Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দীপালিকে সোনামুখীর কুর্সি দিলেন না মমতাই

দশ বছর পরে সিপিএমের হাত থেকে পুরসভা ছিনিয়ে নেওয়ার অন্যতম কারিগর তিনি। পুরভোটে প্রার্থী বাছাইয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। দলের কাউন্সিলরদের বড় অংশ তাঁর অনুগত। সোনামুখীর রাশ তবু একার হাতে রাখতে পারলেন না দীপালি সাহা! দলের এই বিতর্কিত বিধায়ককে নয়, বরং দীপালি-বিরোধী হিসাবে পরিচিত সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়কেই সোনামুখীর পুরপ্রধানের পদে বসালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০৪:৪২
Share: Save:

দশ বছর পরে সিপিএমের হাত থেকে পুরসভা ছিনিয়ে নেওয়ার অন্যতম কারিগর তিনি। পুরভোটে প্রার্থী বাছাইয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। দলের কাউন্সিলরদের বড় অংশ তাঁর অনুগত।

সোনামুখীর রাশ তবু একার হাতে রাখতে পারলেন না দীপালি সাহা! দলের এই বিতর্কিত বিধায়ককে নয়, বরং দীপালি-বিরোধী হিসাবে পরিচিত সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়কেই সোনামুখীর পুরপ্রধানের পদে বসালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোনামুখীর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তিনি যে বিব্রত, তা বোঝাতে বুধবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে দলের জয়ী পুর-প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠানে মমতা পুরপ্রধান হিসেবে সুরজিৎবাবুর নাম ঘোষণা করেন। মমতা ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘বাঁকুড়ার সোনামুখীতে কী হচ্ছে, তা দিদি জানতে পারবে না, এটা ভাবার কোনও কারণ নেই! মনে রাখবেন রাজ্যের প্রতি ব্লকের কোথায় কী হচ্ছে, না হচ্ছে, সব খবর পাই।’’

মমতার এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে সোনামুখীতে দীপালিদেবীর ক্ষমতা খর্ব করলেন বলেই দাবি তাঁর বিরোধী শিবিরের। ঘনিষ্ঠ মহলে সোনামুখীর বিধায়ক হতাশা লুকোচ্ছেন না। মুখে অবশ্য বলেছেন, ‘‘নেত্রী নিজে ঘোষণা করেছেন। আমার আর কী-ই বা বলার থাকতে পারে!” উল্টো দিকে, খানিকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই পুরপ্রধান পদ পেয়ে যাওয়ায় খুশি সুরজিৎবাবু ও তাঁর অনুগামীরা। সুরজিৎবাবুর কথায়, “খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মুখ দিয়ে আমার নাম ঘোষণা হয়েছে ভেবে গর্ব হচ্ছে।”

তৃণমূল সূত্রের খবর, পুরভোটের পরেই দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে ঠিক হয়, ভোটের সময় নানা ঘটনায় দল বিড়ম্বনায় পড়েছে। বিরোধীরা যাতে আর অভিযোগ তুলতে না পারে, তার জন্য সতর্ক থাকার নির্দেশও দেন দলনেত্রী। তারই প্রতিফলন, শিলিগুড়িতে পুরবোর্ড গড়তে চেয়ে স্থানীয় নেতৃত্ব ঝাঁপালেও, পরে বিরোধী আসনেই বসার ইঙ্গিত। একই ভাবে দীপালি সাহাকে পুরপ্রধান না করে বিতর্ক এড়াতে চান শীর্ষ নেতৃত্ব।

লোকসভা ভোটের সময় বুথে ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর ও ছাপ্পা ভোট দেওয়ায় অভিযুক্ত দীপালিদেবী বারবার নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন। দলের নিচুতচলার কর্মী এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের একংশের সঙ্গে বিধায়ক খারাপ ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে দলের অন্দরে। দলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেন দীপালি-শিবিরেরই এক মহিলা তৃণমূল প্রার্থী। তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করেন, ভোটের দিন তাঁর স্বামীকে মারধরের যে অভিযোগ তিনি করেছিলেন সিপিএমের বিরুদ্ধে, তা পুরোপুরি মিথ্যা। বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘গত বছর বাঁকুড়া শহরে সার্কিট হাউসের এক বৈঠকে দীপালির উপস্থিতিতেই দলনেত্রী বলেছিলেন, ‘দীপালি একটু ঝগড়ুটে। অল্পতেই মাথা গরম করে ফেলে!’ তখনই বোঝা গিয়েছিল, নেত্রী দীপালিকে সংযত হতে বলছেন। এ দিনের বার্তা তো আরও স্পষ্ট।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE