Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

স্বাস্থ্যেও ‘আঠারোর’ শাসন, আশাবাদী বিজেপি

লোকসভা নির্বাচনে আঠারোটি আসন পেয়েছে বিজেপি। এর পরেই স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও বিজেপি’র অভাবনীয় উত্থান হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসক মহলের একাংশ।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ০৩:৫৫
Share: Save:

স্বাস্থ্যভবনের পদস্থ কর্তা শাসক দলের ‘ওজনদার’ প্রার্থীকে হারানোর জন্য বিশেষ ধন্যবাদ সহযোগে বিজেপি’র চিকিৎসক-প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে ‘জনসংযোগ’ সেরেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে যে কাজে বিজেপি’র স্বাস্থ্য সেলের চিকিৎসকদের ফোন-হোয়াটসঅ্যাপ ব্যস্ত রেখেছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। যার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও দ্রুত ‘আঠারোর শাসন’ প্রতিষ্ঠা হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বিজেপি’র স্বাস্থ্য সেল।

লোকসভা নির্বাচনে আঠারোটি আসন পেয়েছে বিজেপি। এর পরেই স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও বিজেপি’র অভাবনীয় উত্থান হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসক মহলের একাংশ। সেই জল্পনায় জলবাতাস দিচ্ছে বিজেপি’র স্বাস্থ্য সেলের আহ্বায়ক চিকিৎসক বিবেকানন্দ মজুমদারের মন্তব্য। তিনি বলেন, ‘‘বুথ ফেরত সমীক্ষার পর টুকটাক ফোন পাচ্ছিলাম। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ফোন আর রাখা যাচ্ছে না। বিরোধী পক্ষের সমর্থক চিকিৎসকদের অনেকেই স্বাস্থ্য সেলে যোগ দিতে চাইছেন।’’

এ বারের নির্বাচনে বামেদের ভোট বিজেপি’তে গিয়েছে বলে অনুযোগ করছেন শাসকদলের বড়-মেজো-সেজো নেতারা। চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও কি তেমন সম্ভাবনা রয়েছে? বিবেকানন্দবাবু বলেন, ‘‘যোগদানে ইচ্ছুকের তালিকায় বাম মনোভাবাপন্ন চিকিৎসক যেমন আছেন তেমন তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকেরাও রয়েছেন।’’

এই দলবদল কিংবা অসন্তোষের কারণ ব্যাখ্যায় স্বাস্থ্যভবনে আমলাদের প্রভাব বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পঁয়ষট্টি বছরের পরও চাকরি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অবসর চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। কাজকর্মে গলদ নিয়ে মুখ খুললে উত্তরবঙ্গে বদলির খাঁড়া ঝুলছে।’’ আরেক আধিকারিক জানান, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে সম্প্রতি এক চিকিৎসক এবং এক প্রোগ্রাম অফিসার ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁরা কী কারণে ইস্তফা দিলেন তা খোঁজ করলেই অসন্তোষের মাত্রা টের পাওয়া যাবে। শহরের একটি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক বলেন, ‘‘ভয়ে-ভক্তিতে তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠনে আছি। কোনও কথা বলার জায়গা নেই। চিকিৎসকদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কোনও মাথাব্যথাও নেই।’’

ভাঙনের সম্ভাবনা উড়িয়ে বামপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’-এর সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘চিড় ধরবে তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠনে। আগে কিছু হলে আক্রমণ নেমে আসত। এখন তৃণমূল দুর্বল হয়ে গেল। ফলে আমাদের সংগঠন করতে সুবিধা হবে। উদ্বেগ তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠনেরই।’’ তৃণমূল প্রভাবিত ‘প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনে’র সভাপতি চিকিৎসক নির্মল মাজি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সংগঠনের সম্পাদক শান্তনু সেন বলেন, ‘‘বিজেপি ভাঙতেই পারে, তাই ভাঙনের আশা করছে। দু-একজন স্বার্থান্বেষী মানুষ এদিক-ওদিক যেতে পারেন। চিকিৎসকদের বৃহত্তর অংশ তৃণমূলের সঙ্গেই থাকবে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা, স্বাস্থ্যসাথীর মতো প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় অভাবনীয় কাজ করেছেন।’’

শুক্রবার দুপুরের ছবি অবশ্য বিজেপি’র মুখে হাসি ফোটাতে পারে। স্বাস্থ্যভবনের একাধিক দফতরের কর্মী-আধিকারিকেরা লোকসভা নির্বাচনে আঠারোটি আসন মানে কতগুলি বিধানসভা আসন সেই আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। স্বাস্থ্যভবনের দুই ব্লকে মধ্যাহ্নের বিরতিতে ‘জয় শ্রীরাম’ ডাকও ছাড়লেন কেউ কেউ। নিছক মজা হলেও ভয়ডরহীন মনোভাব বোঝা গিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব-সহ সিংহভাগ আমলারা যেখানে বসেন সেখানেও পে-কমিশন এ বার বসবে বলে আশাবাদী হলেন কর্মীরা। উল্টোদিকে মেডিক্যাল কলেজগুলির চিকিৎসক মহলে কেন হার তা নিয়ে জারি রইল কাটাছেঁড়া। প্রকাশ্যেই জানান দিলেন, কেন অসন্তোষ!

সরকারি চিকিৎসকদের সেই ‘অসন্তোষের’ মাত্রাকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি’র স্বাস্থ্য সেল। স্বাস্থ্য সেলের আহ্বায়ক জানান, আয়ুষ্মান ভারত দ্রুত এ রাজ্যে চালু করার জন্য ১৮ জন সাংসদের সই করানো চিঠি তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দেবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দফতরের মন্ত্রী সেখানে নিজেদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠায় বিজেপির স্বাস্থ্যসেলের আহ্বায়ক বিবেকানন্দবাবু বলেন, ‘‘অমিত শাহ ছ’জনকে টিকিট দেন। রানাঘাটে মুকুটমণি অধিকারীকে স্বাস্থ্যভবন না ছাড়ায় তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। জয়ী চিকিৎসকদের মধ্যে এক জনকে যাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দায়িত্ব পান, সেই আশায় রয়েছি।’’ ঘটনাচক্রে, মন্ত্রিত্বের দৌড়ে এগিয়ে থাকা সাংসদের কাছেই অভিনন্দন বার্তা গিয়েছে স্বাস্থ্য-কর্তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE