Advertisement
২১ মে ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

শেষ দফার আগে মমতার ‘পত্রাঘাত’ কমিশনকে

চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় চারটি অভিযোগ জানিয়েছেন। এক, কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি’র প্রভাবে ভোট প্রক্রিয়ার মধ্যে কমিশন একাধিক অবৈধ, অসাংবিধানিক এবং একপেশে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সুনীল অরোরা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সুনীল অরোরা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০২:৪৮
Share: Save:

নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজ করছে বলে বেশ কিছু দিন ধরেই অভিযোগ করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের শেষ দফা ভোটের আগের দিন শনিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেন, কেন্দ্রের শাসকদলের প্রভাবমুক্ত হয়ে শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ ভোটের ব্যবস্থা করুক কমিশন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, আজ, রবিবার ভোটের আগে এই চিঠি দিয়ে কমিশনের উপর চাপ জারি রাখলেন মমতা।

চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় চারটি অভিযোগ জানিয়েছেন। এক, কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি’র প্রভাবে ভোট প্রক্রিয়ার মধ্যে কমিশন একাধিক অবৈধ, অসাংবিধানিক এবং একপেশে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে শুধু রাজ্য প্রশাসন এবং তার আধিকারিকদেরই নয়, সাধারণ মানুষেরও হেনস্থা হয়েছে। দুই, কমিশন নিযুক্ত কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার গত ১৪ মে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে শহরে বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর রোড-শো-র অনুমতি দিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আঘাত করতে এবং রাজ্য সরকার ও রাজ্যবাসীকে অপমান করতে ওই রোড-শো থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গোলামাল বাধানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তিন, কমিশন বেআইনি ভাবে দু’জন অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিককে বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে। তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রের শাসক দলের কথা মেনে বার বার পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন। চার, এই বিষয়গুলি কমিশনের নজরে আনা সত্ত্বেও সুবিচার পাওয়া যায়নি। এই প্রেক্ষিতেই তিনি শেষ দফায় নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত ভোটের দাবি করছেন বলে চিঠিতে জানিয়েছেন মমতা।

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, ‘‘চোরের মায়ের বড় গলা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং আরও নানা জায়গায় আমাদের কর্মীদের মারা হচ্ছে, বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আবার উল্টে দিদিই কমিশনে এ সব আজগুবি অভিযোগ করছেন! হারের আগে অজুহাত তৈরি করছেন।’’ বিজেপি নেতা মুকুল রায়ও এ দিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছেন, ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের ফলতা, সাতগাছিয়া, বিষ্ণুপুর অঞ্চলে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। বিজেপি কর্মীদের বাড়িছাড়া করা হচ্ছে। যদিও তাঁর এই অভিযোগ সম্পর্কে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওঁকে আমি দীর্ঘ দিন ধরে চিনি। উনি মিথ্যা বলেই থাকেন। এখনও বলছেন।’’ ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপার শিবাজী পাণ্ডের বক্তব্য, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে কমিশনের নির্দেশ মতোই কাজ করছি।’’

প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগেও মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়ে কমিশনের উপর কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি-র প্রভাব নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গত বুধবার এ রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারের সময়সীমা এগিয়ে আনা নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছিলেন তিনি। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে কমিশনকে বিজেপি-র বর্ধিত কার্যালয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অন্য দিকে, সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এ দিন দিল্লির নির্বাচন সদনে গিয়ে শেষ দফার ভোট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সিপিএমের অভিযোগ, তাদের ডায়মন্ড হারবার এবং যাদবপুরের প্রার্থী ফুয়াদ হালিম এবং বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য একাধিক বার নানা অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দেওয়ার পরেও কমিশনের রাজ্য শাখা কোনও পদক্ষেপ করেনি। সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে অবিলম্বে কমিশনের পদক্ষেপ দাবি করেছেন ইয়েচুরি। তাঁর আরও অভিযোগ, মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঠিকমতো রুটমার্চ করানো হচ্ছে না। এ বিষয়ে কমিশনের নির্দেশ কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। ইয়েচুরি কমিশনকে জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় সময়ে পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তাঁদের যাতে সময়মতো পাওয়া যায় এবং অভিযোগ জানানো সম্ভব হয়, তা নিশ্চিত করার দাবিও করেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE