Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সুড়ঙ্গ-যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি হয়তো এন্ডিকটই

সুড়ঙ্গ নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের বর্তমান দলেরও খোলনলচে বদলানো হচ্ছে। কমবেশি ৪০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ওই ব্রিটিশ প্রযুক্তিবিদকে সামনে রেখেই সুড়ঙ্গ খননের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের পরবর্তী দল বাছাই করতে চান কেএমআরসিএল-কর্তারা।

জন এন্ডিকট। নিজস্ব চিত্র

জন এন্ডিকট। নিজস্ব চিত্র

ফিরোজ ইসলাম
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৪
Share: Save:

বিপর্যয় সামলাতে বেশ কিছু বিদেশি বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। ব্রিটিশ প্রযুক্তিবিদ জন এন্ডিকট তাঁদেরই এক জন। জোড়া সুড়ঙ্গ শিয়ালদহ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান সেনাপতি হতে পারেন তিনিই। তাঁর পরামর্শ মেনে বাকি কাজ শেষ করা হতে পারে বলে কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল) সূত্রের খবর।

সুড়ঙ্গ নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের বর্তমান দলেরও খোলনলচে বদলানো হচ্ছে। কমবেশি ৪০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ওই ব্রিটিশ প্রযুক্তিবিদকে সামনে রেখেই সুড়ঙ্গ খননের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের পরবর্তী দল বাছাই করতে চান কেএমআরসিএল-কর্তারা। বিপর্যয় পুরোপুরি সামলে ওঠার পরেই এ নিয়ে সরকারি ভাবে পদক্ষেপ করা হবে বলে কেএমআরসিএলের খবর।

সল্টলেকের সেক্টর-৫ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত পুরো পাতালপথের প্রায় ৯৫ শতাংশ অংশের কাজ নির্বিঘ্নে সম্পূর্ণ হওয়ার পরে যে-ভাবে প্রায় কূলে এসে তরী ডোবার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কেএমআরসিএল-কর্তারা তাতে যারপরনাই ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। হাওড়ামুখী সুড়ঙ্গের ক্ষেত্রে মাত্র সাড়ে ৭০০ মিটার এবং শিয়ালদহমুখী সুড়ঙ্গের ক্ষেত্রে আরও ১৫০০ মিটার অংশের নির্মাণকাজ বাকি রয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে ওই কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষ। খুব দ্রুত হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেডের দিকে গঙ্গার নীচে সুড়ঙ্গ দিয়ে ট্রেন চলা নিয়ে আশাবাদী ছিলেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালও। সেই জন্য মাসখানেক আগে এই নিয়ে টুইটও করেছিলেন তিনি। কিন্তু বৌবাজারের আকস্মিক বিপর্যয়ের জেরে প্রকল্পের কাজ বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। বিপর্যয় সামলে কবে মেট্রো প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কর্তারা।

পরের পর্বে এন্ডিকটকে কেন শীর্ষে রাখতে চাইছে কেএমআরসিএল?

বৌবাজারে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ নির্মাণের জেরে ধস নামতে শুরু করার পরে হংকংয়ের বাসিন্দা এন্ডিকটের সাহায্য চাওয়া হয়। বিশ্বে শতাধিক ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশন তৈরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ওই ব্রিটিশ প্রযুক্তিবিদের নেতৃত্বে চার জনের একটি কমিটি আপাতত ওই বিপর্যয় মোকাবিলার কাজকর্ম দেখভাল করছে। তাঁর পরামর্শেই প্রাথমিক বিপর্যয়ের ধাক্কা অনেকটা সামাল দেওয়া গিয়েছে বলে মেট্রোর খবর।

আপাতত সুড়ঙ্গে জল, মাটি ঢোকার প্রবণতায় অনেকটাই রাশ টানা গিয়েছে বলে জানান কেএমআরসিএলের এক শীর্ষ কর্তা। গত চার দিনে নতুন করে কোনও বাড়ি খালি করার প্রয়োজন হয়নি। বৌবাজার এলাকায় মটি বসে যাওয়ার প্রবণতাও আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। তবে ওই এলাকাকে এখনই বিপন্মুক্ত বলতে রাজি নন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। নতুন করে যাতে পরিস্থিতির আর কোনও রকম অবনতি না-হয়, সে-দিকে লক্ষ রাখছেন তাঁরা।

সুড়ঙ্গে কংক্রিটের তৃতীয় দেওয়াল এন্ডিকেটের পরামর্শ মেনেই তৈরি করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতির আরও কিছুটা উন্নতি হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কেএমআরসিএলের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘কলকাতায় মতো পুরনো শহরে সর্বত্রই সুড়ঙ্গ খোঁড়া চ্যালেঞ্জের কাজ। আগেও সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছে, সেটা জানা যাবে টিবিএম উদ্ধারের পরে। তবে যাঁদের বড় বিপর্যয় মোকাবিলার অভিজ্ঞতা আছে, ভবিষ্যতে প্রযুক্তিবিদদের দলে রাখার ক্ষেত্রে আমরা তাঁদেরই অগ্রাধিকার দিতে চাইছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE