গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মেসির মতো গোল করা তো দূরস্থান, উল্টে লোকসভা ভোটে গোল খেয়ে বসলেন বামেরা! ভোটের ফল ঘোষণার আগে, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি মন্তব্য করেছিলেন, বিজেপি এবং তৃণমূলের প্রতিযোগিতার মাঝে মেসির মতো গোল করে বেরিয়ে যাবে বামেরা। কিন্তু ফল ঘোষণা হতে দেখা গেল, একমাত্র যাদবপুর কেন্দ্র বাদ দিলে বাকি ৪০ আসনেই শোচনীয় অবস্থা বামেদের।
সিপিএম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য যাদবপুর কেন্দ্রে ২০.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে বামেদের মুখ রক্ষা করেছেন। মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রে বামেরা প্রার্থী দেয়নি। বাকি আসনগুলিতে ভরাডুবি হয়েছে বামেদের। মাথাই তুলতে পারেননি বাম প্রার্থীরা।
রায়গঞ্জ কেন্দ্রে সিপিএমের মহম্মদ সেলিম পেয়েছেন মাত্র ১৪.২৫ শতাংশ। গত বারের সাংসদ সেলিম, এ বার বিজেপির কাছে ‘গোল’ খেয়েছেন। দমদমে সিপিএমের নেপালদেব ভট্টাচার্যের ঝুলিতে এসেছে মাত্র ১৩.৯১ শতাংশ ভোট। এই দু’টি আসনেই তাঁরা জয়ী হবেন বলে ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছিল সিপিএম। যাদবপুর তো প্রায় জিতেই গিয়েছিল বলে ধরে নিয়েছিলেন বাম সমর্থকেরা।
আরও পড়ুন- ভরাডুবির দায় নিয়ে ইস্তফার ইচ্ছাপ্রকাশ রাহুলের, খারিজ করল ওয়ার্কিং কমিটি
আরও পড়ুন- বহু মুসলিমপ্রধান আসনেও সাফল্য এসেছে বিজেপির, জানেন?
ভোটের আগে ব্রিগেডের বক্তৃতায় বামেদের নজর টেনেছিলেন দেবলীনা হেমব্রম। ঝাড়গ্রাম আসন থেকে তিনি পেয়েছেন মাত্র ৫.৩৪ শতাংশ ভোট। গত লোকসভা ভোটে মুর্শিদাবাদ থেকে সংসদে গিয়েছিলেন বদরুদ্দোজা খান। তিনিও এ বার পরাজিত। পেয়েছেন মাত্র ১২.৪৪ শতাংশ ভোট। বহরমপুরে আলিমুদ্দিনের আপত্তি সত্ত্বেও বামফ্রন্টের শরিক আরএসপি ইদ মহম্মদকে দাঁড় করানো হয়েছিল। তিনি পেয়েছেন ১.০৩ শতাংশ ভোট। উত্তর কলকাতা আসনের প্রার্থী কণীনিকা ঘোষ লড়াইয়ে ছিলেন। তিনিও ভোট টানতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৭.৪৮ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী জামানত বজায় রাখতে হলে, মোট ভোটের ১৬.৬ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হয় কোনও প্রার্থীকে। যাদবপুরের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে বাদ দিলে, কোনও প্রার্থী সেই ফলক ছুঁতে পারেননি।
আলিপুরদুয়ার, আরামবাগ, আসানসোল, বহরমপুর, বালুরঘাট, বনগাঁ, বাঁকুড়া, বারাসত, বসিরহাট, বীরভূম, বোলপুর, কোচবিহার, দার্জিলিং, ডায়মন্ড হারবার, ঘাটাল, জঙ্গিপুর, জয়নগর-সহ বাকি কেন্দ্রেগুলিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে সিপিএম। বেশির ভাগ আসনেই ৫ থেকে ১০ শতাংশ, কোথাও আবার ৪ শতাংশের নীচেও ভোট পেয়েছে বাম প্রার্থীরা। যাদবপুর বাদে ৪০ আসনেই বামেদের জামানত বাজেয়াপ্ত।
সিপিএম নেতা রবীন দেবের কথায়,‘‘এমন ফল আমরা আশা করিনি। এর আগে আমারা শূন্য আসনও কখনও পাইনি। কেন এমন হল, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’ এই ফলের নেপথ্যে মেরুকরণের রাজনীতি দেখছেন সিপিএম নেতা। তিনি বলেন, ‘‘এ বার ভোটে মেরুকরণের রাজনীতি হয়েছে। ভালবেসে কেউ বিজেপি-তৃণমূলকে ভোট দেয়নি। আমরা চেষ্টা করেছি। হেরে গেলেও, মানুষের পাশে রয়েছি। থাকব।’’
এ বছর লোকসভা ভোটে করুণ ফলাফলের কারণে বামেদের ঝুলিতে একটি আসনও আসেনি। ৮ শতাংশের কাছে নেমে দাঁড়িয়েছে বামেদের ভোট! এখান থেকে কী ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ‘মেসি’ হয়ে উঠতে পারবে সিপিএম? সে খেলা দেখার জন্য অবশ্য এখন অপেক্ষা করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy