প্রতীকী ছবি।
মাত্র এক শতাংশ। ২০০২ সালে করোনাভাইরাস সার্স-কোভ। আঠারো বছর পরে সার্স-কোভ-টু। মানবশরীরে প্রবেশের ক্ষেত্রে দুই করোনাভাইরাসের মধ্যে মিল প্রায় ৯৯ শতাংশ। কিন্তু ওই এক শতাংশের পার্থক্যই যাবতীয় হিসেব গোলমাল করে দিয়েছে। এমনটাই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। প্রথমটির ক্ষেত্রে (সার্স কোভ) সংক্রমিত হয়েছিল ২৬টি দেশ, ২০০৩ সাল পর্যন্ত মোট সংক্রমণের সংখ্যা ছিল আট হাজারের মতো। আর দ্বিতীয়টিতে (সার্স-কোভ-টু) এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত বিশ্বের ২১২টি দেশ। সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ! দুই করোনাভাইরাসের ওই পার্থক্যে মিউটেশন কতটা দায়ী এবং পরবর্তী সময়ে ভাইরাসের আরও কত মিউটেশন ঘটেছে, এখন সেটাই ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। কারণ, শুধু উপসর্গহীনতা নয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে উপসর্গ একেবারেই বদলে যাচ্ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের। যেমনটা ঘটেছে ডেঙ্গির ক্ষেত্রে। মিউটেশনের ফলে ডেঙ্গি যেমন কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে, তেমনটাই মিউটেশনের ফলেই কোভিড-১৯-এর চরিত্র দ্রুত বদলে যাচ্ছে কি না, সেই বদলের পরিণতি কী, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাটাই এই মুহূর্তে অন্যতম জরুরি বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ এর উপরেই নির্ভর করছে পরবর্তী সময়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলার সামগ্রিক পরিকল্পনা ।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ভাইরাস এক মানবশরীর থেকে আর এক জনের মধ্যে প্রবেশ করলে তার মধ্যে মিউটেশন হয়। যদিও এই মিউটেটেড প্রজাতির ভাইরাসের সংখ্যা কম, তবু অল্প-অল্প হারে জড়ো হয়ে তাদের সংখ্যা বাড়তে পারে। সার্স-কোভ মানবশরীরে প্রবেশের ক্ষেত্রে নাসারন্ধ্র ও ফুসফুসের কোষের উপরিভাগে উপস্থিত ‘অ্যাঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিং এনজ়াইম-টু’ (এসটু) নামে একটি ‘রিসেপটর’, যা মূলত শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ-সহ অন্য কাজ করে, তাকে ‘টার্গেট’ করেছিল। সার্স-কোভ নিজের স্পাইক প্রোটিন দিয়ে এই এসটু ‘রিসেপটর’-এর মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করত। সেই একই পথ ধরেছে সার্স-কোভ-টু-ও। কিন্তু অনেক বেশি ভয়ঙ্কর চেহারায়। তাই বিশ্ব জুড়ে তার এমন দাপট।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর এমেরিটাস বিজ্ঞানী তথা এমস-এর প্রাক্তন ডিন নরেন্দ্র কে মেহরা জানাচ্ছেন, সার্সের সঙ্গে সার্স-কোভ-টুর অনেক মিল থাকা সত্ত্বেও সার্স-কোভ-টু ভাইরাসের সংক্রমণ কেন এতটা বিপজ্জনক, তার সঙ্গে মিউটেশনের বিষয়টি জড়িত কি না, সেটা গবেষণাসাপেক্ষ। নরেন্দ্রর কথায়, ‘‘এ দেশে যেমন উগসর্গহীন
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হবে, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ: কেন্দ্র
রোগীরা রয়েছেন, তেমনই বিশ্বের একাধিক দেশে অনেকের শরীরে ভাইরাস নিঃশব্দে বসেছিল এত দিন। এখন চরিত্র বদলে তা সক্রিয় হয়েছে।’’ নিউ ইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি’ বিভাগের অধ্যাপক আভেরি অগস্টের কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত যে তথ্য রয়েছে, তাতে ভাইরাসটির মিউটেশন হচ্ছে তা নিশ্চিত। কিন্তু সারা বিশ্বে সংক্রমণের সক্রিয়তার ক্ষেত্রে এটাই একমাত্র কারণ কি না, তা নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়।’’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দু’সপ্তাহ আগেও ভারত সংক্রমিত রোগীর হারের নিরিখে বিশ্বের ২১২টি দেশের মধ্যে ১৭ নম্বর স্থানে ছিল। সেখানে বুধবার ভারত উঠে এসেছে একাদশতম স্থানে! লক ডাউনের মধ্যেই গত এক মাসে (৭ এপ্রিল-৬ মে) সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার বেড়েছে, প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার রোগী সংক্রমিত হয়েছেন।
চণ্ডীগড়ের ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এর (পিজিআইএমইআর) ইমিউনোপ্যাথোলজি বিভাগের প্রফেসর সুনীল কে অরোরা বলছেন, ‘‘ঠিক কী কারণে কারও স্বল্প উপসর্গ আর কারও গুরুতর অবস্থা, তা জানা জরুরি। মিউটেশনের বিষয়টি বিশদে জানার জন্য গবেষণা হচ্ছে।’’ ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর সেল সায়েন্স’-এর এক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘এলাকা বিশেষে ভাইরাসটি বেশি না কম আক্রমণাত্মক, এখনই তা নিশ্চিত ভাবে বলার সময় আসেনি।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy