Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
TMC

ব্যাপক বোমাবাজি, কাঁদানে গ্যাস, বারাসতে রাতভর পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ, আহত ৪, গ্রেফতার ১৪

স্বপনবাবুকে উদ্ধার করে ফিরে আসার সময়ই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু হয় বলে অভিযোগ।

এলাকায় পুলিশকে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।

এলাকায় পুলিশকে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৯ ১১:০৯
Share: Save:

তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত বারাসত। রাতভর পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ চলেছে সেখানে। পুলিশকে লক্ষ্য ইটবৃষ্টি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে। বোমাও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস। নামানো হয় র‌্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্সও। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অন্য দিকে, রাতভর খণ্ডযুদ্ধে ৪ পুলিশ কর্মী-সহ বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন বলে খবর। বারাসত হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। দুই পুলিশকর্মীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে তাঁদের।

ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। ওই দিন রাত ৮টা নাগাদ তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এলাকার স্বপন চক্রবর্তীকে বিজেপির কর্মীরা দ্বিজহরিদাস কলোনির একটি ক্লাবে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ক্লাবের মধ্যে আটকে রেখে তাঁকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বারাসত থানার পুলিশ। ক্লাবের মধ্যে থেকে স্বপনবাবুকে উদ্ধার করেন তাঁরা। সেখান থেকে ফিরে আসার সময়ই তাঁদের লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। বোমাও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে পুলিশের।—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: সকালে বর্জন, ‘বিদ্রোহের’ মুখে পড়ে রাতেই রাজনাথকে গ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর​

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উত্তেজিত জনতার উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসও। এর পর পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত ওঠে। পুলিশকে আটকাতে শুরু হয় দেদার বোমাবাজি। রাস্তায় ইট ফেলে তাঁদের বাধা দেন বিজেপি কর্মীরা। পরে র‌্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্স গিয়ে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে। তবে রাতভর তাণ্ডবের পর আপাতত বারাসতের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তবে গোটা এলাকা থমথমে। এলাকায় পুলিশবাহিনী মোতায়েন হয়েছে। তবে এসপি অফিসের নাকের ডগায় দ্বিজহরিদাস কলোনিতে এত বিপুল পরিমাণ বোমা কী ভাবে মজুত ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বারাসতের এই দ্বিজহরিদাস কলোনি এক সময় সিপিএমের গড় হিসাবে পরিচিত ছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সেখানকার প্রায় ১০০ শতাংশ বাসিন্দাই তৃণমূল সমর্থক হয়ে যান। কিন্তু শাসকদলের ছত্রছায়ায় থেকে কলোনির একদল যুবক স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর অত্যাচার চালাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি শক্তি বাড়ানোর পর স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ গেরুয়া শিবিরের দিকে ঝুঁকলে, তা নিয়ে তৃণমূলের ওই বাহুবলী দলের সঙ্গে তাদের বিরোধ বাধে। কিন্তু সাধারণ মানুষের চাপে এলাকাছাড়া হতে হয় তাদের। কলোনির একাংশের অভিযোগ, গতকাল রাতে ওই দুষ্কৃতী এবং সমাজবিরোধীদের এলাকায় ফিরতে সাহায্য করছিল পুলিশ। তা নিয়েই গণ্ডগোল বাধে।

অন্য দিকে পুলিশের দাবি, স্থানীয় স্বপন চক্রবর্তী নামের ওই ব্যবসায়ীর কাছে মোটা টাকা দাবি করছিল কলোনির কিছু ছেলে। যারা বর্তমানে বিজেপির সমর্থক। টাকা দিতে অস্বীকার করলে স্বপনবাবুকে কলোনির ক্লাবে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে গণ্ডগোল শুরু হয়। সারা রাত ধরে তাণ্ডব চলে। এমনকি ৩৪ নং জাতীয় সড়ক পর্যন্ত ঝামেলা পৌঁছে যায়।

পুলিশ দুষ্কৃতীদের সাহায্য করছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। —নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: ১ উতরোতে মমতার ভরসা কি প্রশান্ত কিশোর? নবান্নে দু’জনের বৈঠক, বিদ্রূপে বিজেপি​

সিপিএম থেকে বিজেপিতে চলে যাওয়া দুষ্কৃতীরাই ঝামেলা বাধায় বলে এ দিন অভিযোগ করেন উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের ছেলেদের বিজেপি তুলে নিয়ে গিয়েছিল কাল রাতে। কোথায় স্পর্ধা পাচ্ছে আমি জানি না। যে এলাকায় ঘটনাটা ঘটেছে, সেই এলাকা আগে সমাজবিরোধী কার্যকলাপের জন্য কুখ্যাত ছিল| সব ছিল সিপিএমের হার্মাদ। সেই হার্মাদগুলোই এখন বিজেপি হয়েছে। তারাই এখন এই সব ঘটাচ্ছে। সিপিএম-কে আমি দোষ দেব না। হার্মাদরা আর তাঁদের নিয়ন্ত্রণে নেই।’’

তবে তবে বিজেপির জেলা নেতৃত্বের দাবি, এটা পুরোটাই জনরোষ। তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ মানুষ। পুলিশ দুষ্কৃতীদের সাহায্য করছিল বলেই এই সংঘর্ষ। বারাসতে জেলা বিজেপির সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে পাড়ায় কাল রাতে গন্ডগোল হয়েছে, সেখানে আমাদের যে খুব একটা সংগঠন রয়েছে, এমন নয়। কিন্তু এ বারের ভোটে ওখানকার দুটো বুথে আমরাই লিড পেয়েছি, কারণ তৃণমূলের তোলাবাজি এবং দাদাগিরিতে নাজেহাল হয়ে মানুষ বিজেপি-কে ভোট দিয়ে দিয়েছেন। তৃণমূলের এক জনকে বিজেপি কর্মীরা ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা ঠিক ন। যাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে, তাঁর কাছে আসলে ওই দ্বিজহরিদাস কলোনির কেউ টাকা পেতেন। ক্লাবে বসিয়ে সে বিষয়েই কথা হচ্ছিল।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন এলাকায় যেহেতু অনেকেই বিজেপি হয়ে গিয়েছেন, ফলে ঘটনাস্থলে ১০ জন উপস্থিত থেকে থাকলে তাঁদের মধ্যে ২ জন বিজেপি কর্মীও ছিলেন। এটাকেই রাজনৈতিক রূপ দেয় তৃণমূল। পুলিশকে বলে যে, তৃণমূল কর্মীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ক্লাবে আটকে রেখেছে বিজেপি। এর পরে পুলিশ, র‌্যাফ ঘটনাস্থলে যায় এবং পুলিশের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি হয়। তার থেকেই সংঘর্ষ। যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, যাঁদের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের সক্রিয় কর্মী। কিন্তু ঘটনাটা বিজেপি বনাম পুলিশ বা বিজেপি বনাম তৃণমূল নয়। ঘটনাটা সার্বিক জনরোষের ফল।’’

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবরআমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE