প্রতীকী ছবি।
মাধ্যমিকের মতো পরীক্ষা নিয়ে সংশয় থেকে ‘এক দেশ এক পাঠ্যক্রম’ পর্যন্ত বিভিন্ন মূলগত প্রশ্নকে ঘিরে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি এখন বিতর্কের কেন্দ্রে। পঠনপাঠনের ভাষামাধ্যম সম্পর্কে নতুন নীতিতে যা বলা হয়েছে, তা-ও বিতর্কাতীত নয়। নতুন ব্যবস্থায় মাতৃভাষা এবং আঞ্চলিক ভাষাকে গুরুত্ব দিতে বলা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু কতটা গুরুত্ব এবং প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার কত দূর পর্যন্ত গুরুত্ব, সেই প্রশ্ন উঠছে তুমুল ভাবেই।
নতুন শিক্ষানীতি বলছে, মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষায় ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করতে পারবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্তই। তার পরে অর্থাৎ নবম শ্রেণি থেকে তারা কোন ভাষায় পড়াশোনা করবে, প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষা শিবিরের একাংশ। জাতীয় শিক্ষানীতি বলছে, নবম শ্রেণি থেকে উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হবে ইংরেজি ও হিন্দি। এই ব্যবস্থার প্রতিবাদে মুখর অনেকেই।
রাজ্য পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার রবিবার বলেন, ‘‘এত দিন পড়ুয়ারা শুধু নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্তই নয়, কলেজেও আঞ্চলিক ভাষায় পড়ার সুযোগ পেত। নতুন ব্যবস্থায় সেই সুযোগ আর থাকছে না। কেন? শুধু বাংলা তো নয়, উর্দু, নেপালি-সহ আরও বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষায় পঠনপাঠনের সুযোগ পেত পড়ুয়ারা। এই ভাষাগুলির কী হবে?’’
অনেকের বক্তব্য, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষায় পড়াশোনা করার পরে কোনও ছাত্র বা ছাত্রীকে যদি ইংরেজিতে পঠনপাঠন চালাতে হয়, তা হলে প্রথম থেকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে আসা ছেলেমেয়েদের তুলনায় তার পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। কারণ, ওই আঞ্চলিক ভাষার পড়ুয়া এত দিন শুধু একটা বিষয়ই ইংরেজিতে পড়ে এসেছে। অভীকবাবু জানান, কলেজে ভর্তির জন্য জাতীয় শিক্ষানীতিতে যে-‘ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্টের’ কথা বলা হয়েছে, তারও মাধ্যম হবে হিন্দি, ইংরেজি ও গুজরাতি। বহু ভাষাভাষীর ভারতভূমিতে সব ছেলেমেয়ের পক্ষে এই তিনটি ভাষার একটিতে পরীক্ষা দেওয়া কী করে সম্ভব, প্রশ্ন তুলেছেন অভীকবাবু।
আরও পড়ুন: আবার বদলাল লকডাউনের দিন
নবম শ্রেণি থেকে ছেলেমেয়েরা কোন ভাষায় পড়বে, সেই বিষয়ে চরম বিভ্রান্তি আছে বলে মনে করছেন বাম আমলের স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী পার্থ দে। তিনি বলেন, ‘‘নতুন নীতিতে পড়ুয়ার ভাষাশিক্ষার বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা হয়নি। আমাদের সময়ে পড়ুয়া কী ভাষা শিখবে, সেটা স্পষ্ট ছিল। ইংরেজি বাদে ছিল মাতৃভাষা। কিন্তু নতুন শিক্ষানীতিতে জোর দেওয়া হয়েছে তৃতীয় ভাষার উপরেও। এতে পড়ুয়াদের চাপ বাড়বে। শুধু তা-ই নয়, তৃতীয় ভাষার নামে জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা আছে।’’
প্রাথমিকের আগে তিন বছর যে-পঠনপাঠন বা পাঠপ্রস্তুতির কথা নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, সে-ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, স্কুলগুলিতে এত ঘর কোথায়? শিক্ষাবিদদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলায় ৭০ হাজার প্রাথমিক স্কুল আছে। সেই সব স্কুলে তিন বছর থেকে পড়ানো শুরু করলে স্কুলগুলিতে তিনটি করে বাড়তি শ্রেণিকক্ষ লাগবে। অর্থাৎ ৭০ হাজার স্কুলে অতিরিক্ত দু’লক্ষ ১০ হাজার ঘরের প্রয়োজন হবে। এত ঘর কত দিনে বানানো সম্ভব? কে তার খরচ দেবে? সর্বোপরি সব স্কুলে বাড়তি ঘর তৈরির জায়গা আছে কি? যদি অঙ্গনওয়াড়িতে তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত পড়ানোর বন্দোবস্ত হয়, তা হলে সেই সব শিক্ষা কেন্দ্রেও পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ আছে তো? অঙ্গনওয়াড়িতে অন্তঃসত্ত্বাদের খাবার দেওয়া হয়। তার কী হবে? মাধ্যমিক স্কুলগুলিকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ করলে এত দ্রুত শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বাড়ানো হবে কী ভাবে, সেই প্রশ্নও তুলছেন শিক্ষা শিবিরের অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy