ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঘরের সামনে রাজু মাহালি। নিজস্ব চিত্র
ঘরের দরজায় তালা। উঠোনে ত্রিপলের নীচে মাটির চুলা (উনুন)। সেখানে মা রান্না করে চা বাগানে পাতা তুলতে গিয়েছেন, বলছিল সাত বছরের মেয়ে আশা মাহালি। একা ঘরদোর পাহারা দিচ্ছে সে। একটু পরেই বাবা ফিরলেন। কেমন আছেন? বিষণ্ণ হাসলেন রাজু মাহালি।
তিন বছর আগে শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়িতে এই মাহালিদের ঘরেই পাত পেড়েছিলেন অমিত শাহ। তখন তিনি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। রাজুর স্ত্রী গীতা রেঁধে খাইয়েছিলেন তাঁকে। এই উঠোন, এই ঘরদোর সে দিন ভরে ছিল বিজেপির লোকজনে। তার পর? রাজু বলেন, ‘‘সেই যে এসে খেয়ে গেলেন, তার পর আর কেউ এল না। খোঁজও নিল না কেউ।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমাকে নিয়ে রাজনীতিই বেশি হয়েছে।’’
বাড়িতে এখনও মাটির উনুন। রান্নার গ্যাস? বাগানে থেকে সদ্য ফিরেছেন গীতা মাহালি। বললেন, ‘‘রান্নার যে গ্যাস পেয়েছি, শেষ হওয়ার পরে অভাবে আর কিনতে পারছি না। মাটির চুলাতেই রান্না করছি।’’ তাঁদের মতোই আর এক আদিবাসী পরিবারের বাড়িতে বৃহস্পতিবার খাবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বাঁকুড়া ১ ব্লকের আন্ধারথোল পঞ্চায়েতের চতুর্ডিহি গ্রামের বিভীষণ হাঁসদার বাড়ি ঘিরে এখন তাই আগ্রহ তুঙ্গে। শুনেছেন? হাসলেন রাজু। তাঁর অভাবী চোখ মাটির দিকে। গীতা বলছিলেন, ‘‘রাজ্য সরকার থেকেও লোকজন এসেছিল তার পরে।’’
আরও পডুন: মতুয়াদের জন্য পৃথক পর্ষদ, পাট্টা উদ্বাস্তুদের
রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ওঁদের পরিবারের এক জনের স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, মাহালি পরিবারকে সরকারি প্রায় সব প্রকল্পের সাহায্য দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, বিজেপি আদিবাসীদের নিয়ে রাজনীতি করছে।
আরও পডুন: শুভেন্দু আলাদা সভা করতেই পারেন, মমতার বিরুদ্ধে কিছু বলেননি: শিশির
শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক আনন্দময় বর্মণ বলেন, ‘‘আমরা মাহালি পরিবারের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব। তাঁর পরিবারও বিজেপির পাশে রয়েছে, রামনবমীর মিছিলে হেঁটে প্রমাণ দিয়েছেন। রাজনীতি করছে তৃণমূলই।’’
মাহালি পরিবারের কথা জানেন না বাঁকুড়ার বিভীষণ হাঁসদা। তিনি শাহের আগমন নিয়ে উচ্ছ্বসিত। বললেন, ‘‘আমার মতো দিনমজুরের বাড়িতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসতে পারেন, কোনও দিন ভাবিনি। রোজগারের জন্য প্রায়ই পুবে খাটতে (পূর্ব বর্ধমান ও হুগলি জেলায় কৃষি শ্রমিকের কাজ) যেতে হয়। সুযোগ পেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলব, গ্রামেই বারো মাস কাজের সুযোগ হলে ভাল হয়।’’ তাঁর স্ত্রী মণিকাদেবী বলেন, ‘‘আমরা মোটা চালের ভাত খাই। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য সরু চালের ভাত রাঁধব। পোস্তবাটা, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও কুমড়োর তরকারি করব।’’ শুক্রবার রাজারহাটের গৌরাঙ্গনগরে মতুয়া সম্প্রদায়ের নবীন বিশ্বাসের বাড়িতেও যাবেন অমিত শাহ। এ দিন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফে তাঁর বাড়ির সকলের কোভিড পরীক্ষা হয়েছে, সবার নেগেটিভ এসেছে।
বিভীষণবাবুর ঘরে যখন আয়োজনের ধুম, কয়েকশো কিলোমিটার দূরে মাহালিদের আঙিনায় মাটির উনুন ঘিরে তখন অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy