Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিয়েতে পাত পেড়ে সন্দেশের পঞ্চব্যঞ্জন 

নতুন বৌয়ের জন্য শ্বশুরবাড়িতে আয়োজন এমনটাই হওয়ার কথা। কিন্তু পঞ্চব্যঞ্জনে সাজানো ওই থালার একটি পদও রাঁধুনির রাঁধা নয়। প্রতিটি পদ যত্ন করে তৈরি করছেন মৃৎশিল্পী এবং মিষ্টির কারিগরেরা।

 ক্ষীরের তৈরি ভাত-তরকারি। নিজস্ব চিত্র

ক্ষীরের তৈরি ভাত-তরকারি। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

চকচকে কাঁসার থালায় গোল করে দুধসাদা চালের ভাত। এক কোণে নুন-লেবু, টুকরো কাঁচা পেঁয়াজ। বেগুনি, ফিশ ফিঙ্গার, চিংড়ির কাটলেট। বাটিতে ডাল, মাছের আস্ত মাথা দিয়ে ডালনা। ইলিশের পেটির ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে ডিম! থরে থরে চিংড়ির মালাইকারি থেকে চিকেন। যাকে বলে একেবারে রাজকীয় আয়োজন।

নতুন বৌয়ের জন্য শ্বশুরবাড়িতে আয়োজন এমনটাই হওয়ার কথা। কিন্তু পঞ্চব্যঞ্জনে সাজানো ওই থালার একটি পদও রাঁধুনির রাঁধা নয়। প্রতিটি পদ যত্ন করে তৈরি করছেন মৃৎশিল্পী এবং মিষ্টির কারিগরেরা। বিশেষ ভাবে তৈরি সন্দেশ পাক করেছেন নবদ্বীপের মিষ্টান্ন শিল্পীরা। তা দিয়েই অমন তাক লাগানো নিখুঁত থালা সাজানো।

সন্দেশ দিয়ে চমকপ্রদ খাবারের থালা গড়েছেন প্রবীণ মৃৎশিল্পী নাড়ুগোপাল দাস এবং তাঁর ছেলেরা। বিশেষ সন্দেশটি তৈরি করেছেন বহুকালের মিষ্টান্ন শিল্পী প্রয়াত ঈশ্বর পোদ্দারের বর্তমান প্রজন্ম। দু’টি ভিন্ন ধারার শিল্পীদের মেলবন্ধনে তৈরি হচ্ছে ওই মিষ্টি। পাঁচপুরুষের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী কৃষ্ণেন্দু পোদ্দার বলেন, “বিয়ের তত্ত্বে সন্দেশ দিয়ে তৈরি মাছ, প্রজাপতি বা বর-বৌ দেওয়া বহু কালের রীতি। ইদানীং সেখানে নতুন ভাবনা আসছে। ক্রেতারা নতুন কিছু খুঁজছেন। সেই চাহিদা মেটাতে গিয়েই এমন জিনিস তৈরি হয়েছে।”

মৃৎশিল্পী নাড়ুবাবু বলেন, “মাটি নিয়ে আর সন্দেশ নিয়ে কাজে খুব একটা ফারাক নেই। তবে সে সন্দেশ সাধারণ সন্দেশ থেকে আলাদা ধরনের হতে হবে। তিরিশ বছরেরও আগে বিয়ের তত্ত্ব সাজানোর মিষ্টি তৈরি করা শুরু করি। এখন ছেলেরা নতুন নতুন কাজ করছে।” তাঁর বড় ছেলে তরুণ বলেন, “সন্দেশে দিয়ে রজনীগন্ধার জোড়া মালা এবং সিংহাসনে বসা বর-কনের খুব চাহিদা। সম্প্রতি এক জন তাঁর মেয়ের বিয়েতে সন্দেশ দিয়ে শকুন্তলাও তৈরি করিয়েছিলেন।”

কেমন সময়, কতটা সন্দেশ লাগে? দামই বা কেমন? তরুণ বলেন, “এই খাবারের থালাটা আমি আর আমার দুই ভাই মিলে এক দিনে করেছি। সাড়ে তিন কেজি সন্দেশ লেগেছ। সন্দেশের দাম বাদে মজুরি পড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। পাঁচটা না আটটা, ক’টা বাটি হবে তার উপরে মজুরি কমবেশি নির্ভর করে। আমাদের চাই এমন সন্দেশ যা মাটির মতো মিহি এবং আঠালো। তবেই যেমন খুশি আকার দেওয়া যায়।”

মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী কৃষ্ণেন্দু পোদ্দার বলেন, “ছানা মিহি চন্দনের মতো বেটে ঢিমে আঁচে ক্ষীর মিশিয়ে অনেক সময় নিয়ে তৈরী করা হয় ওই বিশেষ সন্দেশ। তবেই তৈরি হয় এমন নিখুঁত সব জিনিস। অমন একটা থালার দাম পড়ে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। থালা বাটি অবশ্য ক্রেতাদের নিজস্ব।” উত্তর দিনাজপুর থেকে উত্তর কলকাতা, মালদহ থেকে মেচেদা। জনপ্রিয়তা বাড়ছে এই বিশেষ মিষ্টির। শুধু বিয়ে নয়, পারিবারিক উৎসব থেকে দেবতাকে নিবেদন— নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্রেতারা আসছেন শিল্পীদের সামনে।

সবচেয়ে চমকপ্রদ কাজটি তরুণকে দিয়েছিলেন নবদ্বীপেরই এক প্রবীণ মিষ্টান্ন শিল্পী রামকৃষ্ণ ঘোষ। তিনি তার ছেলের বেয়াই-বেয়ানের সন্দেশের মূর্তি বানিয়ে উপহার দিয়েছিলেন বিয়েতে। সন্দেশের কেরামতি দেখে তাজ্জব হয়েছিল গোটা বিয়ে বাড়ি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sweet Nabadwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE