Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal State University

শান্তির সমাবর্তনেও কটাক্ষ রাজ্যপালের

রাজ্যপালের খোশমেজাজ এ দিন বেরিয়ে আসে নানা ভাবে।

বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে স্বাগত জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসব চৌধুরী। ছবি: সুদীপ ঘোষ

বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে স্বাগত জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসব চৌধুরী। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:০৫
Share: Save:

কোথাও কোনও বাধা নেই। পড়তে হল না কোনও বিক্ষোভের সামনেও। বরং ‘গার্ড অব অনার’ পেয়ে হাসিমুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের সঙ্গে করমর্দন করতে করতে তিনি সোজা ঢুকে গেলেন বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসব চৌধুরীর ঘরে। সেখান থেকে নির্বিঘ্নে পৌঁছে গেলেন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে।

মঙ্গলবার এত সব কিছু মসৃণ ভাবে ঘটে যাওয়ায় তিনিও কি কিছুটা বিস্মিত? যাদবপুর, কলকাতা-সহ অন্তত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বারের সমাবর্তন ঘিরে তাঁর যে-তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে, এ দিন তার উল্টোটা দেখেই কি তাঁর সুর কিছুটা বিস্ময়-বঙ্কিম হয়ে উঠল! সেই জন্যই কি রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বলতে উঠে আচার্য-রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের জিভে চলে এল ‘শোলে’ ছবির বিখ্যাত সংলাপ, ‘‘ইতনা সন্নাটা কিউঁ হ্যায় ভাই?’’ (এমন নীরবতা কেন ভাই?)। ব্যাখ্যার ঢঙে নিজেই বললেন, ‘‘যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমার যাওয়াকে কেন্দ্র করে যা ঘটেছিল, তার পরে এখানে এসে এমন শান্ত পরিবেশ দেখে আমার মনে হয়েছিল, ইতনা সন্নাটা...?’’

শোলে ছবিতে সংলাপটি ছিল এক বৃদ্ধের, যিনি তখনও জানতেন না, তাঁর তরুণ পুত্রকে ডাকাতেরা হত্যা করেছে। ধনখড়ের ঠোঁটে সেই সংলাপের উচ্চারণে শোকের বদলে খোঁচাটা যথেষ্টই তীক্ষ্ণ। রাজভবনে আসার পর থেকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা, বিশেষত উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের পরিস্থিতি নিয়ে খড়্গহস্ত ধনখড় এর আগে বার বার বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী রাজভবনে গিয়ে বিবাদের সুরাহা করার চেষ্টা করেছেন। তার পরে এ দিনের সমাবর্তনে এই শান্ত, শৃঙ্খলাপূর্ণ বাতাবরণে তিনি যে খুশি, তা গোপন না-করেই ধনখড় বলেন, ‘‘নিয়মানুবর্তিতায় এই বিশ্ববিদ্যালয় সেরার তালিকায় থাকবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।’’ বিক্ষোভ থেকে শান্তি, বর্জন থেকে গ্রহণে অগ্রগতির আবহেও রাজভবন ও রাজ্য সরকারের সংঘাতের প্রসঙ্গ তোলেন রাজ্যপাল। বলেন, ‘‘রাজ্য ও রাজভবনের সংঘাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাজ্যপালের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছিল। রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যথাসম্ভব চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ ধনখড় জানান, তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভারতের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নালন্দা, তক্ষশীলার মতো গৌরবের অধিকারী হবে। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে হিংসা কমাতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিতে হিংসার পরিবেশ মানায় নয়। আরও বেশি সহিষ্ণু হতে হবে মানুষকে। সকলের মত শোনার মতো সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে।’’

আরও পড়ুন: মমতার নিষেধ, তবু বিক্ষোভ গ্যাস সংস্থায়

রাজ্যপালের খোশমেজাজ এ দিন বেরিয়ে আসে নানা ভাবে। ধনখড় জানান, এ দিন তিনি ঠিক করে এসেছিলেন, বিয়েতে সাত পাকের সময় যে-‘সাত বচন’ দিতে হয়, সেই রকম সাত বচন তিনি দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের। এ কথা স্ত্রীকে জানাতে তাঁর স্ত্রী তাঁকে জানান, নিজে বিয়ের সাত বচন ভুলে গিয়ে এখন তিনি ছেলেমেয়েদের সাত বচন দিতে যাচ্ছেন! রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সময় বিয়ের সেই সাত বচন মনে করেছি।’’ পড়ুয়াদের উদ্দেশে তাঁর সাত বচনে মা-বাবা-শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করা থেকে শুরু করে জাতীয়তাবাদ নিয়ে আপস না-করা পর্যন্ত নানান উপদেশ ছিল। রাজ্যপাল জানান, পড়ুয়াদের জন্য তাঁর রাজভবনের দরজা ২৪ ঘণ্টা খোলা।

এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধিকর্ত্রী সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজ্ঞানী হিসেবে সঙ্ঘমিত্রাদেবীর কাজের প্রশংসা করতে গিয়ে খানিকটা মোদী-স্তুতিও সেরে নেন রাজ্যপাল। বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিভাবান বিজ্ঞানীদের খুঁজে বার করতে খুবই উদ্যোগী। প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব উদ্যোগে সঙ্ঘমিত্রার মতো প্রতিভাবান বিজ্ঞানীরা উঠে আসছেন।’’

সমাবর্তনে দীক্ষান্ত ভাষণ দেন সঙ্ঘমিত্রাদেবী। উপাচার্য বাসববাবু জানান, এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হল। আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার রাস্তাঘাট ভাল ছিল না। বাসববাবু বলেন, ‘‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিকাঠামোর দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। রাজ্য সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE