Advertisement
E-Paper

বিজেপিশাসিত ওড়িশায় ফের নিহত বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক, বাংলায় কথা বলার কারণেই খুন, অভিযোগ শাসক তৃণমূলের

সুতি-১ নম্বর ব্লকের কয়েক জন যুবক রাজমিস্ত্রির কাজ করতে সম্বলপুর গিয়েছিলেন। তাঁদের একজন ছিলেন জুয়েল শেখ। তাঁকে বাংলাদেশি সন্দেহে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৪১
Murshidabad migrant labour beaten to death in Odisha\\\\\\\\\\\\\\\'s Sambalpur, TMC accuses BJP

ওড়িশার সম্বলপুরে নিহত পরিযায়ী শ্রমিক জুয়েল শেখের বাড়িতে সুতির বিধায়ক ইমানী বিশ্বাস এবং পুলিশকর্তারা। ছবি: সংগৃহীত।

ওড়িশার সম্বলপুরে বুধবার রাতে এক পরিযায়ী শ্রমিককে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। নিহতের নাম জুয়েল শেখ (৩০)। তিনি মুর্শিদাবাদের একজন পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন। এই ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরেই বিজেপিশাসিত ওড়িশা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, বাংলা ভাষায় কথা বলাতেই ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ হিসাবে অভিযুক্ত করে ওই পরিযায়ী শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে।

দিনকয়েক আগেই সুতি-১ নম্বর ব্লকের জুয়েল-সহ কয়েক জন যুবক রাজমিস্ত্রির কাজে সম্বলপুর গিয়েছিলেন। বুধবার রাতে একটি চায়ের দোকানে বসে নিজেদের মধ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলছিলেন জুয়েল, আরিক ও পলাশেরা। অভিযোগ, সেই সময় পাঁচ জনের একটি দল সেখানে চড়াও হয় এবং তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ বলে গালিগালাজ শুরু করে। শ্রমিকেরা নিজেদের বৈধ পরিচয়পত্র দেখালেও দুষ্কৃতীরা কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ। প্রাণের ভয়ে আরিক ও পলাশ পালিয়ে যেতে পারলেও জুয়েলকে ধরে ফেলে উন্মত্ত জনতা। তাঁকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গোলমালের ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে মর্গে নিয়ে যান এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পুলিশ ওই হত্যার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে এবং হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।

এই মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতর। রাজ্যের মন্ত্রী আখরুজ্জামান সরাসরি বিজেপি সরকারকে নিশানা করে বলেন, “ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যে বাঙালি মুসলিমদের টার্গেট করা হচ্ছে। বিজেপি যে বাংলাবিরোধী, এই ঘটনা তার প্রমাণ।” এই ঘটনার খবর পাওয়ামাত্রই মুর্শিদাবাদে নিহত শ্রমিকের বাড়িতে যান স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা ও তৃণমূল নেতারা। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “আর কত দিন বাঙালিদের শাস্তি পেতে হবে শুধুমাত্র এই কারণে যে বাংলা বিজেপির কাছে মাথা নত করেনি? কত প্রাণ গেলে তবে থামবে এই ঘৃণার রাজনীতি? যারা পরিশ্রম করে, সম্মানের সঙ্গে কাজ করে, নাগরিক অধিকার দাবি করে—তাদের অপরাধ কি শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলা? বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বারবার বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিশানা করা হচ্ছে, আর প্রতি বারই একই অজুহাত—তারা নাকি অনুপ্রবেশকারী।”

তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ তথা পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিহত পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ এবং আহতদের কীভাবে রাজ্যে ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, “বিজেপির দীর্ঘদিনের বাংলাবিরোধী প্রচারের সরাসরি ফল এই হত্যাকাণ্ড। বছরের পর বছর ধরে বিজেপি নেতারা সচেতন ভাবে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের অনুপ্রবেশকারী, বহিরাগত ও সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে আসছেন। সেই বিষাক্ত বয়ানই আজ রাস্তায় নেমে এসেছে, যেখানে সাধারণ মানুষ নিজেকে অভিবাসন আধিকারিক ও বিচারক ভাবতে শুরু করেছে। ফলাফল—আইনের শাসনের জায়গায় হিংসা, ঘৃণা ও মৃত্যুর উৎসব।”

তবে এমন আক্রমণের মুখে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপিও। মুর্শিদাবাদের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলেন, “অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দিয়ে সারা দেশের কাছে বাংলার ভাবমূর্তি খাটো করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বাঙালিদের কেউ বিশ্বাস করতে চাইছে না। তার জন্য দায়ী মমতা। কেন পেটের টানে বাংলার ছেলেদের ওড়িশায় কাজ করতে যেতে হচ্ছে? তৃণমূল আগে সেই উত্তর দিক।”

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার এক বিবৃতিতে এই বীভৎস ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দাবি করেছেন, বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের হয়রানি রুখতে ও তাঁদের জীবন-জীবিকার সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ক একটি দফতর খোলা হোক।

সম্বলপুর থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি। তাই ঘটনায় মুর্শিদাবাদের সুতিতে শোকের পাশাপাশি উত্তেজনা রয়েছে বলে খবর।

migrant labour Beaten to death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy