের ফসল আর মাছ নিয়ে চলে আসে হাসপাতালে। পরিবারের বয়স্কেরা দুই চিকিৎসককে আশীর্বাদ করে সেগুলি হাতে তুলে দিয়ে বলেন, ‘‘আল্লা, তোমাদের আরও বড় করবেন। বাড়ি গিয়ে ওগুলো খেয়ো, সব আমাদের খেতের।’’ তাতে আপ্লুত চিকিৎসকেরাও।

বসিরহাট এলাকার মাটিয়া থানার আন্দুলপোতায় শ্বশুরবাড়ি রুবিনার। স্বামী সাদ্দাম মণ্ডল সোনার কারিগর। ১২ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় সমস্যার সূত্রপাত হয়। গত ৫ জুলাই সকাল থেকেই পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর। সাদ্দাম বলেন, ‘‘সারা দিন ওকে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েও কোনও নার্সিংহোমে অপারেশনের ব্যবস্থা করতে পারিনি। যন্ত্রণায় ও নেতিয়ে পড়েছিল। শেষে উপায় না দেখে বসিরহাট সরকারি হাসপাতালে যাই। ধরেই নিয়েছিলাম, সরকারি হাসপাতালে রবিবার সন্ধ্যায় অপারেশন দূরে থাক, কেউ ভর্তি নেবে না।’’ কিন্তু সব ধারণা উল্টে গিয়েছিল।

চিকিৎসকদের অন্যতম অপূর্ব পৈলান বলেন, ‘‘হাসপাতালে সে দিন শুধু আমি আর অ্যানেস্থেটিস্ট শতাব্দী সরকার। আমার অভিজ্ঞতা দেড় বছরের আর শতাব্দীর এক বছরের। কিন্তু আমরা ঠিক করলাম, চ্যালেঞ্জটা নেব। এমনিতেই আট ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছিল। এর পর আরজিকরে রেফার করলে মেয়েটা রাস্তাতেই মরে যাবে।’’

আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত সন্দেহে অসুস্থ বৃদ্ধকে বাড়ি ঢুকতে বাধা

আরও পড়ুন: মেডিক্লেম নাকি ‘চলবে না’, দেড় লক্ষ কোভিড রোগী ভর্তি হতেই?

ইউএসজি-তে দেখা গিয়েছিল, মেয়েটির জরায়ুতে একটি ১২ সপ্তাহের ভ্রূণ আছে। তার সঙ্গে বাঁ দিকে জড়ানো ছোট ফুটবলের আকারের টিউমার। তাতে পচন ধরতে শুরু করেছে। দুই চিকিৎসক সময় নষ্ট না-করে কাজ শুরু করেন। প্রথমে পেটের জল বার করে টিউমার চুপসে দেওয়া হয়। তার পরে তা পেটের বাইরে এনে কেটে বাদ দেওয়া হয়। কতটা সফল হল অস্ত্রোপচার, চিন্তায় সারারাত ঘুমোতে পারেননি দু’জনে। পর দিন ইউএসজি করে দেখেন, বাচ্চা বেঁচে আছে! তাতেও পুরো নিশ্চিন্ত ছিলেন না। অপারেশনের ৬ দিনের মাথায় ফের ইউএসজি করে দেখেন, তাঁরা জিতে গিয়েছেন। মা ও শিশু দু’জনেই সুস্থ!

অপূর্ব বলেন, ‘‘রুবিনা ছাড়া পাওয়ার দিন ওঁর স্বামী ৩ কেজির রুই, ৩ কেজি বাগদা, প্রচুর আনাজ নিয়ে হাজির। এরকম গল্পে পড়েছিলাম। নিজেদের জীবনে কখনও হবে ভাবিনি। রুবিনা ও তাঁর পরিবারকে আমরা মনে রাখব চিরকাল।’’ আর শতাব্দীর কথায়, ‘‘প্রথমে মনে হয়েছিল, এত জটিল কেস, যদি না পারি? যদি ভুল হয়? একটু ভুল হলে মা বা সন্তান বা দু’জনের চরম ক্ষতি হতে পারে। পরে নিজেকেই বুঝিয়েছি, চিকিৎসক হিসেবে এটাই পরীক্ষার মুহূর্ত। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করব। যখন বুঝলাম, পেরেছি তখনকার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারব না। ওঁদের উপহারের ছবি তুলে রেখেছি। সারা জীবন রেখে দেব নিজের কাছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Government Doctors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE