Advertisement
E-Paper

ভবিষ্যতে কোনও সভায় আপনি এ কথা বলবেন না! প্রকাশ্য মঞ্চে শুভেন্দুকে ‘শাসন’ করলেন রাজ্য বিজেপির ‘অভিভাবক’ শমীক

নিজের ভাষণে শুভেন্দু ব্যাখ্যা করছিলেন যে, ‘আদি’ নেতারা ছাড়াও বিজেপিতে এই মুহূর্তে আরও কয়েকটি গোত্রের নেতাদের দেখা যায়, যাঁরা অন্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:২৮
Guardian Samik ‘scolds’ Suvendu, Urges him not to mention his background repeatedly

বৃহস্পতিবার বিজেপির ‘আদি’ নেতাদের সম্মেলনের মঞ্চে (বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী এবং শমীক ভট্টাচার্য (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল দলের মূলস্রোত থেকে হারিয়ে যাওয়া ‘আদি’ নেতাদের সক্রিয়তায় ফেরানোর লক্ষ্যে। অপেক্ষাকৃত ‘নব্য’ নেতা সেই প্রকাশ্য মঞ্চেই অভিভাবকের শাসনের সম্মুখীন হলেন। ঘটনাচক্রে ‘শাসনকারী’ এবং ‘শাসিত’ এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির দুই সর্বোচ্চ নেতা। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার স্পষ্ট ভাষায় বললেন, ‘‘ভবিষ্যতের কোনও সভায় এই কথা আপনি বলবেন না।’’

কোন কথা?

নিজের ভাষণে শুভেন্দু ব্যাখ্যা করেছিলেন, ‘আদি’ নেতারা ছাড়াও বিজেপিতে এই মুহূর্তে আরও কয়েকটি গোত্রের নেতাদের দেখা যায়, যাঁরা অন্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। শুভেন্দুর ব্যাখ্যায়, একটি অংশ বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অন্য দল থেকে বিতাড়িত হয়ে বা সেখান থেকে কিছু না পেয়ে। আর একটি অংশ বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অন্য দল স্বেচ্ছায় ছেড়ে। শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি এই গোত্রে পড়ি। পাঁচটা দফতর (মন্ত্রিত্ব) ছেড়ে, তিনটে সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে আমি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম।’’ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলেও শুভেন্দু জানান।

শুভেন্দুর পরেই বলতে ওঠেন শমীক। এবং কোনও দ্বিধা না করে নিজের ভাষণের প্রায় শুরুতেই অভিভাবক সুলভ ভঙ্গিতে শুভেন্দুকে ‘শাসন’ করেন। রাজ্য বিজেপি সভাপতি স্পষ্টই বলেন, ‘‘আমি শুভেন্দু অধিকারীর কাছে আবেদন করব, ভবিষ্যতের কোনও সভায় এ কথা আপনি আর বলবেন না। কারণ, আপনি এখন বিজেপিতে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছেন।’’ শমীকের ওই মন্তব্যের পরে প্রেক্ষাগৃহে করতালিও শোনা যায়।

কর্মসূচি থেকে বাইরে বেরিয়ে শমীক এ বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করেননি বা তাঁর কথার ব্যাখ্যা দেননি। তবে বিজেপিতে যাঁরা শমীক-ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত, তাঁদের অনেকের ব্যাখ্যা, ‘‘রাজ্য সভাপতি শুভেন্দুবাবুকে বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি আর পর নেই। আর পাঁচজন নেতাকর্মী দলের যতটা আপন, তিনিও ততটাই আপন। বার বার ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের অঙ্গীকার প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই।’’

শমীকের ঘনিষ্ঠেরা বিষয়টির যতখানি সরলীকরণ করেছেন, অনেকে তার সঙ্গে একমত নন। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূল বা অন্য কোনও দল থেকে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের থেকে নিজেকে শুভেন্দু বরাবরই ‘আলাদা’ হিসাবে দেখাতে চান। কারণ, এমন মন্তব্য শুভেন্দু আগেও একাধিক মঞ্চ থেকে করেছেন। বাকিরা যে অন্য দলে কিছু না-পেয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন এবং তিনি যে তাঁদের গোত্রের নন, অর্থাৎ, তাঁর ‘ত্যাগ’ যে অনেক বড়মাপের, সে কথা শুভেন্দু একাধিক বার বলেছেন। বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিতেও তিনি সেটিই বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। আরও বলেছিলেন, ‘যশস্বী নেতা’ অমিত শাহ, বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং তৎকালীন রাজ্য বিজেপির ‘সংগঠন সম্পাদক’ সুব্রত চট্টোপাধ্যয়েরা তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বিজেপিতে। সেই কারণেই তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, তিনি কোনও ‘হেঁজিপেঁজি’ নেতা নন। ওজনদার নেতারা তাঁকে আম্ন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বলেই তিনি একাধিক মন্ত্রিত্ব এবং ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে বিজেপিতে এসেছিলেন।

অনেকের মতে, শুভেন্দুর বক্তব্যে বিজেপির অন্দরে একটি গোত্র বিভাজনের প্রকাশ ছিল। কিন্তু রাজ্য দলের সর্বোচ্চ নেতা শমীক তা হতে দেননি। তিনি চাননি বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলে এমন কোনও বিভাজন তৈরি হোক। ফলে তিনি অঙ্কুরেই সে সম্ভাবনা বিনষ্ট করেছেন। ‘আবেদনে’র ভঙ্গিতে ‘অনুজপ্রতিম’ শুভেন্দুকে শমীক ‘শাসন’ করেছেন। বক্তব্যে ‘আবেদন’ বা ‘অনুরোধ’ শব্দটি থাকলেও শমীক বুঝিয়ে দিয়েছেন, শুভেন্দুর এমন বক্তব্য তিনি অনুমোদন করেন না। ভবিষ্যতেও করবেন না।

পাশাপাশিই শমীক ‘আদি’ নেতাদের উদ্দেশেও অপেক্ষাকৃত নতুনদের আপন করে নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন। শমীক-ঘনিষ্ঠেরা সে কথাও উল্লেখ করেছেন। কারণ, নিজের ভাষণের শেষ দিকে শমীক বলেছেন, ‘‘নতুন একটা শব্দবন্ধ তৈরি হয়েছে— পুরনো কর্মীদের উপরে দায়িত্ব। সেটা কি নতুনদের বাদ দিয়ে হবে? নতুনেরা না-এলে দল এতটা বাড়ত?’’ শমীকের কথায়, ‘‘মানুষ তো সমাজ থেকেই নিতে হবে। কুমোরটুলি থেকে তো গড়িয়ে আনা যাবে না! সুতরাং কোনও আদি নেই, কোনও নব্য নেই। সবাই শুধু বিজেপি।’’

দলের অন্যতম ‘আদিপুরুষ’ অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে গোটা রাজ্য থেকে ‘আদি’ নেতাদের কলকাতায় আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করেছিল বিজেপি। রাজ্য সভাপতি হিসাবে তপন শিকদারের আমল থেকে দিলীপ ঘোষের জমানা পর্যন্ত যাঁরা বিভিন্ন সময়ে রাজ্য বা জেলা স্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী ছিলেন এবং যাঁরা লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে দলের টিকিটে লড়েছিলেন, অথচ এখন কোনও দায়িত্বে নেই, তাঁদেরই মূলত আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। লক্ষ্য: বিধানসভা নির্বাচনে এঁদের ময়দানে টেনে এনে লোকবল বাড়ানো এবং ‘সুখী পরিবার’ সুলভ ছবি তুলে ধরা। জাতীয় গ্রন্থাগারের একটি প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত কর্মসূচির মঞ্চে শমীক-শুভেন্দু ছাড়া স্থান পেয়েছিলেন দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও রাহুল সিংহ, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী এবং কর্মসূচি আয়োজনের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসলও। শেষ তিন বক্তা ছিলেন শুভেন্দু, শমীক এবং বনসল।

Samik Bhattacharya Suvendu Adhikari scolding BJP West Bengal West Bengal Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy