মারের মুখে সুশান্ত ঘোষ। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর আদালত চত্বরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
মাঝে শুধু চার বছরের ব্যবধান। ফের সেই মেদিনীপুর আদালত চত্বরেই আক্রান্ত হলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, গড়বেতার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ।
২০১২ সালে এজলাস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় এক তৃণমূল কর্মী জুতো ছুড়ে মেরেছিল সুশান্তবাবুকে। আর বৃহস্পতিবার শুনানি শুরুর আগেই মার খান তিনি।
এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সুশান্তবাবু আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। আশপাশে পুলিশও ছিল। তারই মধ্যে আচমকা মনোরঞ্জন সিংহ নামে গড়বেতার এক বাসিন্দা তেড়ে এসে প্রাক্তন বিধায়ককে নিশানা করে ঘুষি চালান। কাঁধে আঘাত লাগে সুশান্তবাবুর। তারপরও বার কয়েক হাত চালান মনোরঞ্জনবাবু। কিন্তু সরে গিয়ে আঘাত এড়ান সুশান্তবাবু।
দাসেরবাঁধ কঙ্কাল-কাণ্ডের শুনানিতে এ দিন মেদিনীপুর আদালতে এসেছিলেন এই খুনের মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সুশান্তবাবু। ২০০২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর গড়বেতায় যে সাতজন তৃণমূলকর্মীকে সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনী খুন করে বলে অভিযোগ, সেই নিহতদের মধ্যে ছিলেন মনোরঞ্জনবাবুর ছেলে স্বপন সিংহও। রাগে-ক্ষোভেই এ দিন হামলা চালান তিনি। এ দিন মনোরঞ্জনবাবুকে বলতেও শোনা যায় “সুশান্তই আমার ছেলেকে খুন করেছে। আমি ওকে মারবই।” পরে পুলিশ এসে মনোরঞ্জনবাবুকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
গোটা ঘটনায় তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছে সিপিএম। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “এটা পরিকল্পিত হামলা। তৃণমূলেরই কাজ।’’ একই সঙ্গে তাঁর মত, ‘‘এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে।” সুশান্তবাবুও বলেন, “ওরা (তৃণমূল) তো অনেক দিন ধরেই আমাকে জেলায় আসতে বাধা দিচ্ছে। তা ছাড়া, মামলা এখনও বিচারাধীন। আমি শুধু বলতে পারি, সব মিথ্যা অভিযোগ।”
তৃণমূল অবশ্য ঘটনার দায় নিতে নারাজ। এ দিন সন্ধ্যায় দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, ‘‘কী হয়েছে জানি না। সব ঘটনায় দলকে জড়িয়ে দেওয়া ঠিক নয়।’’
২০১২ সালের ৬ মার্চ শ্যামাপদ কুণ্ডু নামে যে তৃণমূলকর্মী সুশান্তবাবুকে জুতো ছুড়ে মেরেছিল, তাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তবে এ দিন মনোরঞ্জনবাবুকে গ্রেফতার করা হয়নি। জেলার পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “আদালত চত্বরে ঠিক কী হয়েছে খতিয়ে দেখছি।”
২০০২ সালে যে সাতজন তৃণমূলকর্মীকে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে দু’জনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। বাকি পাঁচজনের দেহ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। ২০১১ সালে পালাবদলের পরে সুশান্তবাবুর গ্রামের বাড়ি গড়বেতার বেনাচাপড়ার অদূরে দাসেরবাঁধ থেকে মাটি খুঁড়ে কিছু হাড়গোড় মেলে। তারপরই সুশান্তবাবু-সহ ৪০ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে।
দাসেরবাঁধ থেকে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়ের মধ্যে দু’জনের দেহাবশেষ ডিএনএ পরীক্ষার পরে শনাক্ত হয়েছে। এক জন অজয় আচার্য, অন্য জন মনোরঞ্জনবাবুর ছেলে স্বপন। অজয়বাবুর ছেলে শ্যামল আচার্যের অভিযোগের ভিত্তিতেই এই মামলা রুজু হয়। মামলা চলছে মেদিনীপুরের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে। গোড়ায় ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ। পরে তদন্তভার নেয় সিআইডি। সুশান্তবাবু-সহ ৫৮ জনের নামে সিআইডি চার্জশিটও জমা দিয়েছে। তবে এখনও চার্জ-গঠন হয়নি। মামলার পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে আগামী ২১ জুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy