জাকির হোসেন ও সুব্রত সাহা
প্রার্থী ঘোষণা হতেই ‘বিদ্রোহ’টা শুরু হয়েছিল। বহরমপুরের বাড়ি থেকে নিজের কেন্দ্র সাগরদিঘিতে পা দিলেই তাঁকে দেখতে হয়েছে— ‘সুব্রত গো ব্যাক’ মিছিল। গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ, মৃদু হামলা’ও এড়াতে পারেননি।
‘যাব না’ বলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর কেন্দ্র সাগরদিঘিতে এক বার গিয়েছিলেন দলনেত্রী। মাঠ ভরা তো দূরের কথা, ‘‘সভায় প্লিজ লোক আসতে দিন, নেত্রী এসে পড়বেন’’, প্রায় ফাঁকা মাঠের মঞ্চ থেকে আর্তি শোনা গিয়েছিল তাঁর গলায়। দলীয় কর্মীরা জানাচ্ছেন, ফিরে যাওয়ার আগে, মমতাও তাঁকে মৃদু তিরষ্কার করে গিয়েছিলেন— ‘মাঠে লোক হয় না কেন!’
দলের এক নেতা বলছেন, ‘‘দুঃখজনক এটাই, কংগ্রেসের আদিম গড়ে প্রথম ঘাসফুল ফুটিয়েও শেষ বেলায় একলা হয়ে পড়েছিলেন তিনি।’’ তিনি সুব্রত সাহা। তবে, ফল প্রকাশের পর সবাইকে অবাক করে যিনি এ বারও জয়ী এবং সেই সাগরদিঘি থেকে। কিন্তু মন্ত্রীত্বের শিকে এ বার আর ছেঁড়েনি তাঁর। অন্তত বৃহস্পতিবারের তালিকায় তাঁর ঠাঁই হয়নি।কেন?
সুব্রত বলছেন, ‘‘নেত্রী যা বাল বুজেছেন তাই করেছেন।’’ এর বেশি আর কী-ই বা বলতে পারতেন তিনি।
মন্ত্রীত্বের আশা ছিল হরিহরপাড়ার নিয়ামত হোসেনরও। কংগ্রেসের একদা দাপুটে নেতা। অধীর চৌধুরীর সঙ্গে টক্করে তাঁকে ছাড়া বাবা যাবে কী করে— এমনই আশা করেছিলেন নিয়ামত অনুগামীরা। কিন্তু পিছিয়ে তাকলেন তিনিও। মন্ত্রীত্বের তালিকায় নাম নেই তাঁরও।
হাওয়ায় ভাসছিল সামশেরগঞ্জ থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতে আসা আমিরুল ইসলামের নামও। কংগ্রেস থেকে রাতারাতি তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রার্থী হওয়া থেকে বিধায়ক নির্বাচন— সবটাই তাঁর এতটাই চমকপ্রদ যে মুখে মুখে ফিরছে গল্পের মতো। তবে, এ য়াত্রায় কংগ্রেস-ত্যগী আমিরুলেরও শিকে ছেঁড়েনি।
প্রথম দফার ঘোষমায় জেলা থেকে মন্ত্রী এক জই, তিনি জাকির হোসেন। তাঁরও মন্ত্রী হওয়া নিয়ে জল্পনা ছিল বিস্তর। শেষ পর্যন্ত দড়ি ছিঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন তিনিই।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মুর্শিদাবাদে রাজনীতি করছেন সুব্রত। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন। জেলায় কংগ্রেসি ঘরানার যে কয়জন হাতে গোনা রাজনৈতিক নেতা আছেন সুব্রতবাবু তাদের অন্যতম।
এক সময় গনিখান চৌধুরীর অত্যন্ত স্নেহধন্য ছিলেন। ১৯৭৭ সালে শুরু তাঁর নির্বাচনী লড়াই। সে বারই প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়ান তিনি, বহরমপুরে। হেরে গিয়েছিলেন প্রায় ২০ হাজার ভোটে।
২০০১ ও ২০০৬ সালে কংগ্রেস তাকে মনোনয়ন দেয় জলঙ্গিতে। দুবারই হারেন। সাফল্য বলতে একবারই , ১৯৯৩ সালে বহরমপুর পুরসভার ভোটে জিতে কাউন্সিলার।
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে অতীশ সিংহের মৃত্যুতে দলের জেলা সভাপতি করা হয় তাঁকে। সেই সূত্রেই ২০১১ সালে সাগরদিঘিতে তৃণমূল প্রার্থী হয়ে কংগ্রেসের মধ্যে বড়সড় ভাঙন ধরিয়ে জেলায় দলের এক মাত্র বিধায়ক হন তিনি। কপাল ফেরে তার। দায়িত্ব পান প্রতিমন্ত্রীর। তার পর? সুব্রতর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ‘‘বাকি যে রইল দুই, তাতে যদি...।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy