Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছুটির প্রতিবাদে শিক্ষকেরা রাস্তায়

এ বার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে দীর্ঘ ছুটির প্রতিবাদে কলকাতার পথে নামলেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি অংশ।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০২:২১
Share: Save:

গ্রীষ্মের দহন যত তীব্রই হোক, একটানা দু’মাস স্কুলে ছুটি দেওয়ায় আখেরে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতিই যে সব চেয়ে বেশি, শিক্ষা শিবির তা বারে বারেই জানিয়েছে। শিক্ষা-চিন্তকেরা এবং শিক্ষকেরা একক বা সংগঠনগত ভাবে এর প্রতিবাদও জানিয়েছেন।

এ বার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে দীর্ঘ ছুটির প্রতিবাদে কলকাতার পথে নামলেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি অংশ। মঙ্গলবার তাঁরা বিকাশ ভবনে শিক্ষা দফতরের কর্তাদের স্মারকলিপি দিয়ে আসেন। ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচি হিসেবে নয়, পড়ুয়াদের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবেই তাঁদের এই পদক্ষেপ।

ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকও। তাঁরা এসেছেন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া ও কলকাতা জেলা থেকে। সল্টলেক করুণাময়ীর রাস্তায় প্রতিবাদী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল: ‘কী করে ওরা পাবে আয়রন ট্যাবলেট?’ ‘স্কুলে স্কুলে চাল-ডাল পচবে আর আমাদের শিশুরা থাকবে অভুক্ত?’ ‘নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিক মূল্যায়ন কী ভাবে সম্ভব হবে?’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

হালিশহর থেকে এসেছিলেন মালঞ্চ স্কুলের শিক্ষক পলাশ পাল। তিনি জানান, তাঁর স্কুলে প্রচুর প্রান্তিক পড়ুয়া পড়ে। টানা ৫৯ দিনের ছুটিতে তাদের অনেকেই হয়তো শিশু শ্রমিকের কাজ করতে চলে যাবে। ‘‘টানা ৫৯ দিন মিড-ডে মিল পাবে না পড়ুয়ারা। পেটের টানেই ওরা হয়তো ফের শ্রমিকের কাজে চলে যেতে বাধ্য হবে। এত দিন ছুটি থাকলে আমরা পড়ুয়াদের উপরে সে-ভাবে নজরও রাখতে পারব না,’’ বললেন পলাশবাবু। তাঁর মতে, অনেক ক্ষেত্রেই নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা নাবালিকা ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যায়। স্কুলের শিক্ষকেরা অনেক সময়েই এই ধরনের বিয়ে আটকেছেন। এই গরমের ছুটির মরসুমেই বিয়ের মাসও থাকবে। টানা ছুটিতে কোনও নাবালিকার যদি বিয়ে হয়ে যায়, তা হলে তাঁরা সেটা বুঝতে পারবেন না।

কদম্বগাছি এইচকেএমসিএম হাইস্কুলের শিক্ষক হিমাংশু দেবনাথ বলেন, ‘‘টানা ৫৯ দিন ছুটি থাকলে নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিক মূল্যায়নও সম্ভব নয়। কী ভাবে পাঠ্যক্রম শেষ হবে, সেটাই বুঝতে পারছি না।’’

শুধু প্রতিবাদ নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক শিক্ষক ছুটির মধ্যে ছেলেমেয়েদের জুটিয়ে এনে পঠনপাঠন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ দিনের জমায়েতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, দু’মাসের ছুটিতে তাঁরা বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতে চান। সজল মণ্ডল নামে এক শিক্ষক জানান, প্রতি বছর গরমের ছুটি যেমন থাকে, তেমনই থাকুক। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের সমস্যায় ফেলে দেওয়া এই দীর্ঘ দু’মাসের ছুটির সিদ্ধান্ত যেন অবিলম্বে পুনর্বিবেচনা করা হয়।

শিক্ষা শিবিরের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় স্কুলশিক্ষায় বাংলার অনুজ্জ্বল ছবি উঠে এসেছে। তার মধ্যে বেনজির ছুটিতে স্কুলপড়ুয়াদের পড়াশোনা ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রাত্যহিক পাঠ থেকে দূরে সরে যাবে তারা। পেটের টানে খাটতে যেতে বাধ্য হবে। স্কুল চললে সপ্তাহের ছ’দিন দুপুরের খাবারটুকু জুটত। ছুটিতে মিড-ডে মিল তো মিলবেই না, দেওয়া যাবে না বিভিন্ন ওষুধও। তাই দীর্ঘ ছুটির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা দরকার।

বিকেলে স্মারকলিপি জমা দিয়ে সজলবাবু জানান, তাঁরা স্কুলশিক্ষা দফতরের কমিশনার সৌমিত্র মোহনের হাতে স্মারকলিপি দিয়ে এসেছেন। সৌমিত্রবাবু তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন, ওই স্মারকলিপি নির্দিষ্ট দফতরে পৌঁছে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teachers Holiday West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE