Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

ভোট-চতুর্থীতে সতর্ক কমিশন

বাংলার ৮টি ধরে দেশের ৭২টি লোকসভা কেন্দ্রে আজ ভোট নেওয়া হবে।

ভোট-পথে: চতুর্থ দফা ভোটের আগে বুথের পথে নির্বাচনকর্মীরা। রবিবার কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভোট-পথে: চতুর্থ দফা ভোটের আগে বুথের পথে নির্বাচনকর্মীরা। রবিবার কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০১:১৯
Share: Save:

উত্তরবঙ্গ শেষ করে বাংলায় লোকসভা নির্বাচন এ বার ঢুকছে দক্ষিণবঙ্গে। চতুর্থ দফায় আজ, সোমবার ভোট হবে মোট ৮টি লোকসভা আসনে। তার মধ্যে ৭টিই দক্ষিণবঙ্গের বীরভূম, বর্ধমান ও নদিয়া জেলায়। সঙ্গে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কেন্দ্র। ভোটের উত্তাপ এই সব এলাকায় বরাবরই বেশি। প্রাকৃতিক তাপমাত্রাও এখন ঊর্ধ্বগামী।

বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর এবং বীরভূম— এই ৮ কেন্দ্রের ভোটে আজ প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, তৃণমূলের শতাব্দী রায়, মুনমুন সেন, বিজেপির বাবুল সুপ্রিয় ও সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া (দু’জনেই বিদায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী), সিপিএমের রামচন্দ্র ডোম প্রমুখ। প্রথম তিন দফার ভোটেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ এসেছে রাজ্যে। তৃতীয় দফার ভোটের দিন প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। চতুর্থ দফায় তাই বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন।

বাংলার ৮টি ধরে দেশের ৭২টি লোকসভা কেন্দ্রে আজ ভোট নেওয়া হবে। অন্যান্য রাজ্যের আসনগুলিতে প্রার্থীদের মধ্যে বেগুসরাইয়ে সিপিআইয়ের কানহাইয়া কুমার ও বিজেপির গিরিরাজ সিংহ, কন্নৌজে এসপি-র ডিম্পল যাদব, ফারুকাবাদে কংগ্রেসের সলমন খুরশিদ, মুম্বই উত্তর, দক্ষিণ, উত্তর-মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমে কংগ্রেসের যথাক্রমে ঊর্মিলা মাতন্ডকর, মিলিন্দ মুরলী দেওরা, প্রিয়া দত্ত ও সঞ্জয় নিরুপমের জনপ্রিয়তা যাচাই হবে। মুম্বই উত্তর-মধ্যে বিজেপির পুনম মহাজন, উন্নাওয়ে সাক্ষী মহারাজ প্রমুখেরও পরীক্ষা আজ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিরোধীদের সম্মিলিত দাবির মুখে আজ ৮ কেন্দ্রের ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে কমিশন। মোট ৫৬১ কোম্পানি মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছে তারা। তার মধ্যে বর্ধমানে ১৫০, বীরভূমে ১২৮, নদিয়ায় ১৩২, আসানসোল ও দুর্গাপুরে ৮২ এবং বহরমপুরে ৬৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনি রাখা হচ্ছে। বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ভোটের দিন ‘নজরবন্দি’ রাখার নির্দেশও দিয়েছে কমিশন।

প্রার্থীদের পাশাপাশি তৃণমূলের তরফে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হিসেবে বীরভূমে অনুব্রত এবং মুর্শিদাবাদে শুভেন্দু অধিকারীরও আজ পরীক্ষা। মানুষের কাছে শুভেন্দুর আবেদন, ‘‘কোনও প্ররোচনায় পা না দিয়ে নির্ভয়ে ভোট দিতে যান।’’ একই আবেদন করেছেন মুকুল রায়-সহ বিজেপি নেতারা। কংগ্রেসের অধীরবাবু বলেছেন, ‘‘নবান্নের নির্দেশে জেলা প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা নিচ্ছে না। তবু মানুষের কাছে আবেদন, গণতন্ত্রের উৎসব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। যদি শোনেন অধীর চৌধুরী খুন হয়ে গিয়েছে, তা হলেও তাতে কান না দিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে যান!’’

বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনেই অশান্তি এবং অনিয়মের অভিযোগে খবরের শীর্ষে থেকেছে বীরভূম জেলা। এ বার তাই ভোটের আগের দিন, রবিবার সিউড়িতে গিয়ে কমিশনের বিশেষ পুলিশ-পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে আশ্বাস দিয়েছেন, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিবেক এ দিন সকালে কপ্টারে সিউড়ি পৌঁছে আলাদা আলাদা ভাবে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পরে প্রশাসনের কর্তা এবং জেলায় কমিশনের তরফে আসা পর্যবেক্ষকদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেছি, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। এই উদ্দেশ্য সফল করতে হলে কী ধরনের ভূমিকা আধিকারিকদের নিতে হবে, তার পরামর্শ দিয়ে গেলাম। যাতে প্রত্যেক ভোটার নির্ভয়ে ভোট দান করতে পারেন।’’

রাজ্যের আর পাঁচটা জেলার চেয়ে বীরভূম আলাদা। গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলার প্রায় ৮৪% আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল শাসক দল। তৃণমূলের ‘উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা’য় বহু ক্ষেত্রে মনোনয়নই জমা করা যায়নি বলে অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। তারও আগে ২০১৬ সালের বিধানসভা বা ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও শাসক দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় হুমকি দেওয়া-সহ একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। এ বারও জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত সমস্ত বুথ ও অঞ্চল সভাপতিকে কত ‘লিড’ দিতে হবে, তার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন। বাহিনী থাকবে বুথে এবং ভোটকেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে। বিরোধী নেতাদের প্রশ্ন, ভোটারদের বাড়ি থেকে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছনোর দায়িত্ব কে নেবে? বোলপুরের বিস্তীর্ণ তল্লাট ঘুরে এ দিনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিশেষ দেখা মেলেনি। সে ভাবে দেখা যায়নি পুলিশের নাকা তল্লাশিও।

আসানসোলে এ বার বিজেপির বাবুলের লড়াই তৃণমূলের মুনমুনের সঙ্গে। তৃণমূল নেতারা এ বার মুনমুনকে জেতানোর জন্য মরিয়া। এই কেন্দ্রে লড়াইয়ে রয়েছেন সিপিএম প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ও। ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া এলাকায় বহিরাগতেরা যাতে ঢুকতে না পারে, সে দিকে কড়া নজর রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE