Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঘাড়ের নীচে উঁকি দিয়ে যাক ট্যাটু

কঙ্গনা-ইমরানের ‘কাট্টি বাট্টি’ দেখে ফেলেছেন নিশ্চয়ই? দু’জনের মধ্যেকার বরফ গলার পরে প্রেমটা সেখানে জমেই ওঠে ট্যাটু নিয়ে কথা বার্তা দিয়ে। কঙ্গনার ট্যাটু-প্রীতির কথা মাথায় রেখেই ছবির জন্য তাঁর অ্যাঙ্কেলে ‘বিজলি’ ট্যাটুটি বিশেষ ভাবে ব্যবহার করেন পরিচালক।

সোহিনী মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:০২
Share: Save:

কঙ্গনা-ইমরানের ‘কাট্টি বাট্টি’ দেখে ফেলেছেন নিশ্চয়ই? দু’জনের মধ্যেকার বরফ গলার পরে প্রেমটা সেখানে জমেই ওঠে ট্যাটু নিয়ে কথা বার্তা দিয়ে। কঙ্গনার ট্যাটু-প্রীতির কথা মাথায় রেখেই ছবির জন্য তাঁর অ্যাঙ্কেলে ‘বিজলি’ ট্যাটুটি বিশেষ ভাবে ব্যবহার করেন পরিচালক।

দোলের সময় কলকাতার বিজ্ঞাপনী সংস্থার কপি রাইটার সুকন্যা যখন বহরমপুরে ফিরল, সবাই অবাক হয়েছিল ওর লম্বা চুল ক্রু কাট করে ফেলায়। কিন্তু সবার চোখ গিয়েছিল, ঘাড়ের নীচে উজ্জ্বল ট্রাইবাল মোটিফের ট্যাটুটার দিকে। সকলকে এক গাল হেসে ও বলে ফেলেছিল, “চুলটা জাস্ট কাটতে হত! ট্যাটুটা আসলে এত পছন্দ হয়ে গেল!” যে কোনও লুকে নিজস্ব স্টেটমেন্ট তৈরি করতে ট্যাটু আজকে এতটাই অপরিহার্য হয়ে উঠছে জেন ওয়াইয়ের কাছে। ট্যাটুর কথা মাথায় রেখেই তাঁরা হেয়ার স্টাইল সেট করছেন, বা বেছে নিচ্ছেন পছন্দসই পোশাক। পুজোর হেয়ারকাট, নতুন জামার সঙ্গে পুজোর সেলফিতে এ বার নতুন হ্যাশট্যাগ যোগ হবে—#পুজোরট্যাটু।

অবশ্য শুধু এই প্রজন্ম কেন, দুর্গাপুরের রেড ইন্ডিয়ান ট্যাটু স্টুডিওর আর্টিস্ট শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তো জানালেন, তাঁর বেশির ভাগ কাস্টমারই ৫০-৫৫ বছর বয়সের মধ্যে। তাই ট্রেন্ডের সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে একটা বডি আর্ট অন্তত আপনার ‘বনতা হ্যায়’! অ্যাঙ্কেলের ঠিক ওপরে আঁকা ‘বিজলি’ ট্যাটু, কঙ্গনা রানাওয়তের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কাট্টি বাট্টি’ ছবিতে তাঁর চরিত্রের সঙ্গে যেমন খুবই মানানসই। যদিও ইমরান খানকে আবার ওই ছবির শুটের আগে রোজ নিজের আর্মে আঁকা ব্যাটম্যান ট্যাটুকে মেক আপে ঢাকতে হতো। সদ্য বাবা হওয়ার পরে মেয়ে ইমারার পায়ের ছাপও বুকে ট্যাটু করে রেখেছেন ইমরান। কলকাতার ‘থ্রি কিউব ট্যাটু’র কর্ণধার রাজদীপ পাল জানান, ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’ ছবির পরে বরুণ ধাওয়ানের ফোর হ্যান্ডে রিং-এর মতো ঘিরে থাকা ‘ব্ল্যাক ওয়ার্ক ব্যান্ড’ ট্যাটু কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।

মেয়েরা এ বার পরী, প্রজাপতি, পাখি বা পালকের ডিজাইনে বদল আনতেই পারেন। এথনিক লো নেক ব্লাউজের সঙ্গে কাঁধের নীচে আঁকাতে পারেন বৌদ্ধ মোটিফ ‘টোট ওয়ার্ক মান্ডালা’। পিঠের মাঝখানে বা ঘাড়ের নীচে নিজের চরিত্র বা পছন্দ অনুযায়ী আঁকাতে পারেন নানা ফ্লোরাল ডিজাইন। পুজো যখন, তখন পিঠে পদ্ম, শিউলি বা কাশ ফুল ঘিরে আপনার ইউনিক ডিজাইন প্যান্ডেলে সকলের নজর কাড়তে বাধ্য। ওয়েস্ট লাইন এবং অ্যাবডোমেনের কর্নারে বা নাভিকে বেস করে আঁকাতে পারেন শঙ্খও। এমনিতেই প্রত্যেক কাস্টমারের জন্যই কাস্টমাইজ ট্যাটু বানানো হয়, জানালেন কলকাতার ‘লিজার্ডস স্কিন’-এর নিলয় দাস, শিলিগুড়ির ‘যোগীস ট্যাটু’-র যোগী। তবে পুজো স্পেশ্যাল হিসেবে ত্রিনয়ন বা ত্রিশূলের মোটিফ রয়েছে নিলয়ের পছন্দের তালিকায়। ত্রিশূল না হলেও কঙ্গনার ঘাড়ে রয়েছে একটি ডানা মেলা তলোয়ার, যার মাথায় মুকুট। নারী শক্তির প্রতীক হিসেবে আপার আর্মে আঁকানো যায় দশভুজার ছবিও।

শর্ট লেংথের ড্রেস বা স্কার্ট এবং হট প্যান্টে আপনি কমফর্টেবল? তা হলে হাঁটুর ওপরে থাইয়ের মাঝ বরাবর রিং-এর মতো বেড় দিয়ে আপনার পছন্দের ট্যাটু আর্টিস্টের কাছে আঁকিয়ে নিতে পারেন এথনিক জুয়েলারির ডিজাইন। দীপিকা পাড়ুকোনের মতো অ্যাঙ্কেল ঘিরে করিয়ে রাখতে পারেন নূপুরের ডিজাইনও। স্টিলেটোর জুটি এই ডিজাইন থেকে তখন মণ্ডপের মনোযোগ অন্য দিকে সরলে হয়!

রাজদীপ বললেন, “ট্যাটু মূলত লোকে করায় ব্যক্তিত্বকে সংজ্ঞায়িত করতে। এ ছাড়া পোশাকের পরিপূরক হিসেবে এই বডি আর্ট, চরিত্রকে সম্পূর্ণ করে প্রকাশ করে।” নিজের প্রিয় জনের স্মৃতিও অনেকে এ ভাবে বয়ে বেড়াতে চান। টেম্পোরারি ট্যাটুর চল থাকলেও আর্টিস্টরা মূলত পার্মানেন্ট ট্যাটু করারই পক্ষপাতী। যেহেতু সেটা অনেক নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। তবে সারা জীবনের জন্য থেকে যায় বলে হুজুগে পড়ে ডিজাইন না বাছাই ভাল। শঙ্কর বলেন, “এ ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অনেক বেশি পরিণত। তারা অনেক ভেবেচিন্তে ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নেয়।” যদিও দীপিকার পাড়ুকোনের ঘাড়ের মাঝে রণবীর কপূরের আদ্যাক্ষর লিখে রাখা খুব বেশি চিরস্থায়ী সিদ্ধান্ত হয়নি!

কিছু ট্যাটুর সব সময়েই চাহিদা থাকে, যেমন—উদ্ধৃতি বা নাম লেখা, রাশির চিহ্ন, স্মারক চিহ্ন, থ্রি ডি ইমেজ, পশুর মুখ, পোর্ট্রেট, শিব, বুদ্ধ, ওয়ারিয়র ট্যাটু, ট্রাইবাল আর্ট, জাপানি বা সংস্কৃত অক্ষর, জানান যোগী। আলিয়া ভাট-এর ঘাড়ের নীচে যেমন হিন্দিতে লেখা ‘পটাকা’। সঈফের হাতে হিন্দিতে লেখা করিনার নাম, হিন্দিতেই রণবীর কপূর তাঁর দাদুর স্মৃতিতে লিখে রেখেছেন ‘আওয়ারা’। সঞ্জয় দত্ত যখন বুকে এঁকে রাখেন বাবার নাম, অক্ষয় কুমার আবার পিঠে লেখেন ছেলের নাম। অজয় দেবগণ আবার বুকে করিয়েছেন শিবের ট্যাটু।

আর্টিস্টের দক্ষতা, কাজের ধরন অনুযায়ী ছোট ট্যাটুর জন্য ১০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা লাগতে পারে। এক থেকে তিন ঘণ্টার মাঝারি কাজে ডিটেলিং-এ নির্ভর করে ১০০০-৫০০০ টাকা মতো খরচ। স্কোয়্যার ইঞ্চি বা সময়ের হিসেবে খরচ নির্ধারিত হয়। পিঠ বা হাত জোড়া বড় ট্যাটু বানাতে ২০-৫০ ঘণ্টাও লাগতে পারে। একাধিক সিটিং মিলিয়ে খরচ লক্ষাধিক টাকা।

মা সত্যিই যত ‘বড়’ই হন না কেন আপনি এপুচকে ট্যাটু আঁকিয়ে নিজের নতুন রূপটা প্রকাশ করতেই পারেন। অকালবোধনও তো এসে গেল বলে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tattoo puja kangana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE