Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

আবার বদলাল লকডাউনের দিন

কিন্তু এই ভাবে বারবার দিন বদল করায় উৎসব না কি সংক্রমণ রোখা— সরকারের কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪৪
Share: Save:

গত ২৮ জুলাই মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার কিছু ক্ষণের মধ্যেই এক প্রস্ত বদলেছিল রাজ্য জুড়ে সম্পূর্ণ লকডাউনের দিন। সে দিন রাতে দিন বদল হয় আরও এক বার। সোমবার ফের লকডাউনের দিন বদল করল সরকার। প্রতি ক্ষেত্রেই যুক্তি, ওই দিনগুলিতে বিভিন্ন উৎসব বা স্থানীয় রীতি পালনের কথা থাকায় লকডাউন না-করার অনুরোধ এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

কিন্তু এই ভাবে বারবার দিন বদল করায় উৎসব না কি সংক্রমণ রোখা— সরকারের কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

অগস্ট মাসে সম্পূর্ণ লকডাউনের দিন প্রথম বার যখন ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, তখন তালিকায় ২২ ও ৩০ অগস্ট ছিল। কিন্তু ওই দু’দিন যথাক্রমে গণেশ পুজো ও মহরম। ফলে কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই দু’দিন লকডাউন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ২৮ জুলাই রাতে ফের জানানো হয়, আগের ঘোষণামতো ২ এবং ৯ অগস্টও লকডাউন হবে না। ২ তারিখ ইদুজ্জোহার পরের এবং রাখী পূর্ণিমার আগের দিন আর ৯ তারিখ বিশ্ব জনজাতি দিবস।

সেই রদবদলের পরে ঠিক হয় লকডাউন হবে ৫, ৮, ১৬, ১৭, ২৩, ২৪ এবং ৩১ অগস্ট। কিন্তু সোমবার সেই তালিকা থেকে চার দিন বাদ দিয়ে অন্য চার দিন লকডাউন হবে বলে জানানো হয়েছে। ১৬, ১৭, ২৩ ও ২৪ অগস্টের বদলে লকডাউন হবে ২০, ২১, ২৭ ও ২৮ অগস্ট। প্রশাসনের অন্দরের খবর, পার্সিদের নববর্ষ, মনসা পুজোর মতো উৎসব থাকায় দিন পরিবর্তন করা হয়েছে।

এ ভাবে বারবার লকডাউনের দিন বদল করায় সরকার সংক্রমণ ঠেকাতে আদৌ আন্তরিক কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, জমায়েত রুখে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতেই লকডাউন-দাওয়াই।

আরও পড়ুন: আসেনি অ্যাম্বুল্যান্স, বাড়িতেই মৃত্যু কোভিড রোগীর

তার থেকে উৎসবকে ছাড় দিলে মূল উদ্দেশ্যই ধাক্কা খায়। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত বলেন, “জমায়েত এড়াতেই লকডাউন। কিন্তু তা না হওয়ায় পরোক্ষে জমায়েতকেই প্রাধান্য দেওয়ার বার্তা ভুল করে ছড়িয়ে যেতে পারে।” বক্ষরোগের চিকিৎসক রাজা ধর বলেন, “আচমকা লকডাউন করে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙা যায় কি না, তার নিশ্চিত প্রমাণ এখনও মেলেনি। তবে ছুটির দিনের তুলনায় জমায়েতের সম্ভাবনা থাকা দিনগুলিতে লকডাউনের করা ভাল। তাতে বেশি মানুষের মধ্যে সংক্রমণের ছড়ানোর আশঙ্কা কমে।”

বারবার লকডাউনের দিন বদলানো নিয়ে সরব বিরোধীরাও। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘লকডাউনকে প্রহসনে পরিণত করছে সরকার নিজেই। লকডাউনের ক্যালেন্ডার এই নিয়ে চার বার বদলে গেল! কে বানাচ্ছে এই তালিকা?’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘রোগ মোকাবিলা এবং মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে! সরকার দিশেহারা।’’ তাঁর প্রশ্ন, রাজীব গাঁধীর জন্মদিন ২০ অগস্ট এব‌ং ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস ২৮ অগস্টই বা কেন লকডাউন হবে?

সরকারের দাবি, নতুন দিনক্ষণে সংক্রমণ-শৃঙ্খল ভাঙার কাজ আরও ভাল ভাবে করা যাবে। তাদের যুক্তি, ২০ এবং ২১ অগস্ট বৃহস্পতি এবং শুক্রবার, পরের দু’দিন শনি ও রবিবার হওয়ায় সুবিধা হবে। আবার ২৭, ২৮ এবং ৩১ তারিখ বৃহস্পতি, শুক্র এবং সোমবার। মাঝে শনি ও রবিবার থাকায় টানা পাঁচ দিন সময় মিলবে। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “নতুন দিনগুলি এই দিক থেকে কার্যকর হবে বলেই সরকারের ধারণা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Covid 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE